ফজরের দুরাকাআত সুন্নত ছালাতে তাঁর কিরা’আত অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল।[1] এমনকি ‘আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সন্দেহমূলকভাবে বলতেন যে, তিনি কি আদৌ সূরা ফাতিহা পড়েছেন![2] তিনি কখনো ফাতিহার পর প্রথম রাকাআতে (২ : ১৩৬) আয়াত তথাঃ (قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا) এর শেষ পর্যন্ত পড়তেন।
এবং দ্বিতীয় রাকাআতে (৩ : ৬৪) আয়াত তথাঃ
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ
এর শেষ পর্যন্ত পড়তেন।[3]
আবার কখনো এর (৩ : ৬৪) পরিবর্তে (৩ : ৫২) তথা এই আয়াত (فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ الْكُفْرَ) এর শেষ পর্যন্ত পড়তেন।[4] কখনো প্রথম রাক’আতে (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) (১০৯ : ৬) ও দ্বিতীয় রাক’আতে (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) পড়তেন।[5]
তিনি বলতেনঃ বড়ই ভাল সূরা দুটি।[6]
একবার তিনি এক ব্যক্তিকে প্রথম রাকাআতে প্রথম সূরাটি অর্থাৎ কাফিরুন পড়তে শুনে বললেন এ বান্দাটি স্বীয় রবের প্রতি ঈমান আনতে পেরেছে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাআতে দ্বিতীয় সূরা (ইখলাছ) পড়লে তিনি বললেনঃ এই বান্দাটি স্বীয় রবকে চিনতে পেরেছে।[7]
২। যহরের ছালাত (صلاة الظهر)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যহরের প্রথম দুরাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন এবং সেই সাথে দু'টি সূরাও পড়তেন। দ্বিতীয় রাকাআত অপেক্ষা প্রথম রাকাআত দীর্ঘ করতেন।[8]
কখনো তিনি এ রাকাআতটিকে এত দীর্ঘ করতেন যে, দীর্ঘায়িত করার ফলে ছালাত শুরু হওয়ার পর কোন ব্যক্তি বাকী’ নামক স্থানে গিয়ে তার প্রয়োজন (শৌচকার্য) সেরে বাড়ি এসে উযু করে উপস্থিত হয়েও তাঁকে প্রথম রাকাআতে পেত।[9]
ছাহাবাগণ ধারণা করতেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এমন করার পিছনে এই উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকেরা যেন প্রথম রাকাআত পেয়ে যায়।[10] তিনি প্রথম দুই রাক’আতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করতেন। সূরা আলিফ লাম--তানযীল ‘সাজদাহ’ (২২ : ৩০) এর সমপরিমাণ, এর ভিতর সূরা ফাতিহাও রয়েছে।[11]
তিনি কখনো সূরা “ওয়াসসামাই অতত্বরিক্” বা “ওয়াসসামাই যা-তিল বুরুজ” কিংবা “ওয়াল লাইলি ইযা ইয়াগশা” বা এ জাতীয় অন্য কোন সূরা পাঠ করতেন।[12] তিনি কখনো “ইযাস্ সামা-উন শাক্কাত” বা এজাতীয় সূরাও পাঠ করতেন।[13] ছাহাবাগণ যহর এবং আছরে তাঁর কিরাআত পাঠ অনুভব করতেন দাড়ির নড়াচড়া দেখে।[14]
[2] বুখারী ও মুসলিম।
[3] মুসলিম, ইবনু খুযাইমাহ ও হাকিম।
[4] মুসলিম ও আবু দাউদ।
[5] মুসলিম ও আবু দাউদ।
[6] ইবনু মাজাহ ও ইবনু খুযাইমাহ।
[7] ত্বহাভী, ইবনু হিব্বান স্বীয় “ছহীহ” গ্রন্থে, ইবনু বিশরান, হাফিয ইবনু হাজার একে হাসান বলেছেন।
[8] বুখারী ও মুসলিম।
[9] মুসলিম ও বুখারী “জুযুল কিরাত” গ্রন্থে।
[10] ছহীহ সনদে আবু দাউদ ও ইবনু খুযাইমাহ (১/১৬৫/১)।
[11] আহমাদ ও মুসলিম।
[12] আবু দাউদ, তিরমিযী এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন, অনুরূপভাবে ইবনু খুযাইমাহও (১/৬৭/২)।
[13] ইবনু খুযাইমাহ স্বীয় “ছহীহ” গ্রন্থে (১/৬৭/২)।
[14] বুখারী ও আবু দাউদ।