عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ... حَتَّى آتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ عَلَى قَفَاهُ وَرَجُلٌ قَائِمٌ عَلَى رَأسِهِ بِفِهْرٍ أوْ صَخْرَةٍ يُشْدَخُ بِهِ رَأْسُهُ فَإِذَا ضَرَبَهُ تَدَهْدَهَ الْحَجَرُ فَانْطَلَقَ إِلَيْهِ لِيَأخُذَهُ فَلاَ يَرْجِعُ إلَى هَذَا حَتَّى يَلْتَئِمَ رَأْسُهُ وَ عَادَ رَأسُهُ كَمَا كَانَ فَعَادَ إلَيْهِ فَضَرَبَهُ ... وَالَّذِيْ رَأيْتَهُ يُسْدَخُ رَأسُهُ فَرَجُلٌ عَلَّمَهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَنَامَ عَنْهُ بِاللَّيْلِ وَلَمْ يَعْمَلْ بِمَا فِيْهِ بِالنَّهَارِ يُفْعَلُ بِهِ مَا رَأيْتَ إلَى يَوْمِ القِيَامَةِ.
সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, দু’জন ফেরেশতা আমার হাত ধরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি রাস্তায় কতগুলি আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখলাম। তন্মধ্যে একটি দৃশ্য দেখলাম যে, একজন আলিমের মাথা পাথর দিয়ে মেরে ভেঙ্গে চৌচির করা হচ্ছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, অতঃপর আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকটে আসলাম, যে ব্যক্তি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে এবং একজন ব্যক্তি বড় পাথর হাতে নিয়ে তার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যখন পাথরটি তার মাথায় মারছে তখন তার মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি ছিটকে দূরে চলে যাচ্ছে। লোকটি পাথরটি নিয়ে আসার জন্য সে দিকে যাচ্ছে। পাথর নিয়ে আসার পূর্বেই তার চূর্ণবিচূর্ণ মাথা ঠিক হয়ে যাচ্ছে এবং যেমন ছিল তেমন হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় সে ফিরে আসছে এবং তার মাথায় মারছে। ... পরবর্তীতে ফেরেশতা দু’জন রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন, ঐ যে আপনি দেখলেন, এক ব্যক্তির মাথাকে ভেঙ্গে চৌচির করা হচ্ছে সে ব্যক্তি আলিম। আল্লাহ তাকে বিদ্যা দান করেছিলেন কিন্তু সে রাতে ঘুমিয়ে থাকত বিদ্যা চর্চা করত না এবং দিনে বিদ্যা অনুযায়ী আমল করত না। আপনি যেমন দেখলেন, এরূপ তার শাস্তি হ’তেথাকবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৬২১; বঙ্গানুবাদ ৮ম খন্ড, হা/৪৪১৫ ‘স্বপ্ন’ অধ্যায়)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ যাদেরকে ইলম দান করেছেন, তাদেরকে রাতে বিদ্যা চর্চা করতে হবে এবং দিনে বিদ্যা অনুযায়ী আমল করতে হবে। অর্থাৎ অপরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে হবে এবং দাওয়াত অনুযায়ী নিজেকে আমল করতে হবে। যেসব আলেম বা বক্তা ইলম অনুযায়ী আমল করে না ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের মাথাকে পাথর দ্বারা ভেঙ্গে চৌচির করা হবে।
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَّارٍ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যাকে তার অবগত বিদ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞস করা হ’ল কিন্তু সে তা গোপন করল, ক্বিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/২২৩ সনদ ছহীহ, বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/২১৪)।
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ لاَ يَتَعَلَّمُهُ إلاَّ لِيُصِيْبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করবে (সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করবে, সে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের গন্ধও লাভ করতে পারবে না’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/২২৭ সনদ হাসান, বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/২১৩)।
عَنْ كَعبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أوْ يُصَرِّفَ بِهِ وُجُوْهَ النَّاسِ إلَيْهِ أدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ.
কা‘ব ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আলেমদের সাথে বিতর্কে জয়লাভের জন্য কিংবা অজ্ঞ-মূর্খদের সাথে বাক-বিতন্ডা করার অথবা সাধারণ মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিদ্যা শিক্ষা করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৫ হাদীছ ছহীহ)।
এখানে আলেমদের জাহান্নামে যাওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ
(১) যারা অন্য আলেমের সাথে বিতর্ক করে জয়লাভ করার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করে। অর্থাৎ যারা হক্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিতর্ক করে না বরং প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বাহাছ-মুনাযারা করে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(২) মূর্খদের সাথে বাক-বিতন্ডা করার জন্য যারা ইলম অর্জন করে তারা জাহান্নামে যাবে। কেননা এ বিদ্যা অর্জনের পিছনে অশুভ উদ্দেশ্য থকে।
(৩) সে সকল বক্তা বা দাঈ, যারা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বক্তব্য প্রদান করে থাকে। তারা সাধারণ মানুষের মাঝে সুখ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে সার্বিক চেষ্টা ও পরিকল্পনা করে থাকে। তাদের ঠিকানা জাহান্নামে।
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أفْتَى بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ إثْمُهُ عَلَى مَنْ أفْتَاهُ وَمَنْ أشَارَ عَلَى أخِيْهِ بِأمْرٍ يَعْلَمُ أنَّ الرُّشْدَ فِيْ غَيْرِهِ فَقَدْ خَانَهُ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তিকে যদি বিদ্যা বিহীন অবস্থায় ফৎওয়া প্রদান করে, তাহ’লেঐ ফৎওয়া অনুযায়ী যত লোক আমল করবে সমস্ত আমলের পাপ ফৎওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে এমন কাজের ইংগিত করে যে, সে জানে কল্যাণ এটি ব্যতীত অন্যটিতে রয়েছে, তবে সে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/২৪২ সনদ হাসান, বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/২২৫ ‘ইলম’ অধ্যায়)।
আলোচ্য হাদীছে দু’টি বড় পাপের কথা বর্ণিত হয়েছে। (১) যারা শারঈ বিষয়ে তদন্ত না করে দাওয়াত প্রদান করে অথবা কোন ফৎওয়া প্রদান করে ঐ দাওয়াত বা ফৎওয়ার উপর যত লোক আমল করবে এবং এতে যত পাপ হবে সমস্ত পাপ ঐ বক্তা অথবা মুফতীর উপর বর্তাবে। (২) কোন লোক পরামর্শ চাইলে যাতে মঙ্গল নিহিত আছে সে পরামর্শই তাকে দিতে হবে। জেনে শুনে কোন মন্দ পরামর্শ দিলে তা বিশ্বাসঘাতকতা বা খেয়ানত বলে গণ্য হবে।