“আর আল্লাহ্ মুত্তাকীকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যে সে তা কল্পনাও করতে পারবে না। (৬৫-সূরা আত তালাকঃ আয়াত-৩)
তানুখী তার ‘আলফারাজু বা’দাশশিদ্দাহ’ নামক পুস্তকে একটি গল্প বলেছেন। এক লোক চরম দরিদ্র অবস্থায় পড়ে। তার সামনে সচ্ছলতার সকল দ্বার শক্তভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একদিন তার অবস্থা এতই ভয়ানক হয়ে গিয়েছিল যে, তার ও তার পরিবারের খাওয়ার মতো কোন কিছু ঘরে ছিল না। পরে সে বলেছিল “প্রথম দিন আমরা ক্ষুধার্ত কাটালাম। দ্বিতীয় দিনও একইভাবে কাটল এবং সূর্য যখন ডুবুডুবু তখন আমার স্ত্রী আমাকে বলল, বের হয়ে দেখ আমাদের খাওয়ার জন্য কোন কিছু পাও কি-না, কেননা, আমরা মরতে বসেছি প্রায় ।
আমার এক আত্মীয়ার কথা আমার মনে পড়ল এবং তার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। তার সাথে সাক্ষাৎকালে আমি আমাদের করুণ অবস্থার কথা জানালাম। সে বলল যে, একটি পঁচা মাছ ছাড়া তাদের ঘরে আর কিছু নেই। তা সত্বেও (এটা পঁচা হওয়া সত্বেও) আমাদেরকে এটা দেয়ার জন্য আমি তাকে বললাম। যেহেতু আমরা না খেয়ে মরতে বসেছিলাম প্রায়। আমার সাথে করে আমি এটাকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম এবং আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম কেননা এটাকে কাটার পর এটার পেটে আমি একটি মুক্তা পেলাম।
আমি এ মুক্তাটিকে কয়েক হাজার দীনারে বিক্রি করলাম এবং যা ঘটেছিল তা আমি আমার আত্মীয়কে জানালাম। সে বলল যে, সে এর অংশ নেবে কিন্তু পুরোটা নেবে না। এ ঘটনার পর আমার অবস্থা খুবই উন্নত হয়ে গেল এবং লভ্যাংশ দিয়ে আমি আমার ঘরকে সাজালাম। আর আমি বুঝতে পারলাম যে, এটা আল্লাহর রহমত ছিল, অন্য কিছু নয়।” আর তোমাদের নিকট যত নেয়ামত আছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই।”
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ
“(তখনকার কথা স্মরণ কর) যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য চাচ্ছিলে ফলে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন।” (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-৯)
“এবং তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-২৮)
এক ধাৰ্মিক ইবাদত গুজার ব্যক্তি যখন তার পরিবারসহ মরুভূমিতে ছিলেন তখন যা ঘটেছিল তা তিনি আমার নিকট বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন-
“আমরা মরুভূমিতে থাকাকালে আমাদের পানি ফুরিয়ে যায়। আমি পানির খোঁজে বের হয়ে পড়লাম ও দেখতে পেলাম যে, আমাদের নিকটবর্তী অতি ছোট নদীটিও শুকিয়ে গেছে। আমি চতুর্দিকে অনবরত পানি খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু একফোটা পানিও আমি খুঁজে পেলাম না। এরপর অচিরেই আমরা পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লাম। আমার সন্তানেরা কোন কিছু পান করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। দুর্দশাগ্রস্থের ডাকে যিনি সাড়া দেন আমি আমার সে প্রভুকে স্মরণ করলাম। আমি উঠে দাঁড়ালাম ও বালু দিয়ে তায়াম্মুম করে কেবলামুখী হয়ে দুরাকাত সালাত পড়লাম। তারপর আমি আমার হাত উঠিয়ে কান্না করলাম। যখন আমি আল্লাহর নিকট সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন করছিলাম তখন আমার চোখের পানি প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছিল। এখন আমার মনে পড়ছে যে, নিম্নোক্ত আয়াতটি বারবার আমার মনে পড়েছিলঃ
(তারা যাদেরকে শরীক করে সেসব দেবতারা ভালো?) না কি তিনি ভালো যিনি দুর্দশাগ্রস্তের ডাকে তখন সাড়া দেন যখন সে তাকে ডাকে? (২৭-সূরা আন নামলঃ আয়াত-৬২)
আর আল্লাহর কসম, যেই আমি আমার সালাতের স্থান থেকে উঠে দাড়ালাম অমনিই মরুভূমিতে ঠিক আমাদের স্থানেই এক খণ্ড মেঘ ধেয়ে আসল (অথচ সেখানে আকাশে কোন মেঘ ছিল না।) এটা ঠিক আমাদের উপরেই থামল এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হতে লাগল। আমাদের পাশের চক্রাকার ছোট নদীটি আবার ভরে গেল। আমরা পানি পানি করলাম, গোসল করলাম ও অযু করলাম। একটু পরেই আমি যে স্থানে বৃষ্টি হয়েছিল সে স্থান থেকে অন্যস্থানে গেলাম এবং দেখতে পেলাম যে চতুস্পার্শ্বের এলাকা ছিল শুষ্ক উষর; আমরা যেখানে ছিলাম কেবলমাত্র সেখানেই বৃষ্টি হয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার প্রার্থনার উত্তরে আল্লাহ্ আমাদের জন্য মেঘ এনে দিয়েছিলেন, তাই আমি তার প্রশংসা করলাম।”
“আর তারা নিরাশ হয়ে যাবার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং (তিনিই) তার করুণাকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেন, আর তিনি হলেন অভিভাবক ও প্রশংসার যোগ্য। (৪২-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহঃ আয়াত- ২৮)
অধ্যবসায়ের সাথে বা ধৈর্য সহকারে আল্লাহর নিকট আমাদেরকে সাহায্য চাইতে হবে; কেননা, একমাত্র তিনিই তার বান্দাদের জন্য হেদায়াত ও সাহায্যের আঞ্জাম দিতে পারেন। আল্লাহ্ তার একজন রাসূলের কথা উল্লেখ করে বলেছেন-
وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
“আর আমি তার স্ত্রীকে সুস্থ করে দিলাম (যাতে সে সন্তান ধারণ করতে পারে)। নিশ্চয় তারা নেক কাজে প্রতিযোগিতা করত এবং আশা ও ভয়ের সাথে তারা আমাকে ডাকত এবং আমার জন্য তারা বিনীত থাকত।” (২১-সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত-৯০)