রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আমাদের প্রভুকে যা সন্তুষ্ট করে আমরা শুধু তাই বলি।” আপনার জন্য যা পূর্বেই নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে তার নিকট আপনাকে সঁপে দেয়ার এক পবিত্র দায়িত্ব আপনার উপর রয়েছে। আপনি যদি এ দায়িত্ব পূর্ণ করেন তবে আপনার একটাই সুযোগ আছে আর তা হলো তকদীরে বিশ্বাস স্থাপন করা। কেননা, যা তকদীরে নির্ধারিত হয়ে গেছে তা অতি অবশ্যই ঘটবে। কোনরূপ কৌশল, ছল-চাতুরী ও চালাকিই আপনাকে এ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
ইমারসন বলেছেন- “বাধা ও দুঃখ-কষ্টহীন এক বিলাসবহুল ও সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন সুখী-সমৃদ্ধ-সফল ও মহামানব সৃষ্টি করে- এমন ধারণা কোথা হতে আমাদের নিকট আসল? আসল ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা সহজ জীবন যাপন করার অভ্যাস গড়ে নিয়েছে তারা জীবনের পথে যতই এগিয়ে যাবে ততই অধিকতর অলস অভ্যাস গড়ে তুলতে থাকবে। ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, মাহাত্ম্য বিভিন্ন পরিবেশের মানুষের নিকট তার লাগামকে সঁপে দিয়েছে।
এসব পরিবেশের মাঝে ভালো-মন্দ পরিবেশও রয়েছে আবার-এমন পরিবেশও রয়েছে যার ভালো-মন্দ নির্ণয় করা যায় না। আর এসব পরিবেশ থেকেই জন্ম নিয়েছে এমন সব মহামানব যারা নিজেদের কাঁধে মহান মহান দায়িত্ব নিয়েছেন আর কখনো সেসব দায়িত্বকে দূরে ছুড়ে ফেলেননি।”
ইসলামের প্রাথমিক যুগে স্বর্গীয় পথ নির্দেশক কিতাবের পতাকা কারা বহন করেছিল? তারা ছিল আযাদ, গোলাম বা মুক্ত দাস। গরীব বা দরিদ্র এবং বঞ্চিত বা নিঃস্ব। যারা তাদের বিরুদ্ধে অবজ্ঞাসহকারে লেগেছিল তাদের অধিকাংশই ছিল (তৎকালীন) মহৎ ব্যক্তিবর্গ, নেতৃবর্গ এবং ধনী ব্যক্তিবর্গ।
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا أَيُّ الْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا
এবং যখন আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ তাদের নিকট তেলাওয়াত করা হয় তখন (ধনী) কাফেররা (দরিদ্র) ঈমানদারদেরকে বলে: (ধনী কাফির ও দরিদ্র ঈমানদার এই) দু’দলের কোন দল মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে উত্তম।” (১৯-সূরা মারইয়াম: আয়াত ৭৩)
“এবং তারা বলে, “আমরা ধনে জনে সমৃদ্ধশালী এবং আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না।” (৩৪-সূরা আস সাবা: আয়াত-৩৫)
“এভাবেই আমি তাদের একদলকে অপর দল দ্বারা পরীক্ষা করলাম যাতে করে তারা বলে, ‘আমাদের মাঝ থেকে কি আল্লাহ এই (দরিদ্র) লোকদিগকে অনুগ্রহ দানে ধনী করলেন?’ আল্লাহ কি কৃতজ্ঞদের সম্বন্ধে সর্বাধিক জ্ঞাত নন?” (৬-সূরা আল আন’আম: আয়াত-৫৩)
“কাফেররা মু’মিনদের উদ্দেশ্যে বলে, “যদি এ কুরআন ভালো হতো তবে তারা (অর্থাৎ দরিদ্র মু’মিনগণ) এ কুরআনের দিকে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না (তাদের আগে আমরা এ কুরআন পেতাম) আর যখন তারা এ কুরআন দ্বারা হেদায়াত প্রাপ্ত হলো না তখন (ফলে) তারা অচিরেই বলবে যে, এ কুরআন এক পুরাতন মিথ্যা রচনা।” (৪৬-সূরা আল আহকাফ: আয়াত-১১)
“দাম্ভিকেরা বললঃ তোমরা যাতে বিশ্বাস কর আমরা নিশ্চয় তাতে অবিশ্বাস করি।” (৭-সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-৭৬)
“আর তারা বলে, এই কুরআন (মক্কা ও তায়েফ) এই দুই নগরীর কোনো এক মহান ব্যক্তির উপর কেন নাযিল করা হলো না? তারা কি আপনার প্রভুর করুণাকে বণ্টন করছে?” (৪৩-সূরা আয যুখরুফ: আয়াত-৩১-৩২)
আমার প্রায়ই আন্তারার কবিতার পংক্তিগুলো মনে পড়ে। তাতে সে একথাটি প্রতিষ্ঠিত করে যে, তার মূল্য তার চরিত্রে ও তার কাজে তাঁর বংশ মর্যাদায় নয়। তিনি বলেছেন- “কৃতদাস হওয়া সত্ত্বেও আমি এক মহান নেতা, কালো চামড়া হওয়া সত্ত্বেও আমার চরিত্র সাদা।”