রূপের প্রেমে পড়া থেকে সাবধান! এ ধরনের প্রেম দুশ্চিন্তা ও চির দুর্দশায় ভরা। এটা একজন মুসলমানের জন্য আশীৰ্বাদ যে, গানে যে সব প্রচণ্ড ভালোবাসার খবর, অযাচিত ও অবাঞ্ছিত ভালোবাসার খবর অথবা কারো প্রেম বিচ্ছেদের কাহিনী পাওয়া যায় তা থেকে সে দূরে থাকে।
“তবে কি আপনি তাকে দেখেননি যে নিজের প্রবৃত্তিকে নিজের উপাস্য প্ৰভু (ইলাহ) হিসেবে গ্রহণ করেছে আর (তাই) আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার শ্রুতিশক্তির ওপর ও তার হৃদয়ের ওপর মোহর এটে দিয়েছেন এবং তার দৃষ্টির উপর আবরণ রেখে দিয়েছেন।” (৪৫-সূরা জাছিয়াহঃ আয়াত-২৩)
নিজেকে তিরস্কার করে এক আরব কবি লিখেছেন-
أنَا الذي جلَبَ المَنيّةَ طَرْفَهُ ٭ فَمَنِ المُطالِبُ والقَتيْلُ القَاتِلُ
“আমিইতো মৃত্যুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, সুতরাং নিহত ব্যক্তি নিজেই যখন নিজের হত্যাকারী তখন কে দোষী?”
অবশেষে সে (কবি) বুঝতে পারছে যে, সে আবেগতাড়িত প্রেমে পড়েছে এবং এর থেকে বের হতে পারছে না। আর তার দুঃখ-দুর্দশার জন্য সে নিজেই দোষী। তাই সে যে চির দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছে তার জন্য সে নিজেকেই দোষারোপ করছে।
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ
“আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তোমার মনে কুমন্ত্রণা আসে তবে তুমি আল্লাহ নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর।”
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
“মুত্তাকীদের (খোদাভীরুরদের) মনে যখন শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা আসে তখন নিশ্চয় তারা আল্লাহকে স্মরণ করে আর তখনই তারা (সঠিক পথ) দেখতে পায়।”
ইবনুল কায়্যিম তার “রোগ ও চিকিৎসা”(الداء والدواء) কিতাবে এ বিষয়ের উপর ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করেছেন। যেসব কারণে মানুষ মরিয়া হয়ে অদম্য প্রেমে পড়ে তিনি তার কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। নিচে সে সবের কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
১. এমন এক শূন্য হৃদয় যাতে আল্লাহর ভালোবাসা নেই, তার জিকির নেই ও তার ভয় নেই।
২. যথেচ্ছা দৃষ্টিপাত করা। চক্ষু হলো অনুসন্ধানী, যা অন্তরে দুঃখ-কষ্ট বয়ে আনতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন-
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ
“মু’মিনদেরকে বলে দিন যে তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে আনত রাখে।" (২৪-সূরা নূর : আয়াত-৩০)
দৃষ্টি হলো শয়তানের একটি তীর। একজন আরব কবি বলেছেন-
وانت متى أرسلت طرفك رائدا ٭ الى كل عين اتعبتك المناظر
رأيت الذي لا كله أنت قادر ٭ عليه ولا عن بعضه أنت صابر
“যখন তুমি তোমার দৃষ্টিকে অনুসন্ধানকারীর মতো সকলের চোখের দিকে যথেচ্ছ তাকাতে দিবে, তখন তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে যাবে। তখন তুমি এমন অনেক কিছু দেখবে যার পুরোটা তুমি আয়ত্ত করতে সক্ষম নও এবং যার আংশিক আয়ত্ত করার ধৈর্যও তোমার নেই।
৩. ইবাদতে অবহেলা করা। বিশেষ করে জিকির, দোয়া ও সালাতে।
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
“নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (২৯-সূরা আনকাবূতঃ আয়াত-৪৫)
এখানে অশ্লীল (الْفَحْشَاءِ) কাজ বলতে সকল প্রকার অধৈৰ্ব যৌন ক্রিয়া ও নির্লজ্জ ও বেহায়া ক্রিয়াকলাপকে বুঝায় এবং নিষিদ্ধ, অপছন্দনীয় ও মন্দ (وَالْمُنكَرِ) কাজ বলতে কুফুরী, শেরেকী ও সকল প্রকার মন্দ কাজকে বুঝায়।