আসুন আমরা চৌদ্দ-শত বছর পূর্বে একবার ফিরে যাই ও ইতিহাসের পাতা উল্টাই, তা পড়ে প্রতিটি পৃষ্ঠার লাইনগুলির বাস্তবতা অনুধাবন করি এবং প্রতি পৃষ্ঠায় ও লাইনে চিন্তা ফিকির করি। আর আমরা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশ করি। সরাসরি পর্যবেক্ষণ করি তাঁর অবস্থা ও ঘটনাবলি এবং শ্রবণ করি তাঁর বাণী। নবীর ঘরে শুধু একদিন অবস্থান করি। একদিনই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সেখান থেকে আমরা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করি এবং তাঁর কথা ও কর্ম দ্বারা নিজের জীবন উজ্জ্বল করি।
মানুষের শিক্ষা- দীক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে এবং তাদের পাঠ অভ্যাসও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং তারা কিতাব, পত্র-পত্রিকা, ফিল্ম ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যে তড়িৎ জিয়ারত করে থাকে। অথচ তাদের সে যিয়ারতের চেয়ে শরীয়ত সম্মত আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে যিয়ারত অগ্রাধিকার প্রাপ্ত, সেখানে আমরা যা দেখব ও যা জানব তার প্রতিটি ঘটনার শিক্ষাকে স্বীয় জীবনে বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো। আমরা এ অল্প পরিসরে তাঁর ঘরের বিশেষ বিশেষ অবস্থারই অবতারণা করব। যেগুলি আমাদের অন্তরে লালন ও আমাদের ঘরে বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য।
হেমুসলিম ভাই!
বিগত ১৪টি শতাব্দীর ইতিহাসে যে সব ঘটনা ঘটেছে ও পূর্ববর্তী জাতিসমূহ কিভাবে অতিবাহিত হয়েছে তা জেনে ও শুনেই শুধুমাত্র মজা পাব এবং তারপর থেমে যাব, এমনটি আমরা করব না।বরং আমরা রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সীরাত পাঠ করে ও তার সুন্নাতকে জীবনে বাস্তবায়ন করে ও তার আদর্শ ও পন্থানুযায়ী চলে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত ও নির্দেশ পালন করব। তিনি তাঁর রাসূলের ভালবাসাকে আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসার প্রধান প্রধান আলামত হল:তাঁর নির্দেশের অনুসরণ ও তাঁর বারণকৃত ও সাবধান কৃত বিষয় হতে বিরত থাকা, ও তার আনিত বিষয়গুলিকে বিশ্বাস করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ওয়াজিব। তাঁর নির্দেশকে বাস্তবায়ন এবং তাঁকে অনুকরণীয় আদর্শ ও ইমাম ঘোষণা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
অর্থাৎ: বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিবেন, আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু[1]।আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب : ٢١]
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ[2]।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের অনুসরণ করার ব্যাপারে মহা গ্রন্থ আল-কুরআনে চল্লিশের অধিকবার উল্লেখ করেছেন।[3]
তাঁর রাসূলের অনুসরণ ছাড়া কোন বান্দার সুখ-শান্তি ও আখিরাতে নাজাতের কোন পথ নেই। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন:
﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤ ﴾ [النساء : ١٣،١٤]
অর্থাৎ: আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং তা মহা সাফল্য। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন, সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।[4]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর ভালবাসাকে ঈমানের প্রকৃত সাধ অর্জনের কারণ বলে উল্লেখ করে বলেন:
ثلاث من كن فيه وجد حلاوة الإيمان: أن يكون الله ورسوله أحب إليه مما سواهما... متفق عليه.
অর্থাৎ যার ভিতর তিনটি গুণ রয়েছে সে ঈমানের প্রকৃত সাধ পেয়েছে; যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সব চেয়ে প্রিয়।[5]
এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
فوالذي نفسي بيده لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده ]متفق عليه[ . .
অর্থাৎ ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ পূর্ণ ঈমানদার ততক্ষণ পর্যন্ত হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার পিতা-মাতা ও সন্তানাদি হতে অধিক প্রিয় না হবো।[6]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছিল পবিত্র ও মন মুগ্ধকর সীরাত, অতএব তা হতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করবো ও তার দেখানো পথেই চলবো।
[2] আল-আহযাব, আয়াত: ২১
[3] দেখুন: ইবনে তাইমিয়া রাহেমাহুল্লাহ এর মাজমুউল ফাতাওয়া ১/৪
[4] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩ ,১৪
[5] বুখারী, হাদিস: ১৬, ২১, মুসলিম, হাদিস: ৬৭, ৬৮
[6] বুখারী, হাদিস: ১৪ ও মুসলিম