عَنْ اَبِىْ مُوْسَى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِى الْجَنَّةِ لَخِيْمَةٌ مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مَجُوْفَةٍ عَرْضُهَا سِتُّوْنَ مَيْلًا وَفِى رِوَايَةٍ طُوْلُهَا سِتُّوْنَ مَيْلًا فِىْ كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا اَهْلٌ مَايَرَوْنَ الْاَخَرِيْنَ يَطُوْفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤْمِنُ وَجَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ اَاَنِيَتُهُمَا وَمَا فِيْهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ اَنِيَتُهُمَا وَمَا فِيْهِمَا.
আবু মূসা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে মুমিনদের জন্য মুক্তা দ্বারা তৈরী একটি তাঁবু থাকবে, যার মধ্যস্থল হবে ফাঁকা। তার প্রশস্ততা ষাট মাইল। অন্য বর্ণনায় আছে তার দৈর্ঘ্যতা ষাট মাইল। তার প্রত্যেক কোণে জান্নাতীরা থাকবে। এক কোণের লোক অপর কোণের লোককে দেখতে পাবে না। ঈমানদারগণ তাদের নিকট যাতায়াত করবে। দু’টি জান্নাত হবে রূপার। তার ভিতরের পাত্র ও অন্যান্য সব কিছু হবে রূপার এবং অপর দু’টি জান্নাত হবে সোনার। তার পানপাত্র ও ভিতরে সব কিছু হবে সোনার (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৫)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ يَسِيْرُ الرَّاكِبُ فِىْ ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَايَقْطَعُهَا وَلَقَابُ قَوْسِ اَحَدِكُمْ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهُ الشَّمْسُ اَوْ تَغْرِبُ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি বড় গাছ আছে, যদি কোন সওয়ারী তার ছায়ায় একশত বছর ভ্রমণ করে তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। জান্নাতে তোমাদের কারো একটি ধনুকের সমপরিমাণ জায়গাটাও সূর্য যার উপর উঠে ও ডুবে তার চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৪)। হাদীছে বুঝা গেল জান্নাতের ধনুকের সমপরিমাণ জায়গা গোটা পৃথিবীর চেয়ে উত্তম।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْجَنَّةِ مِائَةُ دَرَجَةٍ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ وَالْفِرْدَوْسُ اَعْلَاهَا دَرَجَةً مِنْهَا تَفَجَّرُ اَنْهَارُ الْجَنَّةِ الْاَرْبَعَةُ وَمِنْ فَوْقِهَا يَكُوْنُ الْعَرْشُ فَاذَا سَأَلَتُمُ اللهَ فاسْئَلُوْهَا الْفِرْدَوْسَ.
ওবাদা ইবনে ছমেত (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতের স্তর হবে একশতটি। প্রত্যেক দু’স্তরের মাঝখানের ব্যবধান হবে আসমান ও জমিনের দূরত্বের সমান। জান্নাতুল ফেরদাউসের স্তর হবে সবচেয়ে উপরে। সেখান থেকে প্রবাহিত রয়েছে চারটি ঝরণাধারা এবং তার উপর আল্লাহর আরশ। সুতরাং তোমরা যখনই আল্লাহর কাছে চাইবে তখন ফেরদাউস চাইবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৬)। অত্র হাদীছে যে চারটি ঝরণার কথা রয়েছে তা পানি, মধু, দুধ ও শরবের ঝরণা হ’তে পারে।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَسُوْقًا يَأْتُوْنَهَا كُلَّ جُمْعَةٍ تَهُبُّ رِيْحُ الشِّمَالِ فَتَحَثُّوْا فِىْ وُجُوْهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ فَيَزْدَادُوْنَ حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَرْجِعُوْنَ اِلَى اَهْلِيْهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوْا حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَقُوْلُ لَهُمْ اَهْلُوْهُمْ وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدَتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে একটি বাজার আছে। প্রত্যেক জুম‘আর দিন জান্নাতীরা সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হবে এবং সে বাতাস তাদের মুখে ও পোশাকে সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে। ফলে তাদের রূপ আরও বেশি হয়ে যাবে। অতঃপর তারা যখন বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজের স্ত্রীদের কাছে যাবে তখন স্ত্রীগণ তাদেরকে বলবে, আল্লাহর কসম! আপনারা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছেন। এর উত্তরে তারা বলবে আল্লাহর কসম! আমাদের অবর্তমানে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে (মুসলিম,বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৭)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে বাজার থাকবে জান্নাতীরা জুম’আর দিন বাজারে যাবে। বাজারে কোন ক্রয়-বিক্রয় হবে না। সেখানে গেলে জান্নাতীদের রূপ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় তাদের স্ত্রীগণ যারা বাড়ীতে আছে তাদেরও রূপ বেশি হয়ে যাবে।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلْوَنَ الْجَنَّةَ صُوْرَةَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ثُمَّ الّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ كَاَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّىٍّ فِى السَّمَاءِ اِضَاءَةً قُلُوْبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ لَااِخْتِلَافَ بَيْنَهُمْ وَلَاتَبَاغُضَ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ يُرَى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَّرَاءِ الْعَظْمِ واللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ يُسَبِّحُوْنَ اللهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا لَايَسْقُمُوْنَ وَلَايَبُوْلُوْنَ وَلَايَتَغَوَّطُوْنَ وَلَايَتْفُلُوْنَ وَلَا يَمْتَخِطُوْنَ اَنِيَتُهُمُ الذَّهَبُ وَالْفِضَّةُ وَاَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ وَوَقُوْدُ مَجَامِرِهِمُ الْاُلُوَّةُ وَرَشْحُهُمْ الْمِسْكُ عَلَى خُلُقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ عَلَى صُوْرَةِ اَبِيْهِمْ اَدَمَ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا فِى السَّمَاءِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা ১৫ দিনে চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল ও সুন্দর রূপ ধারণ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা হবে আকাশের তারকার ন্যায় ঝকঝকে। জান্নাতীদের সকলের অন্তর এক ব্যক্তির অন্তরের ন্যায় হবে। তাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ থাকবে না এবং হিংসা বিদ্বেষও থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ হুরদের মধ্য থেকে দু’জন দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। বেশি সুন্দরী হওয়ার দরুন তাদের হাড় ও মাংসের উপর হ’তে নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায় রত থাকবে। তারা কখনও অসুস্থ হবে না। তাদের পেশাব হবে না। তাদের পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের নাক দিয়ে শ্লেষ্যা বের হবে না। তাদের ব্যবহারিক পাত্র সমূহ হবে সোনা-রূপার। তাদের চিরনী হবে স্বর্ণের এবং তাদের সুগন্ধির জ্বালানী হবে আগরের। তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তরীর মত সুগন্ধি। তাদের স্বভাব হবে এক ব্যক্তির ন্যায়। শারীরিক গঠন হবে তাদের পিতা আদম (আঃ)-এর মত, উচ্চতায় ষাট গজ লম্বা হবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৮)।
অত্র হাদীছে বুঝা গেল, যারা সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হবে। মানুষের মধ্যে কোন মতবিরোধ কোন হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। অন্যের তুলনায় বিশেষ মর্যাদাসম্পূর্ণ দু’জন স্ত্রী থাকবে। তারা খুব বেশি সুন্দরী হবে। এ জন্য তাদের পায়ের নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তাদের মুখে থুথু আসবে না, তাদের নাকে শিকনি আসবে না। সেই জান্নাতের পাত্রসমূহ হবে সোনা-রূপার। সুগন্ধি জ্বালানী হবে এক ধরনের আগরবাতি। শরীরের ঘামের গন্ধ হবে কস্তরীর মত সুগন্ধি। সকলের স্বভাব ও আচার আচরণ হবে একই।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُوْنَ فِيْهَا وَيَشْرَبُوْنَ وَلَايَبُوْلُوْنَ وَلَايَتَغَوَّطُوْنَ وَلَايَتْفُلُوْنَ وَلَايَمْتَخِطُوْنَ قَالُوْا فَمَا بَالُ الطَّعَامِ قَالَ جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ يُلْهَمُوْنَ التَّسْبِيْحَ وَالتَّحْمِيْدَ كَمَا تُلْهَمُوْنَ النَّفْسَ.
জাবের (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতীরা সেখানে খাবে, পান করবে। কিন্তু তারা থুথু ফেলবে না, মল-মূত্র ত্যাগ করবে না এবং তাদের নাক হ’তে শিকনীও বের হবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন তাহ‘লে তাদের এসব খাদ্যের পরিণতি কি হবে? নবী করীম(সা.) বললেন, ঢেকুর এবং মেশকের ন্যায় সুগন্ধি ঘাম দ্বারা শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর তাসবীহ্ ও তার প্রশংসা এমনভাবে তাদের অন্তরে ঢেলে দেওয়া হবে যেমন শ্বাস-নিঃশ্বাস অবিরাম চলছে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৯)। অত্র হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, তারা জান্নাতে খাবে ও পান করবে কিন্তু পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না। কারণ সেগুলি ঢেকুর ও ঘামের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। আর শ্বাস-প্রশ্বাস যেমন নিজ গতিতে চলে। এ জন্য কোন চিন্তা ভাবনা বা কোন পরিকল্পনা লাগে না তেমনি জান্নাতীদের মুখে সর্বদা তাসবীহ্ চলতে থাকবে। তাসবীহ্ পাঠের জন্য কোন চেষ্টা করা লাগবে না।