১৯-إثبات علو الله على مخلوقاته
১৯- আল্লাহ তাআলা সমস্ত মাখলুকের উপর সমুন্নত:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
﴿إِذْ قَالَ اللَّهُ يَاعِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ﴾
‘‘যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মৃত্যু (নিদ্রা) দান করবো। অতঃপর তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নিবো’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ﴾ ﴿بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا ‘‘বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ প্রবল শক্তিধর ও প্রজ্ঞাবান’’। (সূরা নিসাঃ ১৫৮) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন,
﴿إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ﴾
‘‘পবিত্র বাক্যসমূহ তাঁরই দিকেই উঠে এবং সৎকর্মকে তিনি উন্নীত করেন’’। (সূরা ফাতিরঃ ১০) আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের উক্তি উল্লেখ করে বলেন,
﴿وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا هَامَانُ ابْنِ لِي صَرْحًا لَّعَلِّي أَبْلُغُ الْأَسْبَابَ أَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَأَطَّلِعَ إِلَىٰ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ كَاذِبًا ۚ وَكَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِفِرْعَوْنَ سُوءُ عَمَلِهِ وَصُدَّ عَنِ السَّبِيلِ ۚ وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ إِلَّا فِي تَبَابٍ﴾
‘‘ফেরাউন বললোঃ হে হামান! আমার জন্য একটি সুউচ্চ ইমারাত নির্মাণ করো যাতে আমি রাস্তাসমূহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি৷ অর্থাৎ আসমানের রাস্তা এবং মূসার ইলাহকে উঁকি দিয়ে দেখতে পারি৷ মূসাকে মিথ্যাবাদী বলেই আমার মনে হয়৷ এভাবে ফেরাউনের জন্য তার কুকর্মসমূহ সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সোজা পথ থেকে ফিরিয়ে রাখা হয়েছে৷ ফেরাউনের সমস্ত চক্রান্ত ধ্বংসের পথেই ব্যয়িত হয়েছে’’। (সূরা গাফেরঃ ৩৬-৩৭) আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿أَأَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمْ الأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ﴾
‘‘তোমরা কি এ থেকে নির্ভয় হয়ে গেছ যে, যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেবেন? অতঃপর ভূপৃষ্ঠ জোরে ঝাঁকুনি খেতে থাকবে, কিংবা যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করবেন, -এ ব্যাপারেও কি তোমরা নির্ভয় হয়ে গিয়েছো? তখন তোমরা জানতে পারবে আমার ভীতি প্রদর্শন কেমন? (সূরা মুলকঃ ১৬-১৭)[1]
ব্যাখ্যাঃ প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)কে সম্বোধন করে বলেছেনঃ হে ঈসা! إني متوفيك ‘‘আমি তোমাকে ওফাত দিবো’’। অধিকাংশ আলেমের মতে এখানে ওফাত বলতে নিদ্রা উদ্দেশ্য। কেননা নিদ্রা মৃত্যুর অন্যতম প্রকার। আল্লাহ তাআলা সূরা আনআমের ৬০ নং আয়াতে বলেনঃ
﴿وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُم بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُّسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
‘‘তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কিছু করো তা জানেন৷ আবার পরদিন তোমাদের সেই কর্মজগতে ফেরত পাঠান, যাতে জীবনের নির্ধারিত সময়কাল পূর্ণ হয়৷ অবশেষে তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷ তখন তিনি জানিয়ে দেবেন তোমরা কি আমল করছিলে’’। আল্লাহ তাআলা সূরা যুমারের ৪২ নং আয়াতে বলেনঃ
﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
‘‘মৃত্যুর সময় আল্লাহই রূহসমূহ কবয করেন। আর যে এখনো মরেনি নিদ্রাবস্থায় তার রূহ কবয করেন৷ অতঃপর যার মৃত্যুর ফায়সালা কার্যকরী হয় তাকে রেখে দেন এবং অন্যদের রূহ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেরত পাঠান৷ যারা চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য এর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে’’।[2]
وَرَافِعُكَ إِلَيَّ তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নিবোঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁকে আসমানে নিজের দিকে জীবিত অবস্থায় উঠিয়ে নিয়েছেন। আয়াতের এই অংশ থেকেই দলীল গ্রহণ করা হয়েছে এবং আল্লাহর জন্য علو তথা উপরে হওয়া সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা উঠিয়ে নেওয়া সাধারণতঃ উপরের দিকেই হয়।
بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেনঃ এখানে ঐসব ইহুদীদের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা দাবী করে যে, তারা ঈসা মাসীহ ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করে ফেলেছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا﴾
‘‘মূলতঃ তারা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করতে পারেনি; বরং তাদেরকে সন্দেহে ফেলা হয়েছে। নিশ্চয়ই যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল তারাই সে বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে। কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। প্রকৃতপক্ষে তারা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি। প্রকৃত কথা এই যে, আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী’’। (সূরা নিসাঃ ১৫৭-১৫৮)
بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁকে জীবিত অবস্থায় নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি নিহত হন নি। আয়াতের এই অংশই দলীল গ্রহণের স্থান। কেননা এই অংশে আল্লাহর জন্য মাখলুকের উপর হওয়া সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর উঠিয়ে নেওয়া বা উঠানো (নীচ থেকে) উপরের দিকেই হয়।
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ ‘‘পবিত্র বাক্যসমূহ তাঁর দিকেই উঠেঃ অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দিকেই পবিত্র বাক্যসমূহ উন্নীত হয়; অন্য কারো দিকে নয়। পবিত্র বাক্য বলতে আল্লাহর যিকির, কুরআন তেলাওয়াত এবং দুআ উদ্দেশ্য। সৎ আমল উহাকে উপরে উঠায়। অর্থাৎ উত্তম আমল বাক্যসমূহকে উপরে উঠায়। কেননা সৎ আমল ছাড়া পবিত্র বাক্য কবুল হয়না। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার যিকির করে, কিন্তু ফরয এবাদতগুলো সম্পাদন করেনা, তার পবিত্র বাক্যসমূহ ফেরত দেয়া হয়।
ইয়াস বিন মুআবিয়া (রঃ) বলেনঃ আমলে সালেহ না থাকলে শুধু উত্তম বাক্য আকাশে উঠেনা। হাসান বসরী ও কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ আমল ছাড়া শুধু মুখের কথা কবুল হয়না।
মোটকথা উপরের আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির উপরে। কেননা উঠা বা উঠানো নীচ থেকে উপরের দিকেই হয়।
يَا هَامَانُ ابْنِ لِي صَرْحًا হে হামান! আমার জন্য একটি সুউচ্চ ইমারাত নির্মাণ করোঃ ফেরাউন তাঁর মন্ত্রী হামানকে এই কথা বলেছিল। ফেরাউন তাকে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ করেছিল। সে বলেছিলঃ হে হামান! আমার জন্য একটি সুউচ্চ ও মজবুত প্রাসাদ নির্মাণ করো। যাতে আমি রাস্তাসমূহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি৷ অর্থাৎ আসমানের দরজাসমূহ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারি এবংفَأَطَّلِعَ إِلَىٰ إِلَٰهِ مُوسَىٰ মূসার ইলাহকে উকি দিয়ে দেখতে পারি। فاطلع ফেলে মুযারেটি فاء السببية এর পরে আসার কারণে উহ্য أن দ্বারা মানসুব হবে। এই কথার মাধ্যমে সে মুসাকে মিথ্যুক বলেছিল। অর্থাৎ ফেরাউনের কথার অর্থ হলো, মূসা যখন দাবী করলেন যে, আল্লাহ তাআলা তাকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন অথবা তিনি যখন এই দাবী করলেন যে, আকাশে তার মাবুদ রয়েছেন, তখন ফেরাউন তাঁর কথাকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল আমি মূসাকে মিথ্যাবাদী বলেই মনে করি। অর্থাৎ সে যেই রেসালাতের দাবী করছে অথবা আকাশে তার ইলাহ (মাবুদ) থাকার যেই দাবী করছে, আমি তার দাবীতে তাকে মিথ্যুক মনে করছি।
এই আয়াত থেকেও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ সৃষ্টির উপর। মুসা (আঃ) ফেরাউনকে এই সংবাদ দিয়েছিলেন যে, আল্লাহ আসমানের উপর। ফেরাউন তাঁকে এই কথায় মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছিল। এখান থেকে আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্বের নবীগণও তাদের উম্মতদেরকে বলেছিলেন যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির উপরে।
أَأَمِنتُمْ তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো? আল্লাহ তাআলা কাফেরদেরকে ধমক দিয়ে বলছেন, তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো? নিরাপত্তা হচ্ছে ভয়ের বিপরীত। من في السماء যিনি আসমানে আছেন। অর্থাৎ যিনি আসমানে আছেন, তোমরা কি তাঁর শাস্তি হতে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করছো? আসমানে যিনি আছেন, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। এখানে في السماء আসমানে আছেন অর্থ على السماء আসমানের উপরে আছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেনঃ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ فِي جُذُوعِ النَّخْلِ ‘‘আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কান্ডের মধ্যে শুলিবিদ্ধ করবো’’। এখানেও في হারফে জারটি على অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কান্ডের উপর ক্রশবিদ্ধ করবো।
উপরোক্ত আয়াতে في হারফে জারটি তখনই على (উপরে) অর্থে ব্যবহৃত হবে, যখন আসমান দ্বারা আল্লাহর নির্মিত আসমান উদ্দেশ্য হবে। আর যদি السماء দ্বারা শুধু উপর উদ্দেশ্য হয়, তাহলে في হারফে জারটি ظرفية তথা স্থান বুঝানোর জন্যই ব্যবহৃত হবে। তখন বাক্যটি এ রকম হবেঃأأمنتم من في العلو অর্থাৎ যিনি উপরে আছেন, তোমরা কি তার শাস্তির ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে গেছো? أن يخسف بكم الأرض তিনি তোমাদের মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেবেন। যেমন ধসিয়ে দিয়েছিলেন কারুনকে।فإذا هي تمور তখন যমীন হঠাৎ জোরে ঝাঁকুনি খেতে থাকবে এবং প্রকম্পিত হতে থাকবে।
أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا কিংবা যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করবেন- এ ব্যাপারেও কি তোমরা নির্ভয় হয়ে গিয়েছো? যেমন আল্লাহ তাআলা লুত (আঃ)এর জাতি এবং হস্তী বাহিনীর উপর আসমান থেকে প্রস্তর বর্ষণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেনঃ তোমাদের উপর মেঘমালা পাঠাবেন। যাতে থাকবে পাথর। আবার কেউ কেউ বলেছেনঃ বাতাস পাঠাবেন। যাতে থাকবে পাথর। তখন তোমরা জানতে পারবে আমার ভীতি প্রদর্শন কেমন? অর্থাৎ যখন তোমরা আযাব দেখতে পাবে, তখন জানতে পারবে আমার ভীতি প্রদর্শন কেমন? কিন্তু তখন এই জানা তোমাদের কোন উপকারে আসবেনা।
উপরের দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলার জন্য সৃষ্টির علو (উপরে হওয়া) সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখানে সুস্পষ্ট করেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ আসমানের উপরে। সুতরাং শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এই আয়াতগুলো আল্লাহ তাআলার জন্য উলু (উপর) সাব্যস্ত করার জন্য উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতগুলো আল্লাহর পবিত্র সত্তা উপরে হওয়ার কথা প্রমাণ করে, যেমন ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত অধ্যায়ের আয়াতগুলো সাব্যস্ত করেছে যে, আল্লাহ তাআলা আরশের উপর।
استواء (আরশের উপর সমুন্নত হওয়া) এবং علو (উপরে হওয়া)এর মধ্যে পার্থক্যঃ(১) علو তথা সৃষ্টির উপরে হওয়া আল্লাহর সত্তাগত বিশেষণ। অর্থাৎ এটি কখনো আল্লাহর সত্তা থেকে আলাদা হয়না এবং এটি তাঁর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত নয়। অপর দিকে استواء (উপরে উঠা, সমুন্নত হওয়া) আল্লাহর কর্মগত সিফাত, যা আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। সৃষ্টির উপরে হওয়া আল্লাহর স্থায়ী বিশেষণ। আর আরশের উপর আল্লাহ সমুন্নত হওয়া হচ্ছে তাঁর কর্মগত বিশেষণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যখন ইচ্ছা করেন তখন স্বীয় ইচ্ছা ও ক্ষমতার মাধ্যমে উপরে উঠেন বা আরশের উপর সমুন্নত হন। এই জন্যই আল্লাহ তাআলা সমুন্নত হওয়ার ব্যাপারে বলেছেনঃثم استوى ‘‘অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন’’। আর এই সমুন্নত হওয়া ছিল আসমান-যমীন সৃষ্টির পর। (২) সৃষ্টির উপর হওয়া এমন একটি বিশেষণ, যা মানুষের বোধশক্তি, স্বভাব-প্রকৃতি ও কুরআন-সুন্নাহর দলীল দ্বারা প্রমাণিত। আর আরশের উপর সমুন্নত হওয়ার বিষয়টি শুধু কুরআন ও হাদীছের দলীল দ্বারা প্রমাণিত; যা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও বোধশক্তি দ্বারা প্রমাণিত নয়।
[2] - সুতরাং ঈসা (আঃ)কে যে মৃত্যু দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা সেই মৃত্যু উদ্দেশ্য নয়, যাতে দেহ থেকে রূহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বরং এখানে ঘুম উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিদ্রার মাধ্যমে উপরে উঠিয়ে নিয়েছেন। কথায় বলে, ঘুমন্ত মানুষ ও মৃত মানুষ সমান। সুতরাং ঈসা (আঃ) মৃত্যু বরণ করেন নি। ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করার যেই ষড়যন্ত্র করেছিল, আল্লাহ তাআলা তাঁকে ইহুদীদের সেই ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করেছেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’তের বিশ্বাস এই যে, ঈসা (আঃ)কে আল্লাহ তাআলা জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। ইহুদীরা তাকে হত্যা করতে পারেনি। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের নবীর উম্মাত হয়ে আবার দুনিয়াতে আগমণ করবেন। দাজ্জালকে হত্যা করবেন, বিকৃত খৃষ্টান ধর্মের পতন ঘটাবেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন, আমাদের নবীর শরীয়ত দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবেন এবং ইসলামের বিলুপ্ত হওয়া আদর্শগুলো পুনর্জীবিত করবেন। পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করার পর মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা নামায পড়ে দাফন করবেন। তাঁর আগমণের পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীছে অনেক দলীল রয়েছে।