নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘুম

 উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:

«إذا أوى أحدكم إلى فراشه، فليأخذ داخلة إزاره -أي طرفه- فلينفض بها فراشه وليسم الله، فإنه لا يعلم ما خلفه بعده على فراشه، فإذا أراد أن يضطجع فليضطجع على شقه الأيمن، وليقل: سبحانك اللهم ربي بك وضعت جنبي وبك أرفعه إن أمسكت نفس فاغفر لها وإن أرسلتها فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين».

তোমাদের কেউ যখন বিছানায় শয়ন করতে যাবে, তখন বিসমিল্লাহ বলে সে তার কাপড়ের এক পার্শ্ব দ্বারা বিছানা ঝাড়বে। কেননা সে জানে না তার বিছানায় তার অবর্তমানে কি হয়েছে। আর যখন শয়ন করার ইচ্ছা করবে তখন যেন ডান পার্শ্ব হয়ে শয়ন করে, আর বলে:

سبحانك اللهم ربي بك وضعت جنبي وبك أرفعه فإن أمسكت نفسي فارحمها وإن أرسلتها فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين .

অর্থ: হে আল্লাহ তোমার পবিত্রতম প্রশংসা। হে প্রভু! তোমার নামে আমি আমার পার্শ্বদেশকে শয্যায় স্থাপন করছি, [আমি শয়ন করছি] আর তোমরই নাম নিয়ে আমি তাকে উঠাব [শয্যা ত্যাগ করাব] যদি তুমি [আমার নিদ্রাবস্থায়] আমার প্রাণ কবজ করো, তবে তুমি তাকে রহম করো, আর যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও [বাঁচিয়ে রাখো] তবে সে অবস্থায় তুমি তার হেফাজত করো যেমন-ভাবে তুমি তোমার সৎ বান্দাদেরকে হেফাজত করে থাকো।[1]

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিক নির্দেশনা হল: তিনি এরশাদ করেন:

« إذا أتيت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة ثم اضطجع على شقك الأيمن».


তুমি যখন বিছানায় শয়ন করতে যাবে, তখন তুমি নামাযের অজুর ন্যায় অজু করে ডান পার্শ্ব হয়ে শয়ন করবে।[2] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

«كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إذا أوى إلى فراشه كل ليلة، جمع كفيه فنفث فيهما، وقرأ فيهما: ( قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ) و ( قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ) ، و ( قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ) ثم مسح بهما ما استطاع من جسده يبدأ بهما رأسه ووجهه وما أقبل من جسده، يصنع ذلك ثلاث مرات».


প্রতি রাতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয়নের জন্য যেতেন, তখন তাঁর দুই হাতকে একত্র করে তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও নাস পড়ে তাতে ফু দিয়ে যতদূর সম্ভব তার শরীর মাসেহ করতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও সামনের অংশ দ্বারা মাসেহ শুরু করতেন এবং অনুরূপ তিনবার করতেন।[3]

আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় শয়ন করার সময় বলতেন:

الحمد لله الذي أطعمنا وسقانا وكفانا وآوانا، فكم ممن لا كافي له ولا مؤوي.


অর্থ: সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন, আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করিয়েছেন, এবং আমাদের শয়ন করার তাওফিক দিয়েছেন, অথচ এমন বহু লোক আছে, যাদের প্রয়োজন পূর্ণকারী নেই, যাদের আশ্রয় দানকারী কেউ নেই।[4]

আবু কাতাদাহ বলেন:

إن النبي - صلى الله عليه وسلم - كان إذا عرس بليل اضطجع على شقه الأيمن، وإذا عرس قبيل الصبح نصب ذراعه ووضع رأسه على كفه».


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের সময় রাতের শেষের দিকে কোথাও অবতরণ করে শয়ন করলে, ডান পার্শ্ব হয়ে শয়ন করতেন আর ফজরের কিছুক্ষণ পূর্বে শয়ন করলে হাত খাড়া করে তার উপর মাথা রেখে শুইতেন।[5]

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কত প্রচুর নেয়ামত দান করেছেন..।

প্রিয় পাঠক! সৃষ্টির সেরা, সমস্ত নবীদের সরদার জমিনের বুকে যত মানুষের পদচারণ হয়েছে তার শ্রেষ্ঠতম শেষ নবীর বিছানা সম্পর্কে চিন্তা করুন!

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

«إنما كان فراش رسول الله - صلى الله عليه وسلم - الذي ينام عليه من أدم حشوه ليف».


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিছানায় ঘুমাতেন তা ছিল চামড়ার ও তার ভিতরের জিনিস ছিল খেজুর গাছের ছাল।[6]

একদা সাহাবীদের এক দল ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমতাবস্থায় ঘুরে বসলেন, তাতে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পার্শ্বদেশ ও মাদুর বা চাটাইয়ের মাঝে কোন কাপড় দেখতে পাননি যার ফলে তাঁর পার্শ্বদেশে মাদুরের দাগ বসে গেছে তা দেখে ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে ফেললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ওমার কেন কাঁদছ? তিনি উত্তরে বলেন: আমরা জানি আপনি রোম ও পারস্যের রাজার চেয়ে আল্লাহর নিকট অনেক সম্মানী। তারা এ ধরাতে কত প্রকার সুখ আর আনন্দ ফুর্তি করে যাচ্ছে আর আপনাকে আমরা এ অবস্থায় দেখছি! একথা শুনে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন: “হে ওমার তুমি কি চাও না যে তাদের জন্য দুনিয়ায় হোক আর আমাদের জন্য হোক আখিরাতে? ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: হাঁ। তিনি বলেন: তবে এরূপই হবে।[7]

[1] মুসলিম, হাদিস: ২৭১৪

[2] বুখারী, হাদিস: ২৪৭ মুসলিম, হাদিস: ২৭১০

[3] আহমদ, হাদিস: ২৪৮৫৩

[4] মুসলিম, হাদিস: ২৭১৫ আহমদ, হাদিস: ১২৫৫২

[5] মুসলিম, হাদিস: ৬৮৩

[6] মুসলিম, হাদিস: ২০৮২

[7] আহমাদ, হাদিস: