নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখনই ছলতে দাঁড়াতেন তখন ফরয হোক আর নফল হোক উভয় অবস্থায়ই কা'বার দিকে মুখ করতেন[1] এবং তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন।

তাইতো ছলাতে ক্ৰটিকারী ব্যক্তিকে তিনি বলেনঃ

إذا قُمْتَ إلَى الصَّلاةِ فَأَسْبغِ الوُضُوءَ، ثم أسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ، فَكَبِّرْ

“যখন তুমি ছলাতে দাঁড়াবে, তখন পরিপূর্ণরূপে উযু করবে, অতঃপর কিবালামুখী হয়ে তাকবীর বলবে।”[2]

তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সফরে স্বীয় বাহনের উপর নফল ছলাত পড়তেন এবং তার উপরে বিতরও পড়তেন, সে তাকে নিয়ে পূর্ব পশ্চিম যেদিকে মন সে দিকে নিয়ে যেত।[3] এ ব্যাপারেই আল্লাহর বাণী নাযিল হয়ঃ (فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ) অর্থঃ তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাওনা কেন সেখানেই আল্লাহর চেহারা বিদ্যমান।[4] আবার (কখনও) স্বীয় উটনীর উপর নফল পড়তে চাইলে তাকে ক্বিলামুখী করে তাকবীর বলতেন, অতঃপর সে যে দিকেই তাঁকে নিয়ে যেত সেদিকেই ছলাত পড়তেন।[5] “তিনি স্বীয় বাহনের উপর মাথার ইঙ্গিত দ্বারা রুকু ও সাজদাহ করতেন, সাজদাহকে রুকুর তুলনায় অধিক নিম্নমুখী করতেন।”[6] “ফরয ছলাত পড়ার ইচ্ছা করলে অবতরণ করে কিবলামুখী হতেন।”[7]

তবে মারাত্মক ভয়ভীতির সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উম্মতের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন যে, তারা স্বীয় পদব্রজে অথবা আরোহী অবস্থায়, কিবলামুখী হয়ে অথবা অন্যমুখী হয়ে ছলাত পড়তে পারবে।[8] তিনি আরো বলেছেনঃ

إِذَا اخْتَلَطُوا فَإِنَّمَا هُوَ التَّكْبِيرُ وَالإِشَارَةُ بِالرَّأْسِ

অর্থঃ যখন তারা (দু'পক্ষ) সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন কেবল তাকবীর ও মস্তকের ইঙ্গিতই যথেষ্ট।[9]

তিনি আরো বলেন,

مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ قِبْلَةٌ

অর্থঃ পূর্ব ও পশ্চিম এর মাঝেই কিবলা রয়েছে।[10]

জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ “আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে কোন সফর বা জিহাদী কাফেলায় ছিলাম। অতঃপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে আমরা কিবলা নিয়ে মতানৈক্যে পড়ে যাই। প্রত্যেকে পৃথকভাবে ছলাত আদায় করি এবং ছলাতের অবস্থান জানার জন্য আমাদের একেকজন নিজের সম্মুখে দাগ কেটে রাখে। পরক্ষণে যখন প্রভাত হল। তখন দাগ দেখলাম তাতে প্রমাণিত হল যে, আমরা কিবলা ভুল করে অন্যদিকে ছলাত পড়েছি। আমরা এ ঘটনা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানালাম, (তিনি আমাদেরকে পুনরায় ছলাত পড়তে বলেননি) বরং বললেনঃ (তোমাদের ছলাত যথেষ্ট হয়েছে)”।[11]

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (কাবাকে সামনে রেখে) বাইতুল মাকদিসের দিকে ছলাত পড়তেন যে পর্যন্ত এই আয়াত অবতীর্ণ হয়নিঃ

قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ

অর্থঃ অবশ্যই (হে নবী) আমি তোমার মুখমণ্ডলকে আকাশ পানে বারবার ফিরাতে দেখছি, আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাকে তোমার পছন্দনীয় কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিব। অতএব, তোমার মুখমণ্ডলকে মাসজিদুল হারামের অভিমুখে ফিরিয়ে দাও।[12]

যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন তিনি কাবামুখী হয়ে গেলেন। কুবাবাসীরা মসজিদে ফজরের ছলাত আদায়রত ছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ এক আগন্তুক এসে বললঃ আল্লাহর রাসূলের উপর গত রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে তাঁকে কাবামুখী হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরাও তার দিকে মুখ ফিরাও। তাদের মুখগুলো তখন সিরিয়ার দিকে ছিল। খবর শ্রবণান্তে তারা সবাই ঘুরে গেল আর ইমামই তাদেরকে নিয়ে (বর্তমান) কিবলার দিকে ঘুরেছিলেন।[13]

[1] এ বিষয়টি বহু সূত্রে অব্যাহত ধারায় চূড়ান্তরূপে জানাশুনা বিধায় উদ্ধৃতি নিষ্প্রয়োজন; এছাড়া যে তথ্য আসছে তাতে এর নির্দেশ রয়েছে।

[2] বুখারী, মুসলিম, সাররাজ। প্রথমটি “আল-ইরওয়া” কিতাবে এসেছে (২৮৭)।

[3] প্রাগুক্ত।

[4] ইমাম মুসলিম এটা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী একে ছহীহ বলেছেন।

[5] আবু দাউদ, ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” এর (১/১২) পৃষ্ঠায়, যিয়া “আল-মুখতারাহ” তে হাসান সনদে এটা বৰ্ণনা করেছেন আর ইবনুস্ সাকান একে ছহীহ বলেছেন, ইবনুল মুলাক্বকিনও “খুলাসাতু বাদরুল মুনীর” এর (১/২২) তে একে ছহীহ বলেছেন। আবার আব্দুল হক আল ইশবিলী তাদের পূর্বেই তাঁর “আহকাম” কিতাবে ছহীহ বলে রেখেছেন যা আমার যাচাইকৃত মুদ্রণের (১৩৯৪ নং হাদীছ) ইবনু হানী ইমাম আহমাদ থেকে তাঁর “মাসাইল” গ্রন্থের (১/৬৭) পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন তাতে ইমাম আহমাদের মতও এটাই।

[6] আহমাদ, তিরমিযী; তিরমিযী একে ছহীহ বলেছেন।

[7] বুখারী ও আহমাদ।

[8] বুখারী ও মুসলিম। এ হাদীছটি “আল ইরওয়া” ৫৮৮ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হয়েছে।

[9] বুখারী ও মুসলিমের সনদে বাইহাকী।

[10] তিরমিযী, হাকিম; তারা উভয়ে একে সহীহ বলেছেন। আমি মানারুস সাবীল কিতাবের তাখরীজ বা হাদীছ যাচাইমূলক উদ্ধৃতি গ্রন্থ “ইরওয়াউল গালীল” এর ২৯২ নং হাদীছে উল্লেখ করেছি।

[11] দারাকুতনী, হাকিম, বায়হাকী, তিরমিযী ও ইবনু মাজহতে এর সাক্ষ্য মূলক বর্ণনা রয়েছে, অপর আরেক সাক্ষ্য ত্বাবরানীতে রয়েছে “আল-ইরওয়া” ২৯৬৷

[12] সূরা আল-বাক্বারা ১৪৪ আয়াত।

[13] বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, আসসাররাজ ও ত্বাবরানী (৩/১০৮/২), ইবনু সা'দ (১/২৪৩), এটা আল ইরওয়া (২৯০)-তে রয়েছে।