عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ قَالَ مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيْمَانِ.
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের যে কোন ব্যক্তি যে কোন অন্যায় কাজ দেখবে সে যেন তা বল প্রয়োগে বাধা প্রদান করে। এভাবে সম্ভব না হলে মুখে বাধা প্রদান করবে। সম্ভব না হলে সে অন্যায়কে ঘৃণা করবে। আর অন্তরে ঘৃণা করে বাধা প্রদান করা কাজটি সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৭)।
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِى حُدُودِ اللهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَعْلاَهَا، فَكَانَ الَّذِى فِى أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِى أَعْلاَهَا، فَتَأَذَّوْا بِهِ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى، وَلاَ بُدَّ لِى مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَ أَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ.
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অন্যায়কারী ও অন্যায় দেখে যে ব্যক্তি বাধা প্রদান করে না এমন ব্যক্তিদ্বয়ের উদাহরণ হচ্ছে এক সম্প্রদায়ের মত। যে সম্প্রদায় একটি নৌকায় আরোহনের জন্য লটারী করেছে। এতে তাদের কিছু হয়েছে উপর তলার যাত্রী এবং কিছু হয়েছে নীচ তলার। নীচ তলার লোকেরা উপর তলায় পানি আনতে যায়। এতে উপর তলার লোকের কষ্ট হয়। তখন নীচ তলার লোকেরা কুড়াল দিয়ে পানি বের করার জন্য নৌকার তলা ছিদ্র করতে উদ্ধত হয়। তার পর উপর তলার লোক এসে বলে, তোমাদের কি হয়েছে, তোমরা এমন করছ কেন? তখন তারা বলল, আমরা নীচ তলা থেকে পানি আনতে গেলে তোমাদের কষ্ট হয়। আবার আমাদের পানিরও খুব দরকার। (এ কারণে নৌকার তলা ছিদ্র করে পানি বের করব।) উপরের লোকেরা যদি তাদের কুড়ালটি নিয়ে নেয় এবং তাদেরকে একাজ থেকে বারণ করে তাহলে তারা তাদেরকে বাঁচাবে এবং নিজেদেরকেও বাঁচাবে। আর তাদেরকে ছেড়ে দেয়, বাধা না দেয়, তাহলে তাদেরকে ডুবিয়ে ধ্বংস করবে এবং নিজেদেরকেও ধ্বংস করবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৩৮)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যারা অন্যায় করে এবং যারা অন্যায় দেখে বাধা দেয় না, তারা উভয়ই পাপী। তাদের উভয়ের অপরাধ সমান।
ভালকাজের আদেশ দিলে নিজেও পালন করতে হবে। অন্যথা পরিণতি হবে ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ، كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল এমন কথা, যা তোমরা কর না (ছফ ২-৩)।
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِى النَّارِ، فَيَدُورُ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ، فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ، فَيَقُولُونَ أَىْ فُلاَنُ، مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ قَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ، وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ.
উসামা ইবনু যায়েদ বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যাবে। এসময় সে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চার পার্শ্বে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে ভালকাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে ভালকাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না। আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম অথচ আমিই তা করতাম’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৩৯)।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِى رِجَالاً تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلاَ يَعْقِلُوْنَ.
আনাস ইবনু মালিক বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে রাতে আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে রাতে কতগুলি লোককে দেখলাম, যাদের ঠোট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, যারা মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করত, তারা কুরআন চর্চা করত না’ (ইবনু হিববান, তারগীব, হা/৩৩২৮)।
عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَزْدِي صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رضي الله عنه عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الَّذِي يُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ وَيَنْسَى نَفْسَهُ كَمَثَلِ السِّرَاجِ يُضِيءُ لِلنَّاسِ وَيُحْرِقُ نَفْسَهُ.
জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ আযদী বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তি উদাহরণ যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের দাওয়াত দেয়, নিজে আমল করে না। সে সেই মোমবাতির মত, যে মোমবাতির মত। যে মোমবাতি মানুষকে আলো দেয় এবং নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়’ (তাবারানী, তারগীব, হা/৩৩৩১)।
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي كُلّ مُنَافِق عَلِيْمُ بِاللِّسَانِ.
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার অবর্তমানে তোমাদের উপর যেটা সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হচ্ছে সেই সব লোক যারা মুখে জ্ঞানী, মুনাফেক’ (তাবারানী, তারগীব হা/৩৩৩২)।
যারা মুখে ধর্মের কথা বলে, নিজে আমল করে না। এদের বিষয়টি সবচেয়ে ভয়াবহ। এরা মুখে জ্ঞানী, কর্মে মুনাফিক।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبْصِرُ أَحْدُكُمُ الْقَذَاةَ فِيْ عَيْنِ أَخِيْهِ وَيَنْسَى الْجِذْعَ فِيْ عَيْنِهِ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কোন ব্যক্তি অন্যের চোখে ক্ষুদ্র-কুটা দেখতে পায়, কিন্তু নিজের চোখে গাছের শিকড়, বড় কাঠ খন্ড দেখতে পায় না (তাবারানী, তারগীব হা/৩৩৩৬)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষ অপরের ক্ষুদ্র দোষ দেখতে পায় কিন্তু নিজের বড় দোষ দেখতে পায় না। ভাল কাজের আদেশ দেয়, আর নিজের বড় দোষ দেখতে পায় না। ভাল কাজের আদেশ দেয়া আর নিজে না করা সবচেয়ে বড় দোষ।