টেনশন ও মানসিক রোগ সংক্রান্ত বই পুস্তক গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করার পর আমি যে বিষয়টি দেখতে পেলাম তা হচ্ছে- মুসলিম বিজ্ঞজনরা (আলেমরা) আরোগ্যকামীর জন্য তিনটি বিষয়ে একমত। (আর তা হলো)
১. আল্লাহর ইবাদত করার মাধ্যমে, তার আনুগত্য করার মাধ্যমে এবং সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তার মুখাপেক্ষী থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা উচিত। আর এটাই ঈমান, প্রধানতম, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ বিচার্য বিষয়।
فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
“অতএব তার ইবাদত কর এবং তার ইবাদতে ধৈর্যশীল থাক। তার মতো কোন কিছুর কথা কি তুমি জান?” (১৯-সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৬৫)
অবশ্যই তাঁর মতো, তার সমকক্ষ ও তার সমতুল্য কেউই নেই এবং তার কোন শরীক নেই।
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
“তাঁর মতো কিছুই নেই বরং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।” (৪২-সূরা আশ শূরাঃ আয়াত-১১)
২. অতীতের দুঃখজনক ঘটনাবলিকে অবশ্যই ভুলে যেতে হবে। অতীতের দুঃখদায়ক ঘটনাসমূহকে মনে করলে শুধু বেদনাই পাওয়া যায়- তা শুধু বেদনাই বৃদ্ধি করে। এগুলোকে অবশ্যই ভুলে যেতে হবে এবং স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে হবে। এভাবে প্রতিটি নতুন দিনের জন্য একটি করে নতুন জীবন শুরু করতে হবে।
৩. ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যা কিছু এখনও ঘটেনি তা গায়েবের বিষয়। সুতরাং এটা ঘটার আগ পর্যন্ত এটাকে একাকী রেখে দিন (অর্থাৎ এ নিয়ে আগাম দুশ্চিন্তা করবেন না)। বিশেষ করে ভবিষ্যৎবাণী, দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা দ্বারা আগাম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াকে পরিহার করুন বা এড়িয়ে চলুন। আজকের সীমার মধ্যেই জীবন যাপন করা উচিত। (এ সম্বন্ধে প্রথম দিকে বিস্তৃত ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করা হয়েছে। -অনুবাদক)
আলী (রাঃ) বলেছেন- “(এ দুনিয়ার) দীর্ঘকালীন প্রত্যাশা করা থেকে সাবধান। নিশ্চয় এটা মানুষকে তার আসল লক্ষ্যকে (পরকালকে) ভুলিয়ে দেয়।”
“এবং তারা ভেবেছিল যে, তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না।” (২৮-সূরা আল কাছাছঃ আয়াত-৩৯)
কুসংস্কার ও গুজবে বিশ্বাস করা থেকে সাবধান। “তারা মনে করে প্রতিটি শব্দই (হৈচৈ বা চিৎকারই) বুঝি তাদের বিরুদ্ধে (করা হচ্ছে)”। (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূনঃ আয়াত-৪)
আমি এমন কিছু লোকের কথা জানি যারা বহু বছর যাবৎ এমন বিপর্যয় ও দুর্যোগের ভবিষ্যৎবাণীর বাস্তবায়নের অপেক্ষা করে আসছে যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তারা তাদের নিজেদের অন্তরে এবং অন্যদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করছে। আল্লাহ কতই না মহান! আল্লাহ কতই না পবিত্র (তিনি যা বলেছেন তা কতইনা সত্য!) এ ধরনের (ভীতি সম্বলিত) জীবন যাপন করা দুঃখজন ও শোচনীয়। এ ধরনের লোকের উদাহরণ হলো চীনের নির্যাতিত কারাবন্দীরা। কারারক্ষী তাদের একটি নলকূপের নিচে রাখে। সে নলকুপ থেকে প্রতি মিনিটে মাত্র এক ফোটা করে পানি পড়ে। তৃষ্ণাতুর বন্দী মরিয়া হয়ে প্রতিটি বিন্দু পানির অপেক্ষা করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে দোজখীদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন-
“তাদের জন্য মৃত্যুর ফয়সালাও করা হবে না এবং তাদের থেকে দোজখের আযাবও হাল্কা করা হবে না।” (৩৫-সূরা ফাতিরঃ আয়াত-৩৬)
“অতপর সেখানে মরবেও না (অতএব শাস্তি হতে নিস্তার পাবে না) এবং বাঁচবেও না (অর্থাৎ শাস্তিহীন জীবন যাপন ও করবে না)”। (৮৭-সূরা আল আ’লাঃ আয়াত-১৩)
“যখন তোমাদের চামড়া জ্বলে যাবে তখনই আমি তাদেরকে নতুন চামড়া সৃষ্টি করে দিব, যাতে করে তারা ভালোভাবে শাস্তি ভোগ করতে পারে।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৫৬)