عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلاً عَلَى سَرِيَّةٍ وَكَانَ يَقْرَأُ لِأَصْحَابِهِ فِيْ صَلاَتِهِمْ فَيَخْتِمُ بِقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ سَلُوْهُ لِأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذَلِكَ فَسَأَلُوْهُ فَقَالَ لِأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمَنِ وَأَنَا أُحِبُّ أَنْ أَقْرَأَ بِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْبِرُوْهُ أَنَّ اللهَ يُحِبُّهُ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একবার নবী করীম (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে এক সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের ছালাত আদায় করাত এবং কিরআত শেষে সূরা ইখলাছ পড়ত। যখন তারা মদীনায় ফিরলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট বিষয়টি পেশ করলেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা তাকে জিজ্ঞেস কর সে কি কারণে এরূপ করে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল। সে বলল, এই সূরাতে আল্লাহর গুণাবলী আছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পাঠ করতে ভালবাসি। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমরা তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৮; বাংলা মিশকাত হা২০২৬)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক রাকআতে কিরা‘আত শেষে সূরা ইখলাছ পড়া ভাল। কিরাআত শেষে সূরা ইখলাছ পড়লে আল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ হয। এতে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। আর এ ভালবাসার পরিণাম জান্নাত।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّ رَجُلاً قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ إنِّيْ أُحِبُّ هذِهِ السُّوْرَةَ (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) قَالَ: إنَّ حُبَّاكَ اِيَّاهَا أدْخَلَكَ الجَنَّةَ-
আনাস (রাঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই সূরা ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তার প্রতি তোমার ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে’ (বুখারী হা/৩১৩০)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, মানুষকে সূরা ইখলাছের প্রতি বিশেষ ভালবাসা রাখতে হবে। এ সূরাকে যে ব্যক্তি ভালবাসবে আল্লাহ তাকে ভালবাসবেন।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيْهِمَا فَقَرَأَ فِيْهِمَا قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ وَقُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَقُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) যখন প্রত্যেক রাতে শয্যা গ্রহণ করতেন, তখন দু’হাতের তালু একত্র করতেন। অতঃপর তাতে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। তৎপর স্বীয় শরীরের সম্ভবপর অঙ্গসমূহ মুছে ফেলতেন। তিনি মাথা ও মুখমণ্ডল হতে আরম্ভ করতেন। এরূপ তিনি তিনবার করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১৩২)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিছানায় শোয়ার সময় দু’হাত একত্র করে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে ফুঁক দিয়ে শরীরের যতদূর সম্ভব হাত দ্বারা মুছে ফেলে ঘুমানো সুন্নত। অনুরূপ তিনবার করা সুন্নত। এভাবে শয্যা গ্রহণ করলে আল্লাহ তার উপর রহমত বর্ষণ করবেন এবং সে রাতে নিরাপদে থাকবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا-
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। অক্ষর অক্ষর ও শব্দ শব্দ স্পষ্টভাবে পাঠ করতে থাক, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করতেছিলে। কেননা তোমার জন্য জান্নাতে বসবাসের স্থান হচ্ছে তোমার তেলওয়াতের শেষ আয়াতের নিকট’ (আহমাদ, হাদীছ ছাহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২১৩৪; বাংলা মিশকাত হা/২০৩১)।
ব্যাখ্যা : এমন হতে পারে যে, জান্নাতের সর্বোচ্চ ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থানে যাওয়ার ধাপের সংখ্যা কুরআনের আয়াতের সংখ্যার সমপরিমাণ। যারা স্পষ্টভাবে কুরআন তেলাওয়াতে সর্বদা অভ্যস্ত আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে মান নির্ধারণ করবেন তাদের তেলাওয়াত যেখানে গিয়ে শেষ হবে।
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ قَرَأ حَرْفاً مِّنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا، لاَ أَقُوْلُ : ألم حَرفٌ، وَلكِنْ : ألِفٌ حَرْفٌ، وَلاَمٌ حَرْفٌ، وَمِيْمٌ حَرْفٌ-
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের কোন একটি অক্ষর পাঠ করবে, তার জন্য নেকী রয়েছে। আর নেকী হচ্ছে আমলের দশগুণ। আমি বলছি না যে আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর’ (তিরমিযী হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২১৩৭; বাংলা মিশকাত হা ২০৩৪)।
এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আদম সন্তান একটি নেকী করলে আল্লাহ দয়া করে একের স্থানে দশটি নেকী লিখে দিবেন। অতএব কুরআনের প্রতি অক্ষরে দশ নেকী পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আলিফ, লাম ও মীম বললে ত্রিশ নেকী পাওয়া যাবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম তিন আয়াত পড়বে তাকে দাজ্জালের ফেতনা হতে নিরাপদে রাখা হবে’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২১৪৬)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, সূরা কাহফের প্রথম তিন আয়াত নিয়মিত পড়লে, তাকে দাজ্জালের ফেতনা হতে রক্ষা করা হবে। উল্লেখ্য যে, সূরা ইয়াসীন একবার পড়লে, দশবার কুরআন পড়ার সমান নেকী দেয়া হয় মর্মে বর্ণিত হাদীছটি নিতান্তই যঈফ।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ سُوْرَةً مِنْ الْقُرْآنِ ثَلَاثُوْنَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ وَهِيَ تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কুরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছিল ফলে তাকে মাফ করা হয়েছে। সে সূরাটি হচ্ছে তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক’ (আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২১৫৩; বাংলা মিশকাত হা/২০৪৯)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, অত্র সূরার এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। কারণ সম্পূর্ণ কুরআন ক্বিয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। আর এ সূরার সুপারিশ কবুল করা হবে। ফলে তেলাওয়াতকারীর কবরের শাস্তি ক্ষমা করা হবে।