নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুতরার নিকটবর্তী হয়ে (ছলাতে দাঁড়াতেন। তাঁর ও দেয়ালের মধ্যে তিন হাতের ব্যবধান থাকত।[1] তাঁর সাজদার স্থান ও দেয়ালের মধ্যে একটি বকরী অতিক্রম করার মত ব্যবধান থাকত।[2] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ
لا تُصَلِّ إِلا إِلَى سُتْرَةٍ وَلا تَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْكَ فَإِنْ أَبَى فَلْتُقَاتِلْهُ فَإِنَّ مَعَهُ الْقَرِينَ
সুতরা ব্যতীত ছলাত পড়বে না, আর তোমার সম্মুখ দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দিবে না, যদি সে অগ্রাহ্য করে তবে তার সাথে লড়াই করবে, কেননা তার সাথে কারীন (শয়ত্বন) রয়েছে।[3]
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলতেনঃ
إذا صلّی أحدکم إلی السّترة فلیدن منها لایقطع الشّیطان علیه صلاته
তোমাদের কেউ যখন সুতরার অভিমুখে ছলাত পড়তে দাঁড়ায় তখন যেন তার নিকটবর্তী হয় (যাতে) শয়ত্বান তার ছলাত বিনষ্ট না করতে পারে।[4]
কোন কোন সময় তিনি তার মসজিদে অবস্থিত স্তম্ভের নিকট ছলাত পড়ার চেষ্টা করতেন।[5]
তিনি যখন [মরুভূমিতে ছলাত পড়তেন যেখানে সুতরা (আড়াল) করার কিছুই নেই] তখন তাঁর সামনে একটি বর্শা গেড়ে তার দিকে ছলাত পড়তেন এবং লোকজন তাঁর পিছনে (ছলাত পড়তে) থাকত।[6] আবার কখনো তিনি আড়াআড়িভাবে স্বীয় বাহনকে রেখে ওর দিকে ছলাত আদায় করতেন।[7]
এটা উট রাখার স্থানে ছলাত পড়ার বিধানের বিপরীত।[8] কেননা সেখানে ছলাত পড়তে তিনি নিষেধ করেছেন।[9]
কখনোবা বাহন ধরে তাকে সোজা করে তার পিছনের কাঠ খণ্ডের দিকে ছলাত পড়তেন।[10] তিনি বলতেনঃ
إِذَا وَضَعَ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ مِثْلَ مُؤَخِّرَةِ الرَّحْلِ فَلْيُصَلِّ وَلَا يُبَالِ مَنْ يَمُرُّ وَرَاءَ ذَلِكَ
তোমাদের কেউ যখন বাহনের পিছনের কাঠখণ্ড সদৃশ কোন বস্তু সামনে রাখে তখন এর পিছন দিক দিয়ে কে অতিক্রম করে এর পরোয়া না করে নিঃসঙ্কোচে তার দিকে মুখ করে ছলাত আদায় করবে।[11]
একবার তিনি একটি বৃক্ষের দিকে মুখ করে ছলাত পড়েছেন।[12] কখনোবা তিনি খাট (পালঙ্ক) এর দিকে মুখ করে ছলাত পড়তেন। অথচ আইশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) তার উপর কাৎ হয়ে (স্বীয় চাদরের নীচে) শুয়ে থাকতেন।[13]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার এবং সুতরার মধ্য দিয়ে কোন বস্তুকে অতিক্রম করতে দিতেন না। এক সময় তিনি ছলতে পড়তে ছিলেন হঠাৎ একটি ছাগল তার সম্মুখ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিল। তিনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে তার পেটকে দেয়ালে লাগিয়ে দিলেন (ফলে সে তাঁর পিছন দিয়ে অতিক্রম করে)।[14]
কোন এক ফরয ছলাত পড়াকালীন অবস্থায় স্বীয় হাত জড় করে ফেললেন যখন ছলাত শেষ করলেন ছাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ছলাতে কি কিছু ঘটেছে? তিনি বললেন, না, তবে শয়ত্বান আমার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে চেয়েছিল তাই আমি তার গলা চেপে ধরেছিলাম। এমনকি আমি তার জিহ্বার শীতলতা আমার হাতে অনুভব করেছি। আল্লাহর শপথ তার ব্যাপারে যদি আমার ভাই সুলাইমান (আঃ) আমাকে অতিক্রম না করতেন (অর্থাৎ জ্বিন-শয়তান আয়ত্ব করার ক্ষমতা শুধু তাকে দেয়া হোক এ মর্মে দুআ না করতেন)। তবে তাকে মসজিদের কোন খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হত এমনকি মদীনার শিশুরা তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতা। [সুতরাং যে ব্যক্তির কিবালা ও তার মধ্যে কেউ অন্তরায় না হোক এ ব্যাপারে ক্ষমতা রাখে সে যেন তা করে।]।[15]
তিনি বলেছেনঃ
إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنْ النَّاسِ، فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَدْفَعْ فِي نَحْرِهِ (وليدرأ مااستطاع) (وفى رواية: فليمنعه مرتين) فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ
তোমাদের কেউ যখন এমন বস্তুর দিকে মুখ করে ছলাত পড়ে যা তাকে লোকজন থেকে আড়াল করে। এরপরও কেউ যদি তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে চায় তবে যেন তার বক্ষ ধরে তাকে প্রতিহত করে, (এবং সাধ্যমত তাকে বাধা প্ৰদান করে) অপর বর্ণনায়ঃ তাকে যেন দু’বার বাধা দেয়, তাও যদি সে অমান্য করে তবে যেন তার সাথে লড়াই করে কেননা সে হচ্ছে শয়ত্বান।[16]
তিনি বলতেনঃ
لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيْ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ، لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ، خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ
ছলাত আদায়কারীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কী পরিমাণ (গুনাহ) রয়েছে। তবে চল্লিশ (বৎসর) দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা তার পক্ষে উত্তম (মনে) হত।[17]
[2] বুখারী ও মুসলিম।
[3] ইবনু খুযাইমা স্বীয় “ছহীহ” গ্রন্থে (১/৯৩/১) উত্তম সনদে।
[4] আবু দাউদ, বাযযার (৫৪ পৃঃ যাওয়াইদ) হাকিম; তিনি একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী ও নববী তার সমর্থন দিয়েছেন।
[5] আমি বলিঃ ইমাম ও একাকী উভয়ের ক্ষেত্রেই সুতরা জরুরী। যদিও তা বিশাল মসজিদে হয়। ইবনু হানী ইমাম আহমাদ থেকে স্বীয় মাসা-ইল গ্রন্থে বলেন (১/৬৬)- “আমাকে আবু আবদিল্লাহ (অর্থাৎ ইমাম আহমাদ) একদা আমার সম্মুখে সুতরাবিহীন অবস্থায় ছলাত পড়তে দেখেন, আমি তার সাথে জামে মসজিদে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ কোন কিছু দিয়ে আড়াল কর, আমি একটি লোক দ্বারা আড়াল করলাম।”
আমি বলবঃ এ ঘটনায় এ কথার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইমাম সাহেবের মতে সুতারার বেলায় বড় মসজিদ আর ছোট মসজিদের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। আর এটাই হক কথা । অথচ যতগুলো দেশ ভ্ৰমণ করেছি তাতে দেখেছি অধিকাংশ ইমাম ও মুছল্লীগণ এ বিষয়ে ত্রুটি করেন। ঐসব দেশের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, যা ভ্রমণে প্রথম বারের মত সুযোগ হয়েছিল ১৪১০ হিজরী রজাব মাসে। তাই আলিম সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হবে লোকজনকে এ বিষয়ে অবগত করা, তাদেরকে উৎসাহ দান করা এবং তাদেরকে এর বিধান বর্ণনা করা । আর এ বিধান দুই হারামকেও (অর্থাৎ মক্কা ও মদীনার মসজিদকেও) শামিল করে।
[6] বুখারী, মুসলিম ও ইবনু মাজাহ।
[7] বুখারী ও আহমাদ।
[8] বুখারী ও আহমাদ।
[9] অর্থাৎ উটের বাসস্থান ও গোয়ালে।
[10] মুসলিম, ইবনু খুযাইমাহ (২/৯২) ও আহমাদ।
[11] মুসলিম ও আবু দাউদ।
[12] নাসাঈ ও আহমাদ, ছহীহ সনদে।
[13] বুখারী, মুসলিম, আবু ইয়ালা (৩/১১০৭) আল-মাকতাবুল ইসলামী ফটোস্ট্যাট কপি।
[14] ইবনু খুযাইমা স্বীয় “ছহীহ” (১/৯৫/১) এবং ত্বাবারানী (৩/১৪০/৩) এবং হাকিম তিনি একে ছহীহ বলেছেন আর যাহাবী তার সমর্থন দিয়েছেন।
[15] আহমাদ, দারাকুতুনী ও ত্বাবরানী ছহীহ সনদে। এই হাদীছের মর্ম বুখারী, মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে একদল ছাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে। এটি সেই সব অসংখ্য হাদীছের একটি যেগুলোকে কাদিয়ানীরা অস্বীকার করে। কেননা তারা কুরআন সুন্নাহয় উল্লেখিত জ্বিন (দানব) জগৎকে বিশ্বাস করে না। কুরআন হাদীছের বাণী প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে তাদের কৌশল সবারই জানা। যদি কুরআনের বাণী হয় তবে তার অর্থ পরিবর্তন করে ফেলে যেমন আল্লাহর বাণীঃ (قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ) অর্থঃ বলো (হে নবী!)। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল (কুরআন) শ্রবণ করেছে। তারা বলে জিন অর্থ মানব। তারা “জিনকে” “ইনস” এর সমাৰ্থবোধক গণ্য করে। যেমন “বাশার” শব্দ “ইনস” এর অর্থ দেয়। এ ধরনের অর্থ করার মাধ্যমে তারা অভিধান এবং শরীয়ত থেকে বেরিয়ে আছে । আর যদি তা (দলীল) হাদীছ হয় তাহলে অপব্যাখ্যা দ্বারা পরিবর্তন করা সম্ভব হলে তাই করে। আর তা না হলে একে বাত্ত্বিল বলে দেয়া তাদের নিকট অতি সহজ ব্যাপার- যদিও হাদীছ শাস্ত্রের সব ইমাম এবং তাদের সাথে উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি এর ছহীহ হওয়ার উপর বরং মুতাওয়াতির হওয়ার উপর একমত হয়ে যায়। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দিন ।
[16] বুখারী ও মুসলিম।
[17] বুখারী, মুসলিম ও ইবনু খুযাইমাহ্ (১/৯৪/১)।