ভাল কাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজের নিষেধ করা মুসলিমদের উপর আল্লাহ রাববুল আলামীনের নির্দেশ। তিনি বলেন,وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকতে হবে, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। তারাই হবে সফলকাম’ (আলে-ইমরান ১০৪)। তিনি আরো বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
‘তোমরাই এমন এক উত্তম দল, যাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা ভাল কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজের নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর; আর যদি গ্রন্থ প্রাপ্তগণ বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে অবশ্যই তাদের জন্যে মঙ্গল হত; তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো মুমিন এবং তাদের অধিকাংশই দুষ্কার্যকারী’ (আলে ইমরান ১১০)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘মুমিন পুরুষ ও নারী তারা পরস্পরের বন্ধু শুভাকাঙ্খী। তারা ভালকাজের আদেশ করে এবং মন্দকাজের নিষেধ করে। তারা আল্লাহকে মান্য করে, তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তারা এমন মানুষ যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’ (তওবা ৭১)।
লোকমান হাকীম তার ছেলেকে বলেন, يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ ‘হে আমার পুত্র! ছালাত কায়েম কর, ভালকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজের নিষেধ কর। আর যে বিপদই আসুক না কেন তাতে ধৈর্য ধারণ কর। এ কাজগুলি এমন যাতে খুব বেশী বেশী তাকীদ করা হয়েছে’ (লোকমান ১৭)।
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ أَوْ أَمِيرٍ جَائِرٍ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘সবচেয়ে উত্তম জিহাদ হচ্ছে, যালিম শাসকের নিকটে হক কথার দাওয়াত দেয়া’ (আবুদাউদ, তারগীব হা/৩২৯৯)।
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَيِّدُ الشُّهَدَاءِ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَرَجُلٌ قَامَ إِلَى إِمَامِ جَائِرْ فَأَمَرَهُ وَنَهَاهُ فَقَتَلَهُ.
জাবির (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘শহীদদের সর্দার হচ্ছেন হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব এবং সেই ব্যক্তিও শহীদদের সর্দার যে অত্যাচারী নেতার নিকটে গেল এবং তাকে ভাল কাজের আদেশ করল এবং মন্দ কাজের নিষেধ করল। তখন সে তাকে হত্যা করল’ (তিরমিযী, তারগীব হা/৩৩০২)।
এই হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, অত্যাচারী শাসকের নিকট হকের দাওয়াত দেয়া খুবই কঠিন কাজ। এমন স্থানে দাওয়াত দেওয়ার পরিণতি জীবন বিসর্জনও হতে পারে। তবে তার বিনিময় হবে জান্নাত। আর তার মর্যাদা হবে শহীদদের মর্যাদার সমান। অত্যাচারী শাসকের ভয়ে দাওয়াতের কাজ থেমে থাকতে পারে না, স্তিমিত বা শিথিল হতে পারে না। বরং যালিমের মোকাবিলায় আল্লাহর উপরে ভরসা রেখে জোরে শোরে দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ لَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنْ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ-
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শক্তি প্রয়োগে দাওয়াত দিবে সে মুমিন, যে মুখের মাধ্যমে দাওয়াত দিবে সে মুমিন, যে অন্তরের মাধ্যমে দাওয়াত দিবে সে মুমিন। যে এ তিনটি পদ্ধতির কোন একটি অবলম্বন করবে না, তার অন্তরে সরিষা দানা সমপরিমাণও ঈমান নেই’ (মুসলিম, তারগীব হা/৩৩০৪)।
عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ، لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوْشِكَنَّ اللهُ أنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَاباً مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ-
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার আত্মা রয়েছে! অবশ্যই তোমরা ভালকাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করবে নইলে অচিরেই আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন, তখন তোমরা তাঁর নিকট প্রার্থনা করবে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের প্রার্থনা কবুল করবেন না’ (তিরমিযী, তারগীব হা/৩৩০৭)।
عَنْ جَرِيْرٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ صلى الله عليه وسلم اَلدِّيْنُ اَلنَّصِيْحَةُ ثَلَاثًا. قُلْنَا لِمَنْ يَا رَسُوْلَ اَللهِ؟ قَالَ لِلَّهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ-
জারীর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, দ্বীন হচ্ছে উপদেশ প্রদানের নাম। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। জারীর (রাঃ) বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ উপদেশ কার জন্য হবে? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য ও সাধারণ মুসলমানদের জন্য’ (বুখারী, তারগীব হা/৩৩১০)।
আল্লাহর জন্য উপদেশ হচ্ছে তাঁর সাথে শিরক না করা। রাসূলের জন্য উপদেশ হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা। নেতাদের জন্য উপদেশ হচ্ছে অনুগতদের কল্যাণ কামনা করা, তাদেরকে দ্বীনের পথে পরিচালনা করা। সাধারণ মুসলমানের জন্য উপদেশ হচ্ছে আল্লাহর পথে মানুষকে আহবান করা এবং জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা।
عَنْ جَرِيرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُوْنُ فِي قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي يَقْدِرُوْنَ عَلَى أَنْ يُغَيِّرُوْا عَلَيْهِ فَلاَ يُغَيِّرُوْا إِلَّا أَصَابَهُمْ اللهُ بِعَذَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَمُوْتُوْا.
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন কোন মানুষ কোন সম্প্রদায়ের মাঝে পাপের কাজ করে। এ সময় তারা বাধা প্রদান করবে না, তাহলে আল্লাহ তাদের মরণের পূর্বে তাদের সকলের উপর বিপদ চাপিয়ে দিবেন’ (আবুদাউদ, তারগীব হা/৩৩১২)।
عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ الْقَوْمَ إِذَا رَأَوُا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُغَيِّرُوْهُ عَمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابٍ-
আবু বকর ছিদ্দীক (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন কোন সম্প্রদায় শরী‘আত বিরোধী কোন কাজ দেখবে এবং তা হতে বাধা প্রদান করবে না, তখন আল্লাহ তাদের সকলকে শাস্তি প্রদান করেন’ (আবুদাউদ, তারগীব হা/৩৩১৩)।