বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
সকল প্ৰশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি তার বান্দাদের উপর ছলাত ফরয করেছেন এবং তাদেরকে এটি প্রতিষ্ঠিত করার ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাকে খুশু খুযুর সাথে আদায় করার মধ্যে সফলতা নিহিত করেছেন। ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী এবং নির্লজ্জতা ও অন্যায় কাজ থেকে বারণকারী বলে গণ্য করেছেন।
ছলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যাকে আল্লাহ তা’আলা এই বলে সম্বোধন করেছেনঃ
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ
অর্থঃ আমি (আল্লাহ) আপনার প্রতি যিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যাতে করে আপনি মানুষকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা করে দেন। [1]
তিনি এই দায়িত্বকে পুঙ্খাপুঙ্খরূপে পালন করে গেছেন। তিনি মানব জাতির জন্য কথা ও কাজের মাধ্যমে যেসব বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে ছলাত। একদা তিনি মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে এবং রুকু করে ছলাত পড়েন। অতঃপর (ছাহাবাদেরকে) বলেনঃ “আমি এমনটি করলাম। এজন্য যাতে করে তোমরা আমার অনুকরণ করতে পার এবং আমার ছলাত শিখতে পারো।” [2]
তিনি আমাদের উপর তাঁর অনুসরণ করা ওয়াজিব করেছেন। তাঁর বাণী
হচ্ছেঃ صلوا کما رایتموني أصلي অর্থঃ তোমরা আমাকে যেভাবে ছলাত পড়তে দেখ ঠিক সেভাবে ছলাত পড়া।” [3]
যে ব্যক্তি তাঁর ছলাতের মত ছলাত পড়বে তাকে তিনি সুসংবাদ দিয়েছেন এ মর্মে যে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্ৰবেশ করাবেন বলে ওয়াদা করেছেন যেমন তিনি বলেনঃ
خمس صلوات افترضهن الله تعالى، من احسن وضوءهن وصلاتهن لوقتهن، واتم ركوعهن وخشوعهن كان له عهد على الله ان يغفر له، ومن لم يفعل فليس له عهد على الله إن شاء غفر له وإن شاء عذبه
অর্থঃ মহান আল্লাহ পাঁচ (ওয়াক্ত) ছলাত ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলোর জন্য উযু সুন্দরভাবে সম্পাদন করবে, আর ঠিক সময় মত তা আদায় করবে, এর রুকু, সাজদা ও খুশু-খুযু (বিনয়ভাব) পূর্ণমাত্রায় পালন করবে, আল্লাহ তার ব্যাপারে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন, আর যে এমনটি করবেনা তার ব্যাপারে আল্লাহর কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন। আর তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন।[4]
আরো দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পুণ্যবান মুত্তাকী ছাহাবাদের উপর যারা আমাদের জন্য তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবাদত, ছলাত, কথা এবং কাজগুলোর বিবরণী সংকলন করেছেন আর কেবল এগুলিকেই তাদের মাযহাব ও আদর্শ হিসাবে গণ্য করেছেন। এমনিভাবে যারা তাদের মত কাজ করবে ও তাদের পথ ধরে চলবে প্ৰলয়কাল পর্যন্ত; তাদের উপরও বর্ষিত হোক দারুদ ও সালাম।
অতঃপর আমি যখন হাফিয মুনযিৱী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর “আত-তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থের ছলাত অধ্যায়ের পঠন ও কিছু সালাফী ভাইদেরকে এর পাঠ দান শেষ করলাম- যা চার বৎসর যাবৎ চলেছিল- এ থেকে আমাদের প্রত্যেকের কাছে ইসলামে ছলাতের অবস্থান ও মর্যাদা সুস্পষ্ট হয়ে যায়। আরও জানতে পারি, যে ব্যক্তি একে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবে তার জন্য কি প্রতিদান, মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলতের সাথে এর মিল ও গরমিলের উপর পারিতোষিকে কম বেশি হয়। যেমন তিনি হাদীছে বলেন,
إِنَّ الْعَبْدَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ مَا يُكْتَبُ لَهُ مِنْهَا إِلَّا عُشْرُهَا تُسْعُهَا ثُمُنُهَا سُبُعُهَا سُدُسُهَا خُمُسُهَا رُبُعُهَا ثُلُثُهَا نِصْفُهَا
অর্থঃ নিশ্চয়ই (কিছু) বান্দাহ এমন ছলাতও পড়ে যার বিনিময়ে তার জন্য কেবল ছলাতের এক দশমাংশ, নবমাংশ, অষ্টমাংশ, সপ্তমাংশ, ষষ্ঠাংশ, পঞ্চমাংশ, চতুর্থাংশ, তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ লিখিত হয়।[5]
এজন্যই আমি ভ্ৰাতৃমণ্ডলীকে অবহিত করেছিলাম যে, এই ছলাতকে যথাযোগ্য বা তার কাছাকাছি রূপে সম্পন্ন করা আদৌ সম্ভব নয় যতক্ষণ না রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলাত সম্পাদন পদ্ধতিকে বিশদভাবে জানতে পারব, যেমন ছলাতের ওয়াজিব ও আদাবসমূহ, তার অবস্থাদি, দু'আ ও যিকরসমূহ, তারপর বাস্তব জীবনে এগুলোকে রূপায়নে মনোযোগী হব। এসবের পর আমরা আশা করতে পারি যে, আমাদের ছলাত আমাদেরকে নির্লজ্জ কাজ ও অন্যায় থেকে বিরত রাখবে এবং ছলাতের বিনিময়ে যেসব ছওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে আমাদের জন্যে তা লিখা হবে। কিন্তু এসবের বিস্তারিত জ্ঞান লাভ বেশিরভাগ লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার এমনকি অনেক আলিমদের উপর তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়- নির্দিষ্ট কোন মাযহাবে আবদ্ধ থাকার কারণে। আর পবিত্র সুন্নাহ (হাদীছ) গ্রন্থের সেবা, সংকলন, অধ্যয়ন ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি মাত্রই একথা জানেন যে, প্রত্যেক মাযহাবেই কিছু এমন সুন্নাত রয়েছে যা অন্য মাযহাবে নেই, আর সমস্ত মাযহাবের মধ্যেই কিছু কথা ও কাজ এমন রয়েছে যেগুলির সম্বন্ধ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দিকে বিশুদ্ধরূপে সাব্যস্ত নয়। এইসব অশুদ্ধ হাদীছ বেশির ভাগই পরবর্তীদের (মুতাআখখিরীনদের) কিতাবাদিতে পাওয়া যায়।[6]
আমরা প্রায়ই তাদেরকে এ হাদীছকে দৃঢ়তার সাথে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দিকে সম্বন্ধ করতে দেখতে পাই।[7] তাই হাদীছ বিশারদগণ (আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন)-এসব কিতাবাদির কিছু প্ৰসিদ্ধ কিতাবের উপর অনুসন্ধান ও যাচাইমূলক কিছু গ্ৰন্থ রচনা করেন যা উক্ত কিতাবসমূহে উদ্ধৃত হাদীছগুলির ছহীহ, যাঈফ ও জাল হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে বলে দেয়। যেমনঃ আল-ইনায়াতু বিমা’রিফাতি আহাদীসুল হিদায়া (হিদায়ার হাদীছ অনুসন্ধানমূলক কিতাব আল-ইনায়াহ) গ্রন্থ এবং الطرق والوسائل فی تخریج احاديث خلاصة الدلائل (খুলাছাতুদ্দালায়িল গ্রন্থের হাদীছ অনুসন্ধানের গ্রন্থ আত্তুরুকু অল ওয়াসায়িল) রচিত হয়েছে উভয়টাই শাইখ আব্দুল কাদির বিন মুহাম্মদ আল কুরাশী আল হানাফীর প্রণীত, আরো রয়েছে হাফিয যায়লাঈর (হিদায়ার হাদীস অনুসন্ধানের কিতাব) نصب الراية لأحاديث الهداية হাফিয ইবনু হাজার আল আসকালানী কর্তৃক এরই সংক্ষেপায়িত গ্ৰন্থ “আদ-দিরায়া”। তাঁরই রয়েছে “রাফিঈল কাবীর” গ্রন্থের হাদীছ অনুসন্ধানের গ্রন্থ التلخيص الجبير فى تخريج احاديث الرافعى الكبير
এছাড়াও আরো অনেক গ্ৰন্থ রয়েছে যা উল্লেখ করতে গেলে কথা দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। আমি বলতে চাইঃ যেহেতু ছলাতের বিস্তারিত জ্ঞান লাভ বেশীর ভাগ লোকের উপর কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তাই আমি তাদের জন্য এই গ্ৰন্থ সংকলন করলাম যাতে করে তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলাত পদ্ধতি জানতে পারে ও ছালাতে তার নির্দেশনা মেনে চলতে পারে। আল্লাহর কাছে তারই আশা রাখি যার অঙ্গীকার তিনি তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যাবানিতে আমাদের দিয়েছেন এই হাদীছেঃ
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى, كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ, لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا
অর্থঃ যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্যে এর পালনকারীদের সমপরিমাণ পুণ্য রয়েছে, এতে তাদের (পালনকারীদের) পুণ্য থেকে কিছুই কমবে না। (মুসলিম ও অন্যান্য, এটা সিলসিলা সহীহাহ ৮৬৩ পৃষ্ঠাতেও উদ্ধৃত হয়েছে।
[1] সূরা নাহল ৪৪ আয়াত
[2] বুখারী ও মুসলিম; ছলাতের কিয়াম সম্পর্কে আলোচনায় হাদীছটি পূর্ণাঙ্গভাবে উল্লেখ করা হবে।
[3] বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ। হাদীছটি ইরওয়াউল গালীল কিতাবে ও ২১৩ নং হাদীছের অধীনে উদ্ধৃত হয়েছে।
[4] লিখক বলেন, এটি ছহীহ হাদীছ, একে একাধিক ইমাম ছহীহ বলেছেন, আমি একে ছহীহ আবু দাউদের (৪৫১ ও ১২৭৬) নম্বরে উদ্ধৃত করেছি।
[5] হাদীছটি ছহীহ, ইমাম ইবনুল মুবারক এটাকে “আয-যুহদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আবু দাউদ ও নাসাঈ উত্তম সনদে তা বর্ণনা করেছেন। আমি (লিখক) 'ছহীহ আবু দাউদে (৭৬১) নম্বরে তা উদ্ধৃত করেছি।
[6] আবুল হাসানাত লক্ষনৌভি স্বীয় কিতাব النافع الكبير لمن يطالع الجامع الصغير এর মধ্যে হানাফী ফিক্বহের কিতাবসমূহের শ্রেনী বিন্যাস করে কোনটা নির্ভরযোগ্য আর কোনটা নির্ভরযোগ্য নয় তা উল্লেখ করে বলেন, (১২২-১২৩ পৃঃ) “আমি কিতাবাদির যে শ্ৰেণীবিন্যাস উল্লেখ করেছি তা ফিকহী মাসআলা ভিত্তিক ছিল। তবে যদি এতে সন্নিবেশিত হাদীছগুলোর আলোকে বিবেচনা করা যায়, তাহলে এই শ্রেণী বিন্যাস ঠিক থাকবে না। কারণ কতক কিতাব এমন রয়েছে যেগুলোর উপর সুযোগ্য ফুকাহাগণ নির্ভরশীল ছিলেন। অথচ তা বানোয়াট (জাল) হাদীছ দ্বারা ভরপুর। বিশেষ করে ফাতওয়ার কিতাবগুলো যাতে প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে একথাই আমাদের সামনে স্পষ্ট হয় যে, এ সবের রচয়িতারা যদিও (ফিকাহ বিষয়ে) পরিপক্ক কিন্তু তারা হাদীছ বৰ্ণনার ক্ষেত্রে শিথিল৷”
আমি (আলাবানী) বলছিঃ যোগ্যতম আলিমদের কিতাবে বিদ্যমান এসব জাল বরং বাত্বিল হাদীছের মধ্যে রয়েছেঃ
من قضی صلوات من الفرائضں فی آخر جمعة من رمضان کان ذلك جابرا لکل صلاة فاتته فى عمره إلى سبعين سنة
অর্থঃ যে ব্যক্তি রামাযানের শেষ জুমুআয় বাদ পড়া কয়েক ওয়াক্ত ফরয ছলাত কাযা পড়বে তার জীবনের ৭০ বৎসর পর্যন্ত ছুটে যাওয়া ছলাতের জন্য সম্পূরক হবে। লক্ষীেভী (রাহিমাহুল্লাহ) “আল আসার আল মারফু’আত ফিল আখবারিল মাওযূ’আত” কিতাবে (উক্ত) হাদীছ উল্লেখ করে বলেনঃ (৩১৫ পৃঃ)- আলী আল ক্বারী তার “আল মাওযূ’আতিস সুগরা” ও “আল মাওযূ’আতিল কুবরা” কিতাবে বলেনঃ এটা সুনিশ্চিত বাতিল হাদিস, কেননা এটা ইজমার পরিপন্থী। যেহেতু কোন ইবাদত বহু বৎসর যাবৎ ছুটে যাওয়া ছলাতের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। তাছাড়া আন-নিহায়াহ গ্রন্থের লিখকসহ হিদায়াহ গ্রন্থের অন্যান্য ভাষ্যকারদের উদ্ধৃতি ধর্তব্য নয় কেননা তারা মুহাদ্দিছদের অন্তর্ভুক্ত নয়, আবার (এখানে) কোন হাদীছবেত্তার প্রতি তাঁরা এর সম্বন্ধও করেননি।
শওকানীর “আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ’আহ ফিল আহাদীসিল মাওযূ’আহ” কিতাবে এ হাদীছটি উপরোক্ত শব্দের কাছাকাছি শব্দে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেনঃ “নিঃসন্দেহে এটি জাল হাদীছ আমি এটিকে ঐসব কিতাবাদিতে পাইনি যার লিখকগণ তাতে মাউযু হাদীছ সন্নিবেশিত করেছেন। তবে এটা বর্তমান যুগের “সান’আ” শহরের একদল ফকীহদের কাছে প্ৰসিদ্ধি লাভ করেছে আর তাদের অনেকেই এর উপর আমল করতে শুরু করেছে। আমার জানা নেই কে তাদের জন্য এটা বানিয়েছে। আল্লাহ মিথ্যুকদের অপদস্ত করুন।” (উদ্ধৃতি শেষ) ৫৪ পৃষ্ঠা।
অতঃপর লক্ষোভী বলেনঃ আমি হাদীছটি (জাল হওয়া সত্ত্বেও)। দৈনন্দিন নিয়মিত পঠিতব্য অষীফাহ, যিকর ও দু'আর বইসমূহে সংকলন ভিত্তিক ও বিবেক ভিত্তিক প্রমাণাদিসহ দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত শব্দে পাওয়া যায়। তাই তার জাল হওয়ার ব্যাপারে একটি পুস্তিকা রচনা করেছি। যার নাম হচ্ছেঃ (ردع الإخوان عن محدثات آخرجمعة رمضان) উক্ত পুস্তিকায় অনেক উপকারী কথা সন্নিবেশিত করেছি। যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক প্রখর হবে এবং যেগুলো কান পেতে শুনার মত। তাই এ নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত যেহেতু এ বিষয়ে তা অতি সুন্দর ও মানগত দিক দিয়ে উন্নত।
আমি (আলাবানী) বলছিঃ ফিকহের কিতাবগুলোতে এ ধরনের বাত্বিল হাদীছ উদ্ধৃত হওয়ায় তাতে বিদ্যমান ঐসব হাদীছের বিশ্বস্তুত হারিয়ে দেয় যেগুলোকে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়নি। আলী আল কারীর বক্তব্যে একথার প্রতিই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত হবে হাদীছকে তার শাস্ত্রীয় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে গ্রহণ করা। তাইতো অতীতের লোকেরা বলেছেনঃ “মক্কাবাসীগণ মক্কার রাস্তাঘাট সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত"। আর "ঘরের মালিক তাতে অবস্থিত জিনিস সম্পর্কে সমধিক অভিজ্ঞ।”
[7] ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) “আলমাজমূ শারহিল মুহাযযাব” এর প্রথম খণ্ডের ৬০ পৃষ্ঠায় বলেন যা সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ
আহলুল হাদীছ ও অন্যান্য মুহাক্কিক বিদ্বানগণ বলেনঃ যঈফ হাদীছের ব্যাপারে একথা বলা যাবে না যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন অথবা তিনি করেছেন অথবা আদেশ দিয়েছেন বা নিষেধ করেছেন ইত্যাদি। দৃঢ়তামূলক শব্দসমূহ। বরং এসব ক্ষেত্রে শুধু দুর্বলতামূলক শব্দ যেমন রসূল থেকে বর্ণনা করা হয়েছে বা উদ্ধৃত হয়েছে ইত্যাদি। তারা বলেনঃ দৃঢ়তা জ্ঞাপক শব্দাবলী ছহীহ ও হাসান হাদীছের জন্য প্রযোজ্য আর দুর্বলতা জ্ঞাপক শব্দগুলো অন্যান্য হাদীছের বেলায় প্রযোজ্য। আর তা এজন্য যে, দৃঢ়তা জ্ঞাপক শব্দ সম্বন্ধকৃতের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ হওয়ার দাবী রাখে, তাই বিশুদ্ধ হাদীছ ছাড়া এ শব্দের প্রয়োগ অনুচিত। অন্যথায় মানুষ রাসূলের উপর মিথ্যারোপকারীর শামিল হবে। অথচ এই আদব রক্ষায় মুহাযযাবের লিখকসহ আমাদের (শাফিয়ীদের) ও অন্যান্য মাযহাবের অধিকাংশ ফুকাহাগণ ক্ৰটি করেছেন। বরং ঢালাওভাবে প্রত্যেক শাস্ত্রের পণ্ডিতগণ এতে ক্ৰটি করেছেন। কেবল হাদীছ শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞগণ এথেকে বেঁচে গেছেন। এটা জঘন্য ধরনের শিথিলতা। কারণ তারা প্রায়ই ছহীহ হাদীছের ক্ষেত্রে বলে থাকে- রাসূল থেকে বর্ণিত হয়েছে, আর যঈফ হাদীছের ক্ষেত্রে বলেন অমুক বর্ণনা করেছেন। এটা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওারই নামান্তর।