নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মত, সৈন্যবাহিনী, সৈন্য পরিচালনা ও পরিবারের চিন্তায় রত। আবার কখনো ওহী, ইবাদাত ও অন্যান্য চিন্তা রয়েছেই। সাধারণত বড় বড় ব্যস্ততার মাঝে মানুষ জীবনের চাওয়া পাওয়া ও আত্মিক প্রশান্তির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ভুলে যায়। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক হকদারের হক সঠিক ভাবে আদায় করেছেন, কারো অধিকারে তিনি কসুর করেননি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এত কাজ ও দায়িত্ব থাকা স্বত্ত্বেও তার হৃদয়ে বাচ্চাদেরও স্থান ছিল অম্লান। তিনি বাচ্চাদের সাথে রসিকতা করে তাদের অন্তরে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়ে তাদের মনকে জয় করে নিতেন। যেমন তিনি অনেক সময় বড়দের সাথেও রসিকতা করতেন।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
قالوا يا رسول الله: إنك تداعبنا، قال: «نعم. غير أني لا أقول إلا حقًا».
ومن مزاحه - صلى الله عليه وسلم - ما رواه أنس بن مالك قال: «إن النبي - صلى الله عليه وسلم - قال له: يا ذا الأذنين».
তিনি বলেন: সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও কি আমাদের সাথে রসিকতা করেন? তিনি উত্তরে বলেন: হাঁ, তবে আমি শুধু সত্য দ্বারাই রসিকতা করে থাকি।[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রসিকতার একটি হল: এ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যা আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ বলে সম্বোধন করতেন: «يا أبا عمير، ما فعل النغير؟» হে দুই কান ওয়ালা।[2]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: উম্মে সুলাইমের এক ছেলেকে আবু ওমাইর বলে ডাকা হতো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলে অনেক সময় রসিকতা করতেন। একদা রসিকতা করার জন্য তাদের বাড়ীতে প্রবেশ করে দেখলেন যে, সে চিন্তিত, তিনি বললেন, কি হয়েছে আবু ওমাইরকে চিন্তা মগ্ন দেখছি? উপস্থিত ব্যক্তিরা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তার নুগাইর নামে পাখীটি মরে গেছে, যাকে নিয়ে সে খেলত। এরপর থেকেই তিনি তাকে বলতেন: হে আবু ওমাইর তোমার নুগাইর পাখীর কি খবর?[3]
বড়দের সাথেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রসিকতা করার ঘটনা রয়েছে, তন্মধ্য আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
إن رجلاً من أهل البادية كان اسمه زاهر بن حرام، قال: وكان النبي - صلى الله عليه وسلم - يحبه وكان دميمًا، فأتاه النبي - صلى الله عليه وسلم - يومًا يبيع متاعه، فاحتضنه من خلفه وهو لا يبصر: فقال: أرسلني، من هذا؟ فالتفت فعرف النبي - صلى الله عليه وسلم - فجعل لا يألو ما ألزق ظهره بصدر النبي - صلى الله عليه وسلم - حين عرفه، وجعل النبي - صلى الله عليه وسلم - يقول: «من يشتري العبد» فقال: يا رسول الله إذا والله تجدني كاسدًا، فقال النبي: «لكن عند الله أنت غال».
গ্রাম্য এক ব্যক্তি ছিল, যার নাম ছিল যাহের বিন হারাম। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে খুব ভালবাসতেন। তার গায়ের রং ছিল কালো বর্ণের। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকটে গেলেন সে তখন তার মালামাল বিক্রির কাজে ব্যস্ত ছিল। অত:পর তিনি তার অজান্তে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। সে তখন বলতে লাগল: কে তুমি? আমাকে ছেড়ে দাও। পিছনের দিকে ফিরে জানতে পারল যে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চেনার পর তার পিঠকে রাসুলের সিনার সাথে ঘসতে কোন প্রকার কসুর করেনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন: এ দাসকে কে ক্রয় করবে? সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে এত সস্তা মনে করলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: না, তুমি আল্লাহর নিকট অনেক মূল্যবান।[4]
তিনি ছিলেন উত্তম চরিত্র, মহান বৈশিষ্ট্য ও ভদ্র ব্যবহারের অধিকারী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবার ও সাহাবীদের সাথে এমন উদার ও খোলা মেজাজের হওয়া সত্ত্বেও তার হাসির একটা সীমা ছিল। তিনি অট্ট হাসি হাসতেন না, বরং তিনি মুচকি হাসি দিতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«ما رأيت رسول الله مستجمعًا قط ضاحكًا حتى ترى منه لهواته، وإنما كان يَتَبَسَّمُ ».
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো অট্টহাসি দিতে দেখিনি যার ফলে মুখের ভিতরের তালু প্রকাশ পায়, বরং তিনি মুচকি হাসি দিতেন।[5]
রাসূলের এরকম হাস্যোজ্জল চেহারা ও সুন্দর আচরণ হওয়া স্বত্ত্বেও তার সামনে কেউ আল্লাহর শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ করলে তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেত।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
قدم رسول الله - صلى الله عليه وسلم - من سفر، وقد سترت سهوة لي بقرام فيه تماثيل، فلما رآه رسول الله - صلى الله عليه وسلم - هتكه وتلون وجهه وقال: «يا عائشة: أشد الناس عذابًا عند الله يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله».
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সফর থেকে ফিরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরে ছবি যুক্ত কাপড় দ্বারা পর্দা লটকিয়ে ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাঁর মুখ মণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং তা নষ্ট করে বলেন: হে আয়েশা! যারা কোন জীবের ছবি আঁকাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাদের কঠিন আযাব হবে।[6] এ হাদিস এটাই প্রমাণ করে যে, ঘর-বাড়ীতে ছবি রাখা হারাম যদি তা দেখা যায়। আর তার চেয়ে ভয়াবহ হল: যদি তা দেয়ালের সাথে লটকানো হয় অথবা ঘর-বাড়ীর কোণ, আলমারি ও শোকেসে যদি মূর্তি বা পুতুল রাখা হয়। এতে গোনাহ তো রয়েছেই তা সত্ত্বেও রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে এ বাড়ীর অধিবাসীরা।
[2] আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৬৯
[3] বুখারী ও মুসলিম
[4] আহমাদ, হাদিস: ১২৬৪৮
[5] বুখারী, হাদিস: ৬০৯২; মুসলিম, হাদিস: ৮৯৯
[6] বুখারী, হাদিস: ৫৯৫৪; মুসলিম: ২১০৭