দুঃখে-কষ্টে আছে এমন কাফেরদের প্রার্থনাতে আল্লাহ সাড়া দেন। অতএব, যে মুসলিমগণ আল্লাহর সাথে শরীক করে না তারা কত বেশি আশা করতে পারে? বুদ্ধের পর ভারতে সম্ভবত দ্বিতীয় জনপ্রিয় নেতা মহাত্মা গান্ধী; তিনি যদি তার প্রার্থনার শক্তির উপর স্বাধীন না থাকতেন তবে পদস্খলনের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। একথা আমি কীভাবে জানি (আমার জানার) কারণ এই যে, তিনি নিজেই বলেছেন “আমি যদি প্রার্থনা না করতাম তবে আমি অনেক আগেই পাগল হয়ে যেতাম।” এ ছিল প্রার্থনার ফল। আর গান্ধী মুসলিমও ছিলেন না। সন্দেহাতীতভাবে তার ভ্রান্তি বিরাট ছিল; কিন্তু যা তাকে নিরাপদ পথে পরিচালিত করেছিল তা ছিল এমন এক পথ বা মত যাকে বলা যায়- কাজের সময় কাজী কাজ ফুৱালে পাজী- আর তা কুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ-

فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ

“আর যখন তারা জাহাজে চড়ে তখন তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আল্লাহকে ডাকে, ফলে যখন তিনি তাদেরকে তীরে পৌছিয়ে উদ্ধার করেন তখন তারা শিরক করে।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৬৫)

(“তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক কর তারা ভালো) নাকি তিনি (ভালো) যিনি দুর্দশাগ্রস্তের ডাকে সাড়া দেন-যখন সে তাকে ডাকে?” (২৭-সুরা আশ শেয়ারা আয়াত ৬২)

“এবং তারা মনে করে তারা তাতে পরিবেষ্টিত, তারা (তখন) একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহকে ডাকে (আর বলে) : আপনি যদি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দেন তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হব।” (১০-সূরা ইউনুস: আয়াত-২২)

মুসলিম পণ্ডিতবর্গ, মুসলিম ঐতিহাসিকবৃন্দ ও মুসলিম লেখকবৃন্দের জীবনীসমূহকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পাঠ করেও আমি তাদের একজনকেও এমন পাইনি যে সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত ও মানসিকরোগগ্ৰস্ত হয়ে

পড়েছে। কারণ এই যে, তারা সুখে-শান্তিতে জীবন-যাপন করেছে এবং তারা এমন সরল জীবন-যাপন করত যে তা সব ধরনের আবেগমুক্ত ছিল।

“আর যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে ঈমান আনে- আর তা (কুরআন) হলো তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য (কিতাব)- তিনি তাদের থেকে তাদের পাপ সমূহকে বিদূরিত করে দিবেন এবং অবস্থা ভালো করে দিবেন।” (৪৭-সুরা মুহাম্মদ বা কেতাল: আয়াত-২)

ইবনে হাজিমের নিম্নোক্ত কথাকে গভীরভাবে ভেবে দেখুন- “বাদশা ও আমার মাঝে পার্থক্যকারী মাত্র একটি দিনই আছে।”

অতীত সম্বন্ধে আমার কোনো অভিরুচি নেই; তারা এবং আমি উভয়েই ভবিষ্যতে যা ঘটবে তাকে সমভাবে ভয় করি, এভাবে মাত্র আজকের দিনটিই থাকে। আজ কি ঘটবে?

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আজকের দিনের কল্যাণ চাই এর বরকত, সাহায্য, নূর ও হেদায়েত চাই।”

“হে মু’মিনগণ! সতর্কতা অবলম্বন কর”। (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-৭১)

“আর সে যেন সতর্ক থাকে এবং তোমাদের সম্বন্ধে কাউকেও জানতে না দেয়।” (১৮-সূরা আল কাহাফ: আয়াত-১৯)

“তারা শুধু একথাই বলেছিল যে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপসমূহকে এবং আমাদের কাজে আমাদের সীমালঙ্ঘনকে আপনি ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের কদমকে (পদক্ষেপকে) দৃঢ় রাখুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪৭)