عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لاَ يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ الم تَنْزِيْلُ وَتَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ-
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) সূরা সাজদা এবং সূরা মুলক না পড়ে ঘুমানেতন না (শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২১৫৫)।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَأَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالاَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا زُلْزِلَتْ تَعْدِلُ نِصْفَ الْقُرْآنِ وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ وَقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ تَعْدِلُ رُبُعَ الْقُرْآنِ-
ইবনু আববাস ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সূরা যিলযাল কুরআনের অর্ধেকের সমান, সূরা ইখলাছ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান এবং সূরা কাফিরূণ এক চতুর্থাংশের সমান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৫৬; বাংলা মিশকাত হা/২০৫২)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, সূরা যিলযাল দু’বার পড়লে পূর্ণ কুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে। সূরা ইখলাছ তিনবার পড়লে পূর্ণ কুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে। সূরা কাফিরূণ চারবার পড়লে পূর্ণ কুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে। প্রকাশ থাকে যে, যিলযালের অংশটুকু যঈফ।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ بَيْنَا أَنَا أَسِيْرُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الْجُحْفَةِ وَالْأَبْوَاءِ إِذْ غَشِيَتْنَا رِيْحٌ وَظُلْمَةٌ شَدِيْدَةٌ فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَعَوَّذُ بِأَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَأَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ وَيَقُوْلُ يَا عُقْبَةُ تَعَوَّذْ بِهِمَا فَمَا تَعَوَّذَ مُتَعَوِّذٌ بِمِثْلِهِمَا-
ওক্ববা ইবনু আমির (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে জুহফা ও আবওয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় চলছিলাম এমন সময় আমাদেরকে প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকার ঢেকে ফেলল। তখন রাসূল (ছাঃ) সূরা ফালাক ও সূরা নাস দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং বললেন, হে ওক্ববা! তুমি এই সূরাদ্বয় দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। কারণ এই সূরা দ্বয়ের মত আর কোন সূরা দ্বারা কোন প্রার্থনাকারী আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে না’ (আবুদাঊদ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২১৬২; বাংলা মিশকাত হা/২০৫৮)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, ঝড়-ঝঞ্ঝা কিংবা যে কোন বিপদে পড়ে আশ্রয় চাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম সূরা ফালাক ও নাস। নিজেও আশ্রয় চাইবে এবং সঙ্গী-সাথী ও পরিবার-পরিজনকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বলবে। আশ্রয় চাওয়ার জন্য এ সূরাদ্বয় যত বড় মাধ্যম আর কোন সূরা বা কোন আয়াত এত বড় মাধ্যম নয়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ خُبَيْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجْنَا فِيْ لَيْلَةٍ مَطِيْرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيْدَةٍ نَطْلُبُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَدْرَكْنَاهُ فَقَالَ قُلْ فَقُلْتُ مَا أَقُوْلُ قَالَ قُلْ قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِيْنَ تُصْبِحُ وَحِيْنَ تُمْسِيْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ-
আবদুল্লাহ ইবনু খুবায়েব (রাঃ) বলেন, একবার আমরা ঝড়-বৃষ্টি ও ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে রাসূল (ছাঃ)-কে খোঁজার উদ্দেশ্যে বের হলাম এবং তাঁকে পেলাম। তখন তিনি বললেন, পড়, আমি বললাম কি পড়ব? তিনি বললেন, যখন তুমি সকাল করবে তিনবার করে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং যখন সন্ধ্যা করবে তখন তিনবার করে এই সূরাগুলি পড়বে। এই সূরাগুলি যে কোন বিপদাপদের মোকাবিলায় তোমার জন্য যথেষ্ট হবে’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২১৬৩; বাংলা মিশকাত হা/২০৫৯)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, উক্ত সূরাগুলি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে পড়লে যে কোন সমস্যা থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন।
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ-
ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারী, রিয়াযুছ ছালিহীন, ৩/৪৩পৃঃ)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন এক অতুলনীয় মর্যাদা সম্পন্ন অলৌকিক গ্রন্থ, যার শিক্ষা গ্রহণকারী এবং শিক্ষক ইহকাল ও পরকালে সবচেয়ে বেশী সম্মানের অধিকারী হবে। এজন্য কুরআন পড়া এবং পড়ানোর জোরাল চেষ্টা করা একান্ত কর্তব্য।
عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الطُّهُوْرُ شَطْرُ الإِيْمَانِ، والْحَمْدُ للهِ تَمْلأُ الْمِيْزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ والْحَمْدُ للهِ تَمْلَآنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ، والصَّلاَةُ نُوْرٌ، والصَّدَقةُ بُرْهَانٌ، والصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ. كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْبِقُهَا-
আবু মালিক আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আলহামদুলিল্লাহ মানুষের আমলের পাল্লা পূর্ণ করে। সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ মানুষের আমলের নেকী দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়। ছালাত হল আলো। দান হল দাতার ঈমানের পক্ষে দলীল। ধৈর্য হল জ্যোতি। কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে প্রমাণ। প্রত্যেক মানুষ সকালে উঠে আত্মার ক্রয়-বিক্রয় করে। হয় আত্মাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে, না হয় তাকে ধ্বংস করে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৬২)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, মানুষ যদি নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করে এবং তদনুযায়ী আমল করে তাহলে কুরআন ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে জবাবদিহি করবে। অন্যথা তার বিরুদ্ধে জবাবদিহি করবে।