নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনেকগুলো যিকর ও দুআ পাঠ করতেন। তিনি একেক সময় একেকটি পাঠ করতেনঃ
১ । (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ)
অর্থঃ আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বৰ্ণনা করছি— তিনবার[1] কখনো তিনি তিনবারেরও অধিকবার এই দুআ আওড়াতেন।[2] একবার তিনি এত বেশী শব্দগুলো আওড়ালেন যে তাঁর রুকু কিয়ামের (দাঁড়ানোর) কাছাকাছি হয়ে গিয়েছিল। অথচ তিনি কাউমায় দীর্ঘ তিনটি সূরা পাঠ করতেনঃ তা হচ্ছে ‘বাকারাহ’, ‘নিসা’ ও ‘আলে-ইমরান’। এর মাঝে মাঝে তিনি দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। যেমনটি “রাত্রিকালীন ছালাত” অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
২। (سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِهِ)
অর্থঃ আমি আমার প্রতিপালকের প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনবার।[3]
৩। (سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلائِكَةِ وَالرُّوحِ)
অর্থঃ সকল ফিরিশতা ও জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এর প্রভু অতি বরকতময়[4] পবিত্ৰ।[5]
৪। (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي)
অর্থাৎ “হে আমার উপাস্য আমি তোমার প্রশংসাসহ পর্বত্রতা জ্ঞাপন করছি, হে আমার উপাস্য! তুমি আমাকে ক্ষমা কর।” তিনি কুরআনের উপর আমল করতঃ রুকু ও সাজদাতে এ দু'আটি বেশী বেশী করে পড়তেন।[6]
৫। اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ (أَنْتَ رَبِّي)، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَمُخِّي وَعَظْمِىْ (وفى رواية وَعِظَامِي) وَعَصَبِي وَمَا اسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَمِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার উদ্দেশে রুকু করছি, তোমার উপর ঈমান এনেছি, তোমার উদ্দেশ্যে আত্মসমৰ্পণ করেছি, তুমি আমার প্রতিপালক। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড়, শিরা ও আমার পদযুগল যা কিছু বয়ে এনেছে[7] সবই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সুনির্ধারিত।[8]
৬। اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، وَعَلَيْكَ أنْتَ رَبِّي خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَدَمِىْ وَلَحْمِىْ وَعَظْمِي وَعَصَبِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার উদ্দেশে রুকু করছি, তোমার উপর ঈমান এনেছি, তোমার উদ্দেশে আত্মসমৰ্পণ করেছি, তোমার উপরই ভরসা করেছি, তুমি আমার প্রতিপালক। আমার কান, চোখ, রক্ত, মাংস, হাড় এবং শিরা বিশ্ব প্রতিপালকের জন্য সুনির্দিষ্ট।[9]
৭।سُبْحَانَ ذِي الجَبَرُوتِ، والـمَلَكُوتِ، والكِبْرِيَاءِ، والعَظَمَةِ وهذا قال فى صلاة الليل
অর্থাৎ- হে প্ৰতাপ, রাজত্ব[10] অহংকার ও বড়ত্বের মালিক আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
এ দু'আটি তিনি রাত্রের (নফল) ছালাতে পড়েছেন।[11]
[2] এ কথা ঐসব হাদীছ থেকে বুঝা যায় যেগুলোতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কিয়াম, রুকু ও সাজদা সমান হওয়ার কথা রয়েছে। যেমনটি এই অনুচ্ছেদের পরে আসছে।
[3] ছহীহ, আবু দাউদ, দারাকুতনী, আহমাদ, তাবারানী ও বাইহাকী এটি বর্ণনা করেছেন।
[4] আবু ইসহাক বলেন السبوح তিনি যিনি সর্ব প্রকার অশুভ থেকে মুক্ত। قدوس হচ্ছে বরকতময়, কারো মতে এর অর্থ হচ্ছে- পবিত্র। ইবনু সীদাহ বলেন- سبوح قدوس আল্লাহর গুণবাচক নামের অন্তর্ভুক্ত, কেননা তাঁর পবিত্রতা ও ক্রটি বিমুক্ততা বর্ণনা করা হয়। (লিসানুল আরব)
[5] মুসলিম ও আবু আউয়ানাহ।
[6] বুখারী ও মুসলিম يتأول القران বাক্যটির অর্থ হচ্ছে কুরআনে এ বিষয়ে যা আদেশ করা হয়েছে তার উপর আমল করতেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহর এই বাণীতে فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا অর্থাৎ তাই তুমি স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা কর এবং ক্ষমা চাও, তিনি অবশ্যই তাওবাহ কবুলকারী।
[7] استقلت অর্থঃ বহন করেছে, এটা استقلال থেকে নিৰ্গত- যার অর্থ উঁচু হওয়া। এটা বিশেষের পর সাধারণ বুঝানোর পদ্ধতি মাত্র।
[8] মুসলিম, আবু আওয়ানা, ত্বাহাবী ও দারাকুতনী।
[9] ছহীহ সনদে নাসাঈ।
[10] এখানে الجَبَرُوتِ শব্দটি الجَبَر এর মুবালাগা বা চূড়ান্ত জ্ঞাপক শব্দ যার অর্থ বাধ্যতা, বশ্যতা الـمَلَكُوت শব্দটি الملك থেকে অধিক চূড়ান্ত জ্ঞাপক শব্দ যার অর্থঃ ক্ষমতা, রাজত্ব। অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন চূড়ান্ত বাধ্যতা ও ক্ষমতার অধিকারী।
[11] ছহীহ সনদে আবু দাউদ, নাসাঈ। ফায়েদাহঃ একই রুকুতে এই সবগুলো দুআ পাঠকরা যাবে কিনা? এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। ইবনুল কাইয়িম “যাদুল মা'আদ” কিতাবে দ্বিধা পোষণ করেছেন। ইমাম নববী দৃঢ়তার সাথে প্রথম মত সমর্থন করে বলেনঃ উত্তম হলো যথাসম্ভব সবগুলো দু'আ পাঠ করা। এমনিভাবে সব বিষয়ের দু'আর ক্ষেত্রে এরূপ করা উচিত। তবে আবুত তাইয়িব ছিদ্দীক হাসান খান “নুযুলুল আবরার” (৮৪) কিতাবে উক্ত মতকে অগ্রাহ্য করে বলেনঃ একেক সময় একেকটা পাঠ করবে। সবগুলো একত্রে পড়ার কোন দলীল আমি দেখতে পাইনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একেক সময় একেকটা পাঠ করতেন। (তার) অনুসরণ হবে- নতুন আবিষ্কার অপেক্ষা উত্তম। এটাই হক ইনশাআল্লাহ। কিন্তু হাদীছ দ্বারা এই রুকনাটিসহ অন্যান্য রুকন দীর্ঘায়িত করা প্রমাণিত আছে। যেমন পরবর্তীতে এর আলোচনা আসছে। তাঁর রুকু তাঁর দাঁড়ানোর পরিমাণের কাছাকাছি হয়ে যেত। সুতরাং মুছলী ব্যক্তি যদি এই মতানুযায়ী সবগুলো দু'আ পাঠ ব্যতীত সম্ভব হবে না। আতা ইবনু নাছর “কিয়ামুল্লাইল (৭৬) কিতাবে ইবনু জুরাইজ থেকেও বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আতা থেকে তা বর্ণনা করেছেন। অন্যথায় বার বার পড়ার পন্থা অবলম্বন করতে হবে যা এসব দু'আর কোন কোনটির ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বর্ণনাও করা হয়েছে। আর এটাই সুন্নতের অধিক নিকটবর্তী পন্থা আল্লাহ সমধিক জ্ঞাত।