উইলিয়াম জেমস বলেছেন- “আমাদের বাধা-বিপত্তি আমাদেরকে এতটাই সাহায্য করে যে, আমরা তা কখনো আশাই করতে পারিনি। যদি ডষ্টয়িভস্কি ও টলষ্টয় দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত জীবন যাপন না করত তবে তারা তাদের কালজয়ী পুস্তকাদি লিখতে সক্ষম হতো না। অতএব, এতীম, অন্ধ ও দরিদ্র হওয়া বা গৃহ ও আরাম-আয়েশ হতে দূরে থাকা হলো এমন সব অবস্থা যা আপনাকে অর্জন, খ্যাতি, অগ্রসর হওয়া ও অবদান রাখার পথে পরিচালিত করতে পারে।”
একজন আরব কবি বলেছেন-
قد ينعم الله بالبلوى وإن عظمت ٭ و يبتلي الله بعض القوم بالنعم
অর্থাৎ" আল্লাহ বালা-মুসিবতের মাধ্যমে (তার বান্দাদেরকে) অনুগ্রহ ধন্য করতে পারেন- আর সে বালা-মুসিবত যতই গুরুতর (মনে) হোক না কেন; এমনকি সন্তান-সন্ততি ও সম্পদও (অর্থাৎ জনবল ও ধন বলও) দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
(হে মুহাম্মদ!) অতএব তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে বিস্মিত না করে; আসলে আল্লাহ্ তো এসব দ্বারা তাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৫৫)
ইবনুল আছীর পঙ্গু হওয়ার কারণে তার বিখ্যাত দুটি কিতাব জামেউল উসূল এবং আন-নিহায়াহ সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। সারাখসি তাঁর সর্বমহলে সাদরে গৃহীত। পনেরো খণ্ড কিতাব আল ‘মাবসূত’ কূপের তলদেশে বন্দী থাকাকালে লিখেছেন। ইবনুল কাইয়েম সওয়ারীতে চড়ে ভ্রমণকালে ‘জাদুল মায়াদ’ লিখেছেন। ইমাম কুরতুবী জাহাজে চড়ে ভ্রমণকালে সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা লিখেছেন। ইবনে তাইমিয়া জেলে থাকাকালে তার ‘ফাতাওয়ার’ অধিকাংশ লিখেছেন।
যে সকল হাদীস শাস্ত্রবিদগণ লক্ষ লক্ষ হাদীস সংকলন করেছেন তারা দরিদ্র ও পরবাসী ছিলেন। একজন ধাৰ্মিক লোক আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি কিছুদিন কারাভোগ করেছেন এবং তার কারাভোগ কালে তিনি সমগ্র কুরআন মাজীদ মুখস্ত করে ফেলেছেন আর ইসলামি আইন শাস্ত্রের (ফেকাহর) বড় বড় চল্লিশ খণ্ড কিতাব পড়েছেন।
আবুল আল মুয়াররি অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁর কিতাবাদি অন্যদেরকে দান করে দিয়েছিলেন। ত্বা-হা হোসাইন তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলার পরপরই তার প্রসিদ্ধ পত্রিকাবলি ও পুস্তকসমূহ লেখা শুরু করেছিলেন। অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিই পদচ্যুত বা চাকরীচ্যুত হওয়ার পর জ্ঞান ও চিন্তার জগতে তাদের (চাকরিচ্যুত হওয়ার বা পদচ্যুত হওয়ার) পূর্ববর্তী জীবনের তুলনায় অনেক বেশি অবদান রেখেছেন।
ফ্রান্সিস বেকন বলেছেন যে-
“A little philosophy makes one lean towards disbelief, and to delve into philosophy brings the mind closer to religion.”
“অল্প দর্শন (জ্ঞান) মানুষকে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যায় আর দর্শন নিয়ে গভীর গবেষণা মনকে ধর্মের নিকটবর্তী করে।"
“আমি মানবজাতির জন্য এসব উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত পেশ করি, অথচ জ্ঞানী ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যরা এসব বুঝতে পারে না।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৪৩)
“আল্লাহর বাদাগণের মধ্য হতে শুধুমাত্র জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।” (৩৫-সূরা ফাতির: আয়াত-২৮)
“এবং যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দান করা হয়েছে তাঁরা বলবে, “তোমরাতো আল্লাহর বিধানানুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করেছিলে।” (৩০-সূরা আর রূম: আয়াত-৫৬)
হে মুহাম্মদ! আপনি বলে দিন যে, “আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে বিশেষভাবে উপদেশ দিচ্ছি, আর তা হলো যে, তোমরা জোড়ায় জোড়ায় বা পৃথক পৃথকভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দাঁড়াও এবং তারপর গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখ যে, তোমাদের এই সঙ্গী (মুহাম্মদ) পাগল নন-তিনি তো আসন্ন এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তোমাদের জন্য একজন সতর্ককারী মাত্র।” (৩৪-সূরা আস সাবা: আয়াত-৪৬)
ডা. এ. এ. বিল বলেছেন- “সত্যিকার ঈমানদার কখনো মানসিক রোগে আক্রান্ত হবে না।”
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য পরম করুণাময় (আল্লাহ) নিজেও মু’মিনদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।” (১৯-সূরা মারইয়াম: আয়াত-৯৬)
“যে কোনো ঈমানদার পুরুষ বা মহিলা নেক আমল বা আমলে সালেহ করে আমি (আল্লাহ) অবশ্য অবশ্যই তাকে পবিত্র জীবন যাপন করাব এবং আমি (আল্লাহ) অবশ্যই অবশ্যই তারা যে নেক আমল করত তদানুপাতে তাদেরকে তাঁদের পুরস্কার দিব।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-৯৭)
“এবং নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সরল সঠিকপথে পরিচালিত করেন।” (২২-সূরা আল হাজ্জ: আয়াত-৫৪)