সুন্দরভাবে বিছানা ছেড়ে উঠতে হলে ও সুন্দরভাবে দিনের শুরু করতে হলে স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে মুচকি হাসা এবং স্ত্রীরও অনুরূপ করা উচিত। এ হাসি হল সন্তুষ্টি ও আপস-মীমাংসার প্রাথমিক ঘোষণা।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تبسمك في وجه اخيك صدقة
ভাবাৰ্থঃ “আর তোমার ভাইয়ের মুখের সামনে তোমার মুচকি হাসি সদকা স্বরূপ।”
আর আল্লাহর রাসূলের মুখে সদা হাসি ফুটে থাকত।
“তোমরা একে অপরকে সালাম দাও, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক অভিবাদন যা বরকতময় (মোবারক) ও পবিত্র।” (২৪-সূরা আন নূরঃ আয়াত-৬১)
“যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় তখন তোমরা এর চেয়ে উত্তম অভিবাদন কর অথবা এর অনুরূপ উত্তর দাও।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৮৬)
আর ঘরে প্রবেশ করার সময় নিম্নোক্ত দু’আ পড়তে হয়
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا بِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا
ভাবাৰ্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উত্তম প্রবেশ ও উত্তম প্রস্থান কামনা করি, আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি এবং আল্লাহর নামেই আমরা বের হই এবং আমাদের প্রভু আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করি।”
বন্ধু সুলভ ঢংয়ে কথা বলেও বাড়িতে সমঝোতার সৃষ্টি হয়।
“আমার বান্দাদেরকে যা সর্বোত্তম বা সবচেয়ে ভালো তা বলতে বল।” (১৭-সূরা বনী ইসরাইলঃ আয়াত-৫৩)
এমন যদি হতো যে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উভয়ের দোষক্ৰটি ভুলে গিয়ে একে অপরের গুণের কথাই মনে রাখত। স্বামী যদি স্ত্রীর দোষের কথা ভুলে গিয়ে (শুধুমাত্র) তার গুণের কথাই মনে রাখে তবে সে সুখ-শান্তি পাবে। একজন আরব কবি বলেছেন-
من ذا الذي ما ساء قط ٭ ومن له الحسنى فقط
ভাবাৰ্থঃ “এমন কে আছে যে কখনও ভুল করেনি? আর এমন কে-ই-বা আছে যে শুধুমাত্র কল্যাণেরই অধিকারী?”
“আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারত না। কিন্তু, আল্লাহু যাকে ইচ্ছা তাকে পবিত্র করেন। আর আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” (২৪-সূরা আল কাসাসঃ আয়াত-২১)
ছোট খাট ব্যাপারই অধিকাংশ পারিবারিক সমস্যার কারণ এবং আমি নিজেই এমন অনেক বিবাহ ভেঙ্গে যেতে দেখেছি যেগুলো আপোষ-মীমাংসার অসাধ্য বিবাদের কারণে ভেঙ্গে গেছে তা নয়, বরং ছোট-খাট গুরুত্বহীন কারণে তা ভেঙ্গে গেছে। এ ধরনের একটি পারিবারিক বিবাদ বেঁধেছিল ঘর পরিস্কার ছিল না বিধায়; আরেকটি বাধে সময়মতো খাবার রান্না হয়নি বিধায়, অন্য আরো একটা ঝগড়ার কারণ ছিল স্বামীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অত্যধিক সংখ্যায় মেহমান আসার কারণে স্ত্রীর আপত্তি।
এসব ও অন্যান্য সমস্যার একটি তালিকা পারিবারিক সম্পর্কচ্ছেদ- যা সন্তান-সন্ততিদেরকে মাতা-পিতাহীন করে- তার সমাপ্তি ঘটাতে পারে।
আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক হলো বাস্তব জগতে বাস করা (বিশেষ করে দম্পতির ব্যাপারে) এবং কল্পরাজ্যের স্বপ্ন না দেখা এবং ঘরেই কল্পরাজ্যকে অনুভব করা। মানুষ হিসেবে আমরা রাগাম্বিত, খিটখিটে দুর্বল হতে পারি এবং ভুল করতে পারি। অতএব আমরা যখন পারিবারিক কল্যাণ সম্বন্ধে কথা বলি বা পারিবারিক কল্যাণ চাই তখন আপেক্ষিক বা তুলনামূলক সুখের কথা আমাদের মনে রাখা উচিত- পরিপূর্ণ সুখের কথা বা পরম সুখের কথা (মনে রাখা উচিত) নয়।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অমায়িক স্বভাব ও উত্তম সাহচর্যের কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বলেছিলেন “সে চল্লিশ বছর আমার সঙ্গীনি ছিল, কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও তার সাথে আমার কখনও মনোমালিন্য হয়নি।”
স্ত্রী যখন রাগাম্বিত হয় স্বামীকে তখন অবশ্যই শান্ত থাকতে হবে এবং এর বিপরীত (স্বামী রাগাম্বিত হলে স্ত্রীকে অবশ্যই চুপ থাকতে হবে), কমপক্ষে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ রাগ না কমে ও ঝড় না থামে।
ইবনুল জাওযী তাঁর রচিত ‘ছইদুল খাতির (صيد الخاطر)’ নামক কিতাবে বলেছেন- “আপনার সঙ্গী যখন আপনাকে অন্যায় কোন কিছু বলে তখন এটাকে খুব কঠিনভাবে আপনার গ্রহণ করা উচিত নয়। তার অবস্থা মাতাল লোকের মতো যে— কী বলছে সে বিষয়ে সে বেখবর। এর বদলে আপনি অল্প সময় ধৈর্য ধারণ করুন। আপনি যদি তার সাথে কঠোর ভাষায় কথা-কাটা কাটি করেন তবে আপনি তো সেই সুস্থ ব্যক্তির মতো হলেন যে নাকি পাগলের উপর প্রতিশোধ নিতে চায় অথবা সেই সচেতন লোকের মতো হলেন যে নাকি অচেতন লোকের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চায়। তার কাজের জন্য তার দিকে দয়া-মায়ার দৃষ্টিতে তাকান।”
জেনে রাখুন যখনই সে তার অবস্থা থেকে জেগে উঠবে তখনই সে যা ঘটেছে তার জন্য অনুতপ্ত হবে এবং আপনার ধৈর্যের জন্য আপনার মূল্য বুঝতে পারবে। আপনাকে বিশেষ করে তখন ধৈর্য ধরতে হবে যখন ক্রুদ্ধ ব্যক্তি দম্পতির একজন বা মাতা-পিতার কেউ হন। তারা যতক্ষণ শান্ত না হন ততক্ষণ তাদেরকে তাদের যা মনে চায় তা বলতে দিন এবং তাদেরকে তাদের কথার জন্য দায়ী মনে করবেন না। ক্রুদ্ধ ব্যক্তির সাথে রাগ করা হলে তার রাগ কমবে না। এমনকি তার মাতলামি অবস্থা চলে গেলেও না।