ইমাম ইবনুল কায়্যিম এমন কিছু বিষয় বর্ণনা করেছেন যা মনকে প্রশান্ত করে। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
১. তাওহীদ বা একত্ববাদঃ অর্থাৎ আল্লাহর সাথে তার ইবাদতে কোন শরীক না করে এবং তার সকল গুণের সাথে অন্য কাউকে শরীক না করে একচেটিয়াভাবে শুধুমাত্র তারই ইবাদত করা। কাফের ও মুশরিকরা যারা মহান আল্লাহর সাথে শরীক করে তারা আসলে মৃত, জীবিত নয়।
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ
“আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য অবশ্যই কষ্টকর জীবন রয়েছে এবং আমি তাকে অন্ধ অবস্থার হাশর করাব।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-১২৪)
“আর আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান তার অন্তরকে ইসলামের জন্য খুলে দেন। (৬-সূরা আল আন’আম: আয়াত-১২৫)
“আল্লাহ্ যার অন্তরকে ইসলামের জন্য খুলে দিয়েছেন ফলে সে তার প্রভুর পক্ষ থেকে পাওয়া নূরের উপর আছে- তবে কি সে ঐ কাফেরের মতো যে এমনটি নয়? (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত-২২)
“আমি অচিরেই কাফেরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করব, কেননা তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছে- যে বিষয়ে তিনি কোন দলীল প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৫১)
“অতএব তাদের জন্য ধ্বংস যাদের অন্তর এতটা কঠোর যে তাতে আল্লাহর কথা মনে পড়ে না।” (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত-২২)
“আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করতে চান তার অন্তরকে তিনি সংকুচিত ও সংকীর্ণ করে দেন, মনে হয় যেন সে আকাশে চড়ছে। (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-১২৫)
২. উপকারী ইলম বা জ্ঞানঃ কেননা আলেমরাই (জ্ঞানীরাই) সর্বাপেক্ষা সুখী; স্বচ্ছন্দ, নির্ঝঞ্জাট এবং পরিতুষ্ট। কেনইবা আলেমরা এমনটি হবেন না? তারা যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তরাধিকারী।
“এবং তুমি যা জানতে না তিনি তোমাকে তা শিখিয়েছেন।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১১৩)
“সুতরাং তুমি জেনে রাখ যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত ১৯)
৩. আমলে সালেহ বা নেক আমল বা পুণ্যকর্ম বা সৎকাজ বা ভালো কাজঃ একটি সওয়াবের কাজ বা নেক আমল অন্তরে ও চেহারায় উভয় স্থানেই আলো দেয় এবং রিযিকের প্রশস্ততা বয়ে আনে আর অন্যান্য লোকের অন্তরে নেক আমলকারীর জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি করে।
“আমি অবশ্যই তাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করব।” (৭২-সূরা আল জ্বীনঃ আয়াত-১৬)
৪. সাহসিকতা বা বীরত্বঃ কেননা সাহসী মানুষ দৃঢ় ও শক্ত হয় এবং একমাত্র-আল্লাহকেই ভয় করে। অভাব-অনটন ও সংকট তাকে বিচলিত করতে পারে না এবং তার অসুবিধাও করতে পারে না।
৫. পাপ না করাঃ পাপ মানুষের মনের শান্তি নষ্ট করে দেয় এবং পাপের ফলে মানুষ নিজেকে নিঃসঙ্গ ভাবে ও চারিদিকে অন্ধকার দেখে। একজন আরব কবি বলেন-
رأيت الذنوب تميت القلوب ٭ وقد يورث الذل إدمانها
“আমি পাপকে দেখেছি যে উহা অন্তরকে মেরে ফেলে,
আর পাপের আসক্তি আসক্তকে (পাপীকে) অপমানিত করে”।
৬. বৈধ কাজেও সংযমী হওয়াঃ কথা-বার্তায়, ঘুমে, মানুষের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে এবং খাওয়া-দাওয়ায় সংযত হতে হবে।
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
“আর যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত থাকে।” (২৩-সূরা আল মু’মিনূনঃ আয়াত-৩)
“মানুষ যে কথাই বলে (তা লিখে নেয়ার জন্য) তৎপর এক প্রহরী তার পাশেই রয়েছে।” (৫০-সূরা কাফঃ আয়াত-১৮)
“এবং পানাহার কর তবে অপচয় করিও না” (৭-সূরা আল আরাফঃ আয়াত-৩১)
একজন আরব কবি বলেছেন-
“হে কুকর্মকারী! তুমি তো অনেক ঘুমিয়েছ,
তুমি কি জাননা যে, মৃত্যুর পর লম্বা ঘুম আছে?”