“এটা মু’মিনদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা আনন্দ করে। কিন্তু যাদের অন্তরে রোগ আছে এটা তাদের কলুষতার সাথে আরো কলুষতা যোগ করে এবং তারা কাফের অবস্থায় মারা যায়।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-১২৪, ১২৫) (এখানে কলুষতা বলতে সন্দেহ, কুফরি ও মোনাফেকী বুঝায়।)
আগেকার ধাৰ্মিক মুসলমানগণ কোন জটিল-কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হলে আশাপ্রদ মনোভাব নিয়ে থাকতেন। এ হিসেবে আশাপ্রদ মনোভাব নিয়ে থাকতেন যে, তারা জানতেন যদিও তারা সংকটের মোকাবিলা করছেন তবুও তাদের কিছু সুবিধা পাওয়ার কথা, কিছু ক্ষতি দূর হওয়ার কথা এবং কালের আবর্তে (কালক্রমে) তাদের শান্তি, স্বস্তি ও আরামের সাক্ষাৎ পাওয়ার ছিল (এবং তা পেয়েছেনও বটে)।
“সম্ভবত তোমরা এমন জিনিস অপছন্দ কর, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং সম্ভবত তোমরা এমন জিনিস পছন্দ কর, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২১৬)
আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন, “আমি এমন তিনটি জিনিসকে ভালোবাসি, যা মানুষেরা অপছন্দ করে; আমি দারিদ্র, অসুস্থতা ও মৃত্যুকে ভালোবাসি। কেননা, দরিদ্রতা হলো বিনয় এর কারণ, অসুস্থতা হলো পাপের প্রায়শ্চিত্ত (গুনাহ মাফের কারণ) এবং মৃত্যুর ফলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত হবে।”
কিছু কিছু আরব কবি দরিদ্রতাকে চরম ঘৃণা করত, যা নিম্নের কবিতার পংক্তি হতে বুঝা যায় যেখানে কবি দাবি করছেন যে এমনকি কুকুররাও দরিদ্রদেরকে ঘৃণা করে-
اذا رات فقيراً معدما ٭ هرت عليه وكشرت انيابها
ভাবাৰ্থঃ “এটা (কুকুর) কোনদিন কোন দরিদ্র ও নিঃস্ব লোককে দেখলে ভয়ানক গর্জন, ঘড়ঘড় ও ঘেউঘেউ করে এবং এটার শিকারী দাঁত বের করে মুখ ভেংচায়।”
নবী ইউসুফ (আঃ) জেলখানায় বন্দী হওয়া সম্বন্ধে বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! তারা আমাকে যে দিকে ডাকে তার চেয়ে আমার নিকট জেলখানাই অধিক পছন্দনীয়।” (১২-সূরা ইউসুফঃ আয়াত-৩৩)
অনেক ধার্মিকেরাই মৃত্যুকে স্বাগতম জানিয়েছেন।
মুয়াজ (রাঃ) বলেছেনঃ “মৃত্যুকে অভিনন্দন- এটা এমনই প্রিয় যেটা (বহু মানুষের) প্রয়োজনের সময় এসেছে। এবং যে ব্যক্তি তার জীবনের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় (তওবা করে) সে সফলকাম।”
যদিও অন্যরা মৃত্যু থেকে পালাতে চেষ্টা করেছে এবং এর আগমনকে অভিশাপ ও গালি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইহুদীরা জীবনের জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি লোভী। মহান আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেছেন
قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ
“(হে মুহাম্মদ!) আপনি বলে দিন, “যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে।” (৬২-সূরা আল জুমআঃ আয়াত-৮)
আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ধার্মিকদের (কাঙ্ক্ষিত) স্বপ্ন এবং আনন্দদায়ক আকাঙ্ক্ষা।
“কেউ কেউ তাদের ব্রতপূর্ণ করেছে (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)। আর কেউ কেউ শাহাদাতের অপেক্ষায় আছে।” (৩৩-সূরা আল আহযাবঃ আয়াত-২৩)
পক্ষান্তরে, অন্যরা (অনেকেই) মৃত্যুকে অপছন্দ করেছে এবং মৃত্যু থেকে পালাতে চেষ্টা করেছে। এক মরুবাসী আরব বলেছে— “আল্লাহর কসম, আমি আমার বিছানায় থেকে মরতে অপছন্দ করি। অতএব কিভাবে আশা করা যেতে পারে যে, আগের কাতারে যেয়ে আমি মৃত্যুকে খুঁজে বের করতে পারি?”
“(হে মুহাম্মদ: ) আপনি বলে দিন, “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে তোমাদের থেকে মৃত্যুকে হটিয়ে দাও।”(৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৬৮)
“(হে মুহাম্দ!) আপনি বলে দিন, “যদি তোমরা তোমাদের ঘরেও থাকতে তবুও যাদের জন্য মৃত্যুকে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছিল, তারা অবশ্যই (তাদের ঘর থেকে) বের হয়ে তাদের মৃত্যুস্থলে আসত (বা যেত)”। (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৫৪)
ইতিহাসের পাতায় পাতায় ঘটনা একটাই (আর তা হলো): কর্মীরাই (অবস্থার কাঙ্ক্ষিত) পরিবর্তন ঘটায়।