রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম

অসহায় দুর্বল এ খাদেমকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপযুক্ত স্থানে মূল্যায়ন করেন, তাকে তার দ্বীনদারী ও পরহেযগারীর ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করেন, তার কর্ম ও দুর্বলতার ভিত্তিতে নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদেম ও মজুরদের ব্যাপারে বলেন:

«هم إخوانكم، جعلهم الله تحت أيديكم، فأطعموهم مما تأكلون، وألبسوهم مما تلبسون، ولا تكلفوهم ما يغلبهم فإن كلفتموهم فأعينوهم».

তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের কর্তৃত্বাধীন করে দিয়েছেন, তোমরা যা খাবে তা তাদেরকেও খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে তা তাদেরকেও পরিধান করাবে, তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ দিবে না, আর যদি অনুরূপ দায়িত্ব দাও, তাতে তোমরাও সহযোগিতা করবে।[1]

প্রিয় পাঠক! দেখুন, এক খাদেম তার মুনিব সম্পর্কে আশ্চর্য জবান বন্দী দিচ্ছেন, এক গ্রহণ যোগ্য সাক্ষ্য প্রদান ও হৃদয় গ্রাহী প্রশংসা করছেন!!

আপনি কি কখনো কোন খাদেমকে তার মুনিবের ব্যাপারে এমন প্রশংসা করতে দেখেছেন? যেমন প্রশংসা করেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম তাঁর ব্যাপারে?

আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

«خدمت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - عشر سنين فما قال لي أف قط، وما قال لي لشيء صنعته [لم صنعته؟] ولا لشيء تركته لم تركته؟».

আমি দশ বছর যাবত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি, আমার কাজ কর্মে [বিরক্ত হয়ে ধমকের সূরে] তিনি কোন দিন উফ শব্দটি বলেননি, আর আমি কোন কাজ করলে তিনি কখনো বলেননি যে, তুমি এ কাজ কেন করেছ? আর কোন কাজ না করলে তিনি কখনো বলেননি যে, তুমি এ কাজ কেন করোনি।[2]

পুরা দশটি বছর.. কয়েক দিন বা কয়েক মাস নয়, অনেক সময় যেখানে দুঃখ বেদনা, সুখ-শান্তি, চিন্তা, রাগ, মানসিক পরিবর্তন ও অস্থিরতা থেকে শুরু করে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে তার মাঝে। যাতে সাচ্ছন্দ ও অসচ্ছলতার অনেক দিনই অতিবাহিত হয়েছে!! এত ঘটনা প্রবাহের মাঝেও তিনি তাকে কোন দিন ধমক দিয়ে কথা বললেন না, কোন প্রকার নির্দেশও তিনি দিলেন না তাকে। বরং তার স্বীয় ব্যক্তিত্বের উপর ছেড়ে দিয়েছেন তার সমগ্র কাজ কর্ম, বরং তাকে তার প্রতিদান দিতেন ও তার মনোভাবকে খুশী রাখতেন, তার ও তার পরিবারের প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করতেন এবং তাদের জন্য দোয়া করতেন।!!

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমার মা বলেন: হে আল্লাহ রাসূল! আপনার এ খাদেমের জন্য দোয়া করুন। তিনি বলেন:

«اللهم أكثر ماله وولده، وبارك له فيما أعطيته».

হে আল্লাহ তা‘আলা আপনি তাকে প্রচুর সম্পদ ও অনেক সন্তানাদি দান করুন এবং তাকে যা দিয়েছেন তাতে প্রাচুর্যতা দান করুন।[3]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বড় সাহসী বাহাদুর হওয়ার পরেও তিনি কোন দিন কাউকে অপমান করেননি ইসলামের হক ব্যতীত কাউকে মারেননি এবং তার কর্তৃত্বাধীন স্ত্রী বা চাকর কোন অপরাধ করলেও তার প্রতিশোধ নেননি!!

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

ما ضرب رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بيده شيئًا قط إلا أن يجاهد في سبيل الله ولا ضرب خادمًا ولا امرأة».

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত তাঁর হাত দিয়ে কাউকে মারেননি এমনকি তার স্ত্রী ও খাদেমকেও না।[4]

এই তো মুমিন জননী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সৃষ্টির সর্বোত্তম ও সমস্ত মানুষের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির ব্যাপারে পূনরায় সাক্ষ্য প্রদান করছেন, এমনকি তাঁর পবিত্র আদর্শ, সূনাম ও সূখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দিক-দিগন্তর, এমনকি কুরাইশ বংশের কাফেররা পর্যন্ত তার সাক্ষ্য দিয়েছে।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

«ما رأيت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - منتصرًا من مظلمة ظلمها قط ما لم ينتهك من محارم الله تعالى شيء، فإذا انتهك من محارم الله تعالى شيء، كان من أشدهم في ذلك غضبًا، وما خير بين أمرين إلا اختار أيسرهما ما لم يكن مأثمًا».

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘনের ক্ষেত্র ব্যতীত নিজের প্রতি কোন জুলুম-অবিচারের প্রতিশোধ নিতে দেখিনি। কেউ আল্লাহর বিধানের অবমাননা করে থাকলে তিনি সে ক্ষেত্রে তাদের সবার চেয়ে বেশী রাগান্বিত হতেন। আর তাকে কোন দুটি বস্তুর একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হলে গোনাহের কাজ না হলে তিনি সহজটা গ্রহণ করতেন।[5]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহনশীলতা ও দয়ার প্রতি আহ্বান করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

«إن الله رفيق يحب الرفق في الأمر كله».

আল্লাহ তা‘আলা সহনশীল এবং প্রত্যেক ব্যাপারে সহনশীলতাকে ভালবাসেন।[6]

[1] বুখারি, হাদিস: ৬০৫০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬১

[2] মুসলিম, হাদিস: ২৩০৯

[3] বুখারী, হাদিস: ৬৩৪

[4] মুসলিম, হাদিস: ২৩২৮

[5] আহমদ, হাদিস: ২৪৯৮৫

[6] বুখারী, হাদিস: ৬৯২৭; মুসলিম, হাদিস: ২৫৯৩