রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য

মানুষের অঙ্গ ভঙ্গি চাল-চলন ও আচার আচরণ হল তার জ্ঞানের লক্ষণ ও তার মন-মানসিকতা বুঝার চাবি কাঠি।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কন্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সর্বাপেক্ষা বেশী জানতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে, আর তিনিই নিখুঁত রূপে বর্ণনা দিতে পারবেন তাঁর অবস্থা সম্পর্কে। কেননা তিনি তাঁর ঘুমের অবস্থায়, জাগ্রতাবস্থায়, রোগে ও সুস্থতায়, রাগে ও সন্তুষ্ট অবস্থায় ছিলেন তাঁর নিকটতম।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

«لم يكن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فاحشًا ولا متفحشًا، ولا صخابًا في الأسواق ولا يجزي بالسيئة السيئة ولكن يعفو ويصفح».

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো অশ্লীল বা অশ্লীলতা লালন-কারী ব্যক্তি ছিলেন না। হাট-বাজারে কখনো হৈচৈ করতেন না। আর মন্দের প্রতিদান মন্দ দ্বারা দিতেন না বরং তিনি ক্ষমা করে দিতেন।[1]

এ হল এই উম্মতের করুণা, হিদায়াত ও সততার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র, আমাদের জন্য তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর নাতী হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

سألت أبي عن سير النبي - صلى الله عليه وسلم - في جلسائه، فقال: «كان النبي - صلى الله عليه وسلم - دائم البشر، سهل الخلق، لين الجانب، ليس بفظ غليظ ولا صخاب، ولا عياب، ولا مشاح، يتغافل عما لا يشتهي، ولا يؤيس منه راجيه، ولا يخيب فيه، قد ترك نفسه من ثلاث: الرياء، والإكثار، وما لا يعنيه، وترك الناس من ثلاث: كان لا يذم أحدًا ولا يعيبه، ولا يطلب عورته، ولا يتكلم إلا فيما رجا ثوابه، وإذا تكلم أطرق جلساؤه، كأنما على رءوسهم الطير، فإذا سكت تكلموا، لا يتنازعون عنده الحديث، من تكلم عنده أنصتوا له حتى يفرغ حديثهم عنده حديث أولهم، يضحك مما يضحكون منه، ويتعجب مما يتعجبون منه، ويصبر للغريب على الجفوة في منطقه ومسألته حتى إن كان أصحابه ليستجلبونهم، ويقول: «إذا رأيتم طالب حاجة يطلبها فأرفدوه»، ولا يقبل الثناء إلا من مكافئ، ولا يقطع على أحد حديثه حتى يجوز فيقطعه بنهي أو قيام».

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের সাথে আচরণ সম্পর্কে আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম: উত্তরে তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাস্যোজ্জল চেহারাসম্পন্ন, অমায়িক চরিত্রের অধিকারী ও বিনয়ী ছিলেন। কঠোর ছিলেন না, হৈচৈ-কারী ছিলেন না, ছিদ্রান্বেষী ও কৃপণ ছিলেন না, তাঁর নিকট আগত ব্যক্তি নিরাশ ও হতাশ হত না। তিনি নিজের মধ্য হতে তিনটি জিনিস পরিত্যাগ করেছিলেন: [১] রিয়া বা আত্মপ্রকাশ [২] অতিরঞ্জন এবং [৩] অনর্থক কার্যকলাপ। মানুষের জন্য তিনি তিনটি জিনিসকে পরিত্যাগ করেন: [১] তিনি কাউকে নিন্দা করতেন না [২] কাউকে দোষারোপও করতেন না [৩] সওয়াবের প্রত্যাশা ব্যতীত কোন কথাই বলতেন না। যখন তিনি কথা বলতেন, শ্রবণকারীরা এমনভাবে কান পেতে শুনত যেন তাদের মাথায় পাখী বসে আছে। অত:পর যখন তিনি কথা শেষ করতেন তখন তারা কথা বলত। তারা তাঁর সামনে কখনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি করত না। তাঁর নিকট কেউ কথা বলা আরম্ভ করলে তারা তার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকত। তাঁর উপস্থিতিতে তাদেরই কথা বলার অধিকার থাকত যারা প্রথম কথা বলা শুরু করত। লোকেরা যাতে হাসে তিনিও তাতে হাসতেন, মানুষ যাতে আশ্চর্য হয় তিনিও তাতে আশ্চর্য হতেন এবং তিনি বলতেন: “যখন তোমরা কোন অভাবীকে তার প্রয়োজনীয় কিছু প্রার্থনা করতে দেখ তার প্রার্থনায় তাকে সাহায্য করো।” তিনি মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা পছন্দ করতেন না, কারো কথা বলার সময় তার কথার মাঝে বাধা দিতেন না, হাঁ, তবে সীমা অতিক্রম করলে তাকে হয়ত আদেশ বা নিষেধ করতেন।[2]

মুসলিম জাতির নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শগুলিকে অনুধাবন করুন! আর আপনি সেগুলিকে আঁকড়ে ধরুন এবং তা বাস্তবায়ন করায় সচেষ্ট হোন কেননা তা সর্ব প্রকার মঙ্গলের সমাহার।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ছিল যে, তিনি সাহাবীদেরকে দ্বীনের বিধান শিক্ষা দিতেন। যেমন তিনি বলেন:

«من مات وهو يدعو من دون الله ندًا دخل النار».

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে মৃত্যু বরণ করল সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”।[3]

তিনি আরও বলেন:

: «المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده، والمهاجر من هجر ما نهى الله عنه».

“প্রকৃত মুসলিম তো সে ব্যক্তি যার হাত ও কথার অনিষ্ট হতে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে, আর প্রকৃত মুহাজির তো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নিষেধ কৃত বস্তুকে ছেড়ে দিয়েছে”।[4]

তিনি আরও বলেন:

«بشروا المشائين في الظلم إلى المساجد بالنور التام يوم القيامة».

“অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীদেরকে কিয়ামত দিবসে পূর্ণ আলোর সুসংবাদ দান কর।[5]

তিনি আরও বলেন:

«جاهدوا المشركين بأموالكم وأنفسكم وألسنتكم».

“তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে স্বীয় জান, মাল ও কথার দ্বারা যুদ্ধ কর”। [আবু দাউদ]

তিনি আরও বলেন:

« إن العبد ليتكلم بالكلمة ما يتبين فيها يزل بها إلى النار أبعد مما بين المشرق والمغرب».

বান্দা এমনও কথা বলে, যার মাধ্যমে সে এমন কিছু প্রকাশ করে যে, তার ফলে সে জাহান্নামের এত দূরে ছিটকে পড়ে যা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বেরও অধিক”।[6]

তিনি আরও বলেন:

«إني لم أبعث لعانًا، وإنما بعثت رحمة».

“আমি অভিশম্পাতকারী রূপে প্রেরিত হইনি বরং আমি দয়া স্বরূপ প্রেরিত হয়েছি”।[7]

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم».

‍নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: তোমরা আমাকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করো না যেমন খৃষ্টানরা মরিয়ম পুত্র ঈসাকে করেছে।[8]

জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

سمعت النبي - صلى الله عليه وسلم - قبل أن يموت بخمس وهو يقول: «إني أبرأ إلى الله أن يكون لي منكم خليل فإن الله قد اتخذني خليلاً كما اتخذ إبراهيم خليلاً ولو كنت متخذًا من أمتي خليلاً لاتخذت أبا بكر خليلاً، ألا وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم مساجد، ألا فلا تتخذوا القبور مساجد فإني أنهاكم عن ذلك».

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আমি আল্লাহর নিকট কামনা করি যে, আমার তোমাদের মধ্য হতে একজন খলিল-বন্ধু হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে খলিল বানিয়েছেন, যেমন ভাবে তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে খলিল বানিয়েছিলেন, আর আমি যদি কাউকে খলিল বানাতাম তবে আবু বকরকে আমার খলিল বানাতাম। ওহে আমার উম্মত! তোমাদের পূর্বের উম্মত তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিল, সাবধান হে আমার উম্মত! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করো না, আমি এ কাজ হতে তোমাদেরকে নিষেধ করছি।[9] এ হাদিসের ভিত্তিতে এটাই প্রতীয়মান হল: যে মসজিদে কবর রয়েছে সে মসজিদে সালাত বৈধ হবে না।

>
[1] আহমাদ, হাদিস: ২৫৪১৭

[2] তিরমিযী

[3] বুখারী, হাদিস: ৪৪৯৭

[4] বুখারী, হাদিস: ১০; মুসলিম, হাদিস: ৪২

[5] তিরমিযী, হাদিস: ২২৩; ইবনু মাযাহ, হাদিস: ৭৮১

[6] বুখারী, হাদিস: ৬৪৭৭; মুসলিম, হাদিস: ২৯৮৮

[7] মুসলিম, হাদিস: ২৫৯৯

[8] বুখারী, হাদিস: ৩৪৪৫

[9] মুসলিম, হাদিস: ৫৩২