নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীদেরকে তাশাহহুদের বিভিন্ন প্রকার শব্দ শিখিয়েছেন।
১। ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণিত তাশাহহুদ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন এমনভাবে (দুই হাতের তালু এক সাথে মিলিয়ে দেখালেন) যেমনভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন।
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
আল্লাহর জন্যই যাবতীয় তাহিয়াত, ছালাওয়াত[1] ও তইয়াবিত[2] সালাম[3] আপনার প্রতি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত[4] হে আমাদের নাবী! সালাম আমাদের প্রতি ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাহগণের প্রতি। (ছালিহীন বা সৎকর্মশীল বান্দা বললে আসমান ও যমীনের প্রত্যেকটি সৎবান্দা এর আওতাভুক্ত হয়ে যায়)। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি এই মর্মে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
ইবনু মাসউদ বলেনঃ আমরা উক্ত শব্দে অর্থাৎ أَيُّهَا النَّبِيُّ হে নাবী! সম্বোধন সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তাশাহহুদ পাঠ করতাম যখন তিনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলেন, কিন্তু যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমরা أَيُّهَا النَّبِيُّ এর পরিবর্তে على النبى এর অর্থাৎ নাবীর উপর বলতাম।[5]
২। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তাশাহহুদ।
তিনি বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমনভাবে তাশাহহদী শিক্ষা দিতেন যেমনভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি এভাবে বলতেনঃ[6]
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ الْمُبَارَكَاتُ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وفى رواية عَبْدُهٗ وَرَسُولُهٗ
সকল তাহিয়াত, মুবারাকবাদ ও তাইয়িবাত আল্লাহর জন্য। সালাম বৰ্ষিত হোক আপনার প্রতি হে নাবী এবং আল্লাহর রহমত ও তার বরকত। আমাদের প্রতি ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রতিও সালাম বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তাঁর প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।[7]
৩। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর তাশাহহুদঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ শব্দে বর্ণনা করেছেনঃ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ (وَ)الصَّلَوَاتُ (وَ)الطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ اللَّهِ [قال ابن عمر زدت فيها وبركاته] السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ [قال ابن عمر زدت فيها وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ] وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
তাহিয়াত, ছালাওয়াত ও তাইয়িবাত সমস্তই একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। শান্তি ও আল্লাহর রহমত বৰ্ষিত হোক আপনার উপর হে নাবী, ইবনু উমার বলেনঃ আমি পরে এর ভিতর “অবারাকাতুহু” এবং ‘তাঁর উপর বরকত’ এ অংশ যোগ করেছি।[8] শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর এবং সমস্ত সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য প্ৰদান করছি এই মর্মে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এর পরে আমি এর ভিতর যোগ করেছি- “অহদাহু লা শারীকালাহু” অর্থাৎ তিনি একক তার কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি এই মর্মে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।[9]
৪। আবু মূসা আশা আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তাশাহহুদ।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
وإذا كان عند القعدة فليكن من أول قول أحدكم: التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ (وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) سبع كلمات عن تحية الصلاة
যখন তোমাদের কোন ছালাত আদায়কারী বৈঠকে থাকবে তখন তার প্রথম কথা হবে এইঃ তাহিয়াত, তাইয়িবাত ও ছলাওয়াত সবই আল্লাহর প্রাপ্য। শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আপনার উপর হে নবীজী। আমাদের উপর ও আল্লাহর সকল সৎকর্মশীল বান্দার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি এ মর্মে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি এ মর্মে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। “এ সাতটি বাক্য হচ্ছে ছলাতের তাহিয়্যাত।[10]
৫। উমার বিন খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর তাশহহুদঃ
তিনি মিম্বরে চড়ে লোকদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন এই ভাষায়— তোমরা বলঃ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ الزَّكِيَّاتُ لِلَّهِ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ ...
তাহিয়াত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, যাকিয়াত (পবিত্রতা জ্ঞাপক শব্দাবলী) আল্লাহর জন্য নির্ধারিত এবং তাইয়িবাত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। শান্তি বৰ্ষিত হোক আপনার উপর হে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ... শেষ পর্যন্ত ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তাশাহহুদের ন্যায়।[11]
৬। “আইশাহ (রাঃ)-এর তাশাহহুদঃ
কাসিম বিন মুহাম্মাদ বলেনঃ তিনি আমাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন এবং আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে বলতেনঃ
التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ الزَّاكِيَّاتُ (لِلَّهِ) السَّلَامُ عَلٰى النَّبِيُّ. . . إلخ تشهد ابن مسعود
তাহিয়াত, তাইয়িবাত, ছালাওয়াত, যাকিয়াত (পবিত্রতা জ্ঞাপক শব্দাবলী) আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার উপর ... শেষ পর্যন্ত ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তাশহহুদ।[12]
الصلاة على النبي ﷺ وموضعها وصيغها
নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ছালাতে পাঠ এবং তার স্থান ও শব্দাবলী
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উপর ছালাত পাঠ করতেন প্রথম তাশাহহুদ ও শেষ তাশাহহুদে।[13]
আর উম্মাতের জন্য এটা পাঠ করা বিধিবদ্ধ করেছেন, তিনি তাদেরকে তাঁর প্রতি সালাম প্রদানের পরে ছালাত (দরুদ) পাঠ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।[14]
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তার প্রতি ছালাত পাঠ করার বিভিন্ন শব্দ শিক্ষা দিয়েছেনঃ
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ , وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
وهذا کان يدعو به هو نفسه صلی الله عليه وسلم
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার পরিজন, পত্নীকুল ও সন্তানবৰ্গকে ছালাতে[15] (প্ৰশংসা ও মান মর্যাদায়) ভূষিত কর। যেমনভাবে ছালাতে ভূষিত করেছ। ইবরাহীম নাবীর বংশধরকে, নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। আর বরকত[16] নাযিল কর মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার পরিজন, পত্নিকুল ও সন্তানবর্গের উপর যেমনভাবে বরকত নাযিল করেছে ইবরাহীম নাবীর বংশধরের উপর। নিশ্চয় তুমি অতি প্ৰশংসিত মহিমান্বিত।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত শব্দাবলী বিশিষ্ট দুআ (ছালাত) নিজের প্রতি পাঠ করতেন।[17]
২।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى (إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى) آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، [18]وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى (إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى) آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও তার বংশধরকে ছালাতে ভূষিত কর, যেমনভাবে ইবরাহীম নাবী ও তার বংশধরকে ছালাতে ভূষিত করেছ, নিশ্চয়ই তুমি অতি প্ৰশংসিত মহিমান্বিত।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধর এর উপর বরকত নাযিল কর যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত নাযির করেছ, নিশ্চয় তুমি অতি প্ৰশংসিত মহিমান্বিত।[19]
৩।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ (وَآلِ إِبْرَاهِيمَ) إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى (إِبْرَاهِيمَ) وَآلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরকে সম্মান ও মর্যাদা দান কর যেমনভাবে ইবরাহীম নবী ও তাঁর বংশধরকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছ, নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত, অতি মহিমান্বিত। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত দান কর যেমনভাবে দান করেছ ইবরাহীম নবী ও তাঁর বংশরের উপর, নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত, অতি মহিমান্বিত।[20]
৪।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ (النَّبِيِّ الاُّمِّي) وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْ عَلَى مُحَمَّدٍ (النَّبِيِّ الاُّمِّي) وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى (آلِ) إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! নিরক্ষর নাবী মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরকে ছালাত দান কর যেমনভাবে ছালাত দান করেছ ইবরাহীম নাবীকে এবং ইবরাহীম নাবীর বংশধরকে নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত অতি মহিমান্বিত। আর নিরক্ষর নাবী মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরকে বরকত দান করা যেমনভাবে বরকত দান করেছ ইবরাহীম নাবী ও ইবরাহীম নাবীর বংশধরকে সমগ্র জগতের ভিতর। নিশ্চয় তুমি অতি প্ৰশংসিত অতি মহিমান্বিত।[21]
৫।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى (اٰلِ) إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ (َبْدِكَ وَرَسُولِكَ) وَ(عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ) كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ (عَلَى اٰلِ إِبْرَاهِيمَ)
হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও তোমার রসূল মুহাম্মাদকে ছালাত দান কর, যেমনভাবে ছালাত দান করেছ ইবরাহীম নাবীর বংশধরকে। আর বরকত দান কর তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদকে এবং মুহাম্মাদের বংশধরকে যেমনভাবে বরকত দান করছে ইবরাহীম নাবী ও তাঁর বংশধরকে।[22]
৬।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَّ(عَلَى) أَزْوَاجِه وَذُرِّيَّتِه كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى (آلِ) إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّ(عَلَى) أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى (آلِ) إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, তার পত্নীকুল ও সন্তানবর্গের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি কর, যেমনভাবে ইবরাহীম নাবীর বংশধরের মান মর্যাদা বৃদ্ধি করেছ এবং বরকত দান কর মুহাম্মাদ, তার স্ত্রীপরিজন ও তাঁর সন্তানবর্গের উপর যেমনভাবে বরকত দান করেছ ইবরাহীম নাবী ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত অতি মহিমানিত।[23]
৭।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও মুহাম্মাদের বংশধরের মান মর্যাদা বৃদ্ধি কর এবং মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরকে বরকত দান করা যেমনভাবে মান-মর্যাদা ও বরকত দান করেছ ইবরাহীম নাবী ও তার বংশধরকে নিশ্চয় তুমি অতি প্ৰশংসিত মহিমান্বিত।[24]
[2] (الطَّيِّبَات) আত্ত্বাইয়িবাত ঐ মানানসই সুন্দর বাক্য যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। তবে তা এমন যেন না হয় যে, তার পরিপূর্ণ গুণাবলীর জন্য অনুপযুক্ত। যার দ্বারা রাজা বাদশাহদেরকে সম্ভাষণ জানান হতো।
[3] (السلام) আল্লাহর নিকট আশ্রিত হওয়া ও নিরাপত্তা লাভ করা। কারণ আসসালামু তাঁরই একটি পবিত্রতম নাম যার উহ্যরূপ এই الله عليك حفيظ وكفيل আল্লাহ তোমার সংরক্ষণকারী ও দায়িত্বশীল। যেমন বলা হয় الله معك আল্লাহ তোমার সাথে রয়েছেন- এর অর্থ তিনি তোমার সাথে রয়েছেন সংরক্ষণ, সাহায্য ও দয়া করার মাধ্যমে।
[4] বারাকাতঃ অবিরাম ধারায় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা যে কোন কল্যাণের নাম।
[5] বুখারী, মুসলিম, ইবনু আবী শাইবাহ (১/৯০/২) আসসারাজ ও আবু ইয়ালা স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে (২৫৮/২)এ হাদীছটি “আল-ইরওয়া” গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। (৩২১)। আমার কথা এই যে, ইবনু মাসউদ (রাযিআল্লাহু আনহু)-এর উক্তিঃ قلنا السلام على النبى আমরা “আসসালামু আলান নাবী” বলতাম। অর্থাৎ যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত ছিলেন তখন ছাহাবাগণ তাশহহুদে السلام عليك أيها النبي ‘আপনার প্রতি সালাম হে আমাদের নবী’ বলতেন। কিন্তু যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখন তারা তা বলা থেকে বিরত হয়ে السلام على النبى “আসসালামু আলানন্নাবী” বলতেন।
তারা অবশ্যই এমনটি করে থাকবেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক এ সম্পর্কে অবগত করানোর ফলে। এ মন্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় “আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকেও। তিনিও লোকদেরকে ছালাতের যে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন তাতে السلام على النبى আসসালামু আলননাবী রয়েছে। এটা বৰ্ণনা করেছেন সাররাজ তার মুসনাদ গ্রন্থে (৯/১/২) এবং মুখাল্লিছ তার “আল ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১১/৫৪/১) বিশুদ্ধ দুটি সূত্রে।
হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই বর্ধিত অংশের বাহ্যত মর্ম এই যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন জীবিত ছিলেন তখন ছাহাবাগণ السلام عليك أيها النبي সম্বোধসূচক ‘কাফ’ অব্যয় ব্যবহার করে বলতেন। কিন্তু যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুবরণ করলেন তখন সম্বোধনসূচক শব্দ পরিত্যাগ করে অনুপস্থিতসূচক শব্দ ব্যবহার করে বলতে শুরু করলেন- السلام على النبى “আসসালামু আলান নাবী”।
অন্যত্র বলেছেনঃ সুবকী ‘শারহুল মিনহাজ’ নামক গ্রন্থে উক্ত বর্ণনাটি আবু উওয়ানাহ থেকে উদ্ধৃত করার পর বলেছেন যে, “যদি এমনটি ছহীহ সূত্রে ছাহাবাহদের থেকে সাব্যস্ত হয়ে থাকে। তবে এর নির্দেশ এই যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর সালামের ক্ষেত্রে সম্বোধন করা ওয়াজিব নয়। অতএব এভাবে বলা যাবে السلام على النبى ‘আসসালামু আলান নাবী’।
আমি (আলাবানী) বলছি- এরূপ পরিবর্তন ছাহাবীদের থেকে নিঃসন্দেহে বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত। অর্থাৎ ছহীহ বুখারীতেই সাব্যস্ত হয়েছে। এছাড়াও এর অনুকূলে বলিষ্ঠ বর্ণনাও পেয়েছি। আব্দুর রাযযাক বলেনঃ আমাকে ইবনু জুরাইজ সংবাদ দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ আমাকে আতা সংবাদ দিয়েছেন এই মর্মে যে,
أن الصحابة كانوا يقولون، والنبي صلى الله عليه وسلم حي: السلام عليك أيها النبي فلما مات قالوا السلام على النبى
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ছাহাবাগণ ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবী’ বলতেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তারা বলতেন “আসসালামু আলানন্নাবী”। এ বর্ণনা সূত্রটি ছহীহ। পক্ষান্তরে সাঈদ বিন মানছুর আবু উবাইদাহর সূত্রে তার পিতা ইবনু মাসউদ থেকে যে বর্ণনাটি এনেছেন যাতে এসেছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে ঐ (পরিচিত) তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জীবিত ছিলেন তখন আমরা السلام عليك أيها النبي ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবী’ বলতাম। ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ এভাবেই তো নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিখিয়েছেন এবং আমরা এভাবেই জানি। এ বর্ণনার বাহ্যিক ভঙ্গি এই নির্দেশ করে যে, ইবনু আব্বাস যা বলেছেন অনুসন্ধান ও তদন্ত সাপেক্ষে বলেছেন এবং ইবনু মাসউদ বিনা তদন্তে বলেছেন। অথচ (এর চেয়ে) আবু মা'মারের বর্ণনা অর্থাৎ বুখারীর বর্ণনা অধিক বিশুদ্ধ। কেননা আবু উবাইদাহর তাঁর পিতা থেকে শোনা সাব্যস্ত হয়নি এতদসত্ত্বেও তার পর্যন্ত যে সনদ পাওয়া যায় তা দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজারের উপরোক্ত বক্তব্য কাসত্বলানী, যুরকানী, আব্দুল হাই লক্ষৌভীর মত মুহাক্কিক উলামা গোষ্ঠী সংকলন করেছেন ও তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন- কোন বিরূপ মন্তব্য করেননি।
[6] নূবী (রহঃ) বলেন শব্দের (ভিতর “ওয়াও” অব্যয়টি ব্যবহৃত হযনি যার উহ্য অবস্থা এরূপ হবেঃ الْمُبَارَكَاتُ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ যেমনভাবে ইবনু মাসউদ ও অন্যান্যদের বর্ণনায় এসেছে। এখানে সংক্ষেপায়নের উদ্দেশ্যে “ওয়াও” অক্ষরটি উহ্য রাখা হয়েছে আর এমনটি আরবী ভাষায় বৈধ যা ভাষাবিদদের নিকট পরিচিত।
হাদীছের অর্থ এই যে, নিশ্চয় তাহিয়াত এবং যা এর পর উল্লেখ রয়েছে এসব কেবল আল্লাহর জন্য উপযুক্ত। এর প্রকৃত মর্ম তিনি ব্যতীত আর কারো জন্য শোভনীয় নয়।
[7] মুসলিম, আবু উওয়ানাহ, শাফিঈ ও নাসায়ী।
[8] এ বর্ধিত অংশ এবং এর পরের বর্ধিত অংশ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত তাশাহহুদে সাব্যস্ত রয়েছে; ইবনু উমার (রাঃ) নিজের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি করেননি, আর তিনি তা করতেও পারেন না। বরং অন্য ছাহাবীদের থেকে গ্ৰহণ করেছেন- যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এটুকু বৰ্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সরাসরি যে তাশাহহুদ শুনেছিলেন তার উপর এটুকু বৃদ্ধি করেছেন।
[9] আবু দাউদ ও দারাকুতনী এবং তিনি একে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
[10] মুসলিম, আবু উওয়ানাহ, আবু দাউদ ও ইবনু মাজাহ।
[11] ছহীহ সনদে, মালিক ও বাইহাকী, হাদীছটি যদিও মাওকুফ (ছাহাবী পর্যন্ত সনদের ধারা ক্ষান্ত) কিন্তু বিধানের ক্ষেত্রে মারফু' [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর্যন্ত সনদের ধারা বিদ্যমান] হাদীছের পর্যায়ভুক্ত। কেননা এটা জানা কথা যে এরূপ কথা রায় থেকে বলা সম্ভব নয়। যদি রায় থেকে বলা হতো তাহলে এই যিকরটি অন্যান্য যিকরের চেয়ে উত্তম হত না। যেমনটি বলেছেন ইবনু আব্দিল বার। জ্ঞাতব্যঃ পূর্বোক্ত সমস্ত তাশাহহুদেই ومغفرته শব্দটি অবিদ্যমান, অতএব তা অগ্রাহ্য। এ কারণে সালাফদের কেউ কেউ তাকে অস্বীকার করেছেন। ত্বাবারানী (৩/৫৬/১) ছহীহ সনদে তলহা বিন মুছাররিফ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রবী বিন খাইছাম তাশাহহুদের ভিতর وبركاته এর পর ومغفرته যোগ করেছিল। আলক্বামাহ (তার প্রতিবাদ করে) বলেছিলেন যা আমাদেরকে (নবী কর্তৃক) শিখানো হয়েছে তাতেই আমরা ক্ষান্ত হবো। (السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ) আলকামাহ এই (সচেতনতামূলক) অনুসরণের শিক্ষা গ্ৰহণ করেছেন তার উস্তায আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে। ইবনু মাসউদ থেকে বর্ণিত— তিনি এক ব্যক্তিকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেছিলেন— যখন সে একথা পর্যন্ত পৌছল “আশাহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু” সে (এর পর) ও (অহদাহু লা শারীকালাহু) বলল। আব্দুল্লাহ বললেনঃ বাস্তবে তিনি তাই অর্থাৎ তিনি একক ও শরীক বিহীন। কিন্তু আমরা ওখানেই ক্ষান্ত হবো যে পর্যন্ত আমাদেরকে শিখানো হয়েছে।
ত্বাবারানী একে তার আওসাত্ব গ্রন্থে (হাদীছ নং ২৮৪৮ আমার ফটোকপি) ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, যদি মুসাইয়িব কাহিলী ইবনু মাসউদ থেকে শুনে থাকে।
[12] এটাকে উদ্ধৃত করেছেন ইবনু আবী শাইবাহ (১/২৯৩), সাররাজ, মুখাল্লিছ (যেমনটি অতিবাহিত হয়েছে) এবং বাইহাকী (২/১৪৪), আর ভাষাভঙ্গি তারই।
[13] আবু আওয়ানাহ তার ছহী গ্রন্থে (২/৩২৪) বর্ণনা করেছেন এবং নাসাঈও।
[14] ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন- হে আল্লাহর রাসূল। আমরা তো জেনেছি কিভাবে আপনার উপর সালাম প্রদান করবো (তাশাহহুদের ভিতর) কিন্তু কিভাবে আপনার উপর ছালাত পাঠ করবো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “তোমরা বল আল্লাহুম্মা ছল্লিআলা মুহাম্মাদ...” হাদীছের শেষ পর্যন্ত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন তাশাহহুদকে কোন তাশাহহুদ ব্যতীত ছালাত বা দরুদের জন্য বিশিষ্ট করেননি। এর ভিতরেই প্রমাণ নিহিত রয়েছে প্রথম তাশাহহুদেও ছালাত বা দরূদ পাঠ শরীয়ত সম্মত হওয়ার বিষয়টি, আর এটা ইমাম শাফিঈর মতও বটে, যেমনটি ব্যক্ত করেছেন স্বীয় কিতাব “আল-উম্মু” এর ভিতর। আর ছাহাবীবর্গের নিকট এটা সঠিক যেমনটি ব্যক্ত করেছেন ইমাম নূবী আল-মাজ’মূ গ্রন্থে (৩/৪৬০) আর এটাই ব্যাক্ত করেছেন “আররাওযাহ” গ্রন্থে (১/২৬৩, আল মাকতাবুল ইসলামী প্রকাশনী)। আর এ মতই গ্রহণ করেছেন আল-অযীর বিন হুবাইরাহ হাম্বলী “আল-ইফছাহ” গ্রন্থে যেমনটি সংকলন করে সমর্থন দিয়েছেন ইবনু রাজাব যাইলুত্ ত্ববাকাত গ্রন্থে (১/২৮০)। বহু হাদীছই এসেছে তাশাহহুদে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর ছালাত পাঠ করার ব্যাপারে, তার কোনটিতেই এক তাশাহহুদ ব্যতীত অন্য তাশাহহুদের সাথে এর উল্লিখিত বিশিষ্টতা নেই। বরং তা প্রত্যেক তাশাহহুদকে ব্যাপকভাবে শামিল করে। মূল গ্রন্থের টীকায় ঐ সকল হাদীছ উদ্ধৃত করেছি, মূল কিতাবে এর কিছু অংশও উদ্ধৃত করিনি। কারণ মূল কিতাবে তা উল্লেখ করা আমাদের শর্ত বহির্ভূত। যদিও তার একেকটি অন্যটিকে শক্তিশালী করে। কিন্তু নিষেধকারী বিরুদ্ধ পক্ষের নিকট কোন প্রামাণ্য ছহীশুদ্ধ দলীলই নেই। যেমনটি মূল কিতাবে বর্ণনা করেছি। অনুরূপভাবে একথাও ভিত্তিহীন ও প্রমাণ শূন্য যে, প্রথম তাশাহহুদে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর ছলাত পাঠের ক্ষেত্রে “আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদ” এর চেয়ে বেশী বলা মাকরুহ। বরং আমরা মনে করি যে, এরূপকারী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পূর্বোল্লিখিত নির্দেশ قولوا اللهم صل على محمد وعلى ال محمد তোমরা বল— “হে আল্লাহ মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরের উপর ছালাত (দয়া) বর্ষণ কর.....”। শেষ পর্যন্ত— বাস্তবায়ন করেনি। এ গবেষণা কার্যের পরিশিষ্ট রয়েছে যা মূল গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছি।
[15] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ছালাত পড়ার অর্থ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তন্মধ্যে আবুল আলিয়াহর কথাই সর্বোত্তমঃ নবীর প্রতি আল্লাহর ছালাত অর্থ- তাঁর কর্তৃক নবীর প্রশংসা ও সম্মান প্রদর্শন। ফিরিশতা কর্তৃক তার প্রতি ছালাত অৰ্থ- আল্লাহর নিকট নবীর জন্য তাঁর কর্তৃক তাযীম ও সম্মানের আবেদন করা। আবেদন করার উদ্দেশ্য অধিক পরিমাণে তা প্রদানের আবেদন, মূল ছালাতের আবেদন নয়। হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে এই অর্থই উল্লেখ করেছেন এবং প্রসিদ্ধ উক্তি- রবের ছলাত অৰ্থ- রহমত। (দয়া)-এর প্রতিবাদ করেছেন। ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) তাঁর ‘জালাউল আফহাম’, নামক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দান করেছেন যাতে এর চেয়ে বেশী কিছু নেই, আপনি তাও অধ্যয়ন করতে পারেন।
[16] ‘বারিক’ ‘আল বারাকাহ’ থেকে- যার অর্থ বৃদ্ধি, আধিক্য, কল্যাণ কামনা ও এসবের জন্য দু'আ করা। সুতরাং এ দু'আয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এমন কল্যাণ দানের কথা সন্নিহিত রয়েছে যা ইবরাহীম নবীর বংশধরকে আল্লাহ দান করেছেন। আর একল্যাণ যেন স্থায়ী, চিরন্তন, দ্বিগুণ হারে ও অধিক পরিমাণে হয়।
[17] আহমাদ ও তহাবী- ছহীহ সনদে এবং বুখারী ও মুসলিম- “আহলে বাইতিহী” শব্দ বাদে।
[18] ব্রাকেটের ভিতরের এ বৃদ্ধিটুকু ও এর পরের বৃদ্ধিটুকু বুখারী, তহাবী, বায়হাকী ও আহমাদের বর্ণনায় সুসাব্যস্ত। অনুরূপভাবে নাসাঈতেও। এছাড়াও বিভিন্ন বর্ণনাসূত্রে সমাগত শব্দাবলীতেও উক্ত বৃদ্ধিটুকু এসেছে। অতএব আপনি বিভ্রান্ত হবেন না “জালাউল আফহাম” নামক গ্রন্থে (১৯৮ পৃষ্ঠা) ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) যা বলেছেন তা নিয়ে তিনি স্বীয় গুরু ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন "ফাতাওয়া” গ্রন্থের (১/১৬) এ উদ্ধৃতি অনুযায়ীঃ “কোন এমন ছহীহ হাদীছ আসেনি যাতে এক সাথে (إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ) রয়েছে। এইতো আমরা আপনাকে ছহীহ সূত্রে এনে দিলাম। প্রকৃত পক্ষে এটা হচ্ছে এই কিতাবের উপকারিতাসমূহের একটি উপকারিতা এবং বিভিন্ন বর্ণনা সূত্র এবং বিভিন্ন শব্দের সূক্ষ্ম অনুসন্ধান ও তার মাঝে সমন্বয় সাধনের বৈশিষ্ট্য এবং এ বিষয়টি অর্থাৎ পূর্বানুরূপ অনুসন্ধান কাৰ্য আমাদের পূর্বে আর করা হয়নি। অতএব মর্যাদা, কৃতজ্ঞতা ও অনুগ্রহ কেবল আল্লাহরই। আর ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ)-এর প্ৰমাদ ঘটানোর তাগিদ মেলে আগত সপ্তম প্রকারের ভিতর। স্বয়ং তিনি তাকে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন। অথচ তার ভিতরেই ঐ বিষয় (বৃদ্ধিটুকু) রয়েছে যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
[19] বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ— “আমালুন ইয়াউমি অল্লাইলাহ” গ্রন্থে (১৬২/৫৪) আল-হুমাইদী (১৩৮/১) ইবনু মান্দাহ (৬৮/২) এবং তিনি বলেছেন এ হাদীছটি সকলের ঐকমত্যানুসারে ছহীহ।
[20] আহমাদ, নাসাঈ ও আবু ইয়ালা তার মুসনাদ গ্রন্থে (কাফ ২/৪৪) সনদ ছহীহ।
[21] মুসলিম, আবু আওয়ানাহ, ইবনু আবী শাইবাহ, তার মুছান্নাফ গ্রন্থে (২/১৩২/১), আবু দাউদ ও নাসাঈ (১৫৯-১৬১) এবং হাকিম একে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
[22] বুখারী, নাসাঈ, ত্বহাবী, আহমাদ ও ইসমাঈল কাযী তার “ফাযলুছ ছলাতি আলাননাবী” নামক গ্রন্থে- পৃষ্ঠা ২৮, প্রথম সংস্করণ ৬২ পৃষ্ঠা, ও আল-মাকতাবুল ইসলামী প্রকাশনী, দ্বিতীয় সংস্করণ আমার (আলাবানীর) তাহকীকসহ।
[23] বুখারী, মুসলিম ও নাসাঈ (১৬৪/৫৯)।
[24] নাসাঈ (১৬৪/৫৯), ত্বাহাবী, আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী “আল-মুজাম” গ্রন্থে (৭৯/২) সনদ ছহীহ। ইবনুল কায়ইম (রহঃ) এটিকে তার “জালাউল আফহাম” গ্রন্থে (১৪-১৫ পৃষ্ঠা) মুহাম্মদ বিন ইসহাক আসসাররাজ, এর হাওয়ালা দিয়েছেন, অতঃপর ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আমি (আলাবানী) বলি, এই শব্দে একত্ৰিত এসেছে إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ অথচ এটাকে ইবনুল কায়ইম (রহঃ) ও তাঁর গুরু (ইবনু তাইমিয়াহ রহঃ) অস্বীকার করেছেন যেমনটি ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে (পৃষ্ঠা ১৬৩-১৬৪) তার প্রতিবাদসহ, সুতরাং এখানে তার পুনরাবৃত্তি নিম্প্রয়োজন।