এন্ড্রি মরো বলেছেন- “যা কিছু আমাদের ব্যক্তিগত স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ তাই আমাদের কাছে সত্য মনে হয় আর অন্য সবকিছু শুধুমাত্র আমাদের ক্রোধ উৎপন্ন করে।”
যখন আমাদেরকে উপদেশ দেয়া হয় বা আমাদের সমালোচনা করা হয় তখনকার অবস্থার সাথে এ উদাহরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা প্রশংসাকে অত্যন্ত ভালোবাসি এবং যখন আমাদের প্রশংসা করা হয় তখন আমাদের মনটা বড় হয়ে যায় এমনকি আমাদেরকে অযৌক্তিক প্রশংসা করা হলেও। অপরপক্ষে আমরা সমালোচনা, নিন্দাকে ঘৃণা করি এমনকি আমাদের সম্বন্ধে যা বলা হয় তা সত্য হয়ে থাকলেও।
“এবং যখন তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেয়ার জন্য তাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট আহবান করা হয় তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যদি তাদের কোনো হক্ক বা প্রাপ্য থাকে তবে তারা তার নিকট বিনীতভাবে আসে।” (২৪-সূরা আন নূর: আয়াত-৪৮-৪৯)
উইলিয়াম জেমস বলেছেন- “আপনার প্রচেষ্টার ফলাফল সম্বন্ধে যে উদ্বিগ্নতা আপনাকে পেয়ে বসে ও আপনাকে পরাভূত বা পরাজিত করে তা থেকে আপনি তখন সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে যাবেন- যখন আপনি কোনো নির্দিষ্ট দিনে কোনো কিছু করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”
তিনি যা বুঝাতে চাচ্ছেন তা হচ্ছে যখন আপনি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ও সুস্থ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করবেন তখন আপনার সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করা উচিত। অধিকন্তু আপনাকে অবশ্যই সন্দেহের কাছে পরাজিত হওয়া যাবে না। কেননা, সন্দেহ শুধু আরো সন্দেহেরই জন্ম দেয় এবং তারপর পিছনের দিকে ফিরে তাকানো যাবে না। (কাজ শুরু করার পর তা বাদ দেয়া যাবে না।)
আরব দেশের একজন কবি বলেছেন-
ذا كُنتَ ذا رأيٍ فكُن ذا عزيمةٍ ٭ فإن فساد الرأي أن تترددا
“যদি তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পার, তবে স্থির সিদ্ধান্ত নিও বা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করিও কেননা, ভুল সিদ্ধান্ত পরিবর্তনশীল।"
সিদ্ধান্ত নিতে সাহস প্রদর্শন আপনাকে উদ্বিগ্নতা ও দ্বিধা-দ্বন্দ থেকে সন্দেহাতীতভাবে রক্ষা করতে পারে।
“স্থির সিদ্ধান্ত নেবার পর যদি তারা আল্লাহর সত্যতা স্বীকার করত (বা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করত) তবে তা তাদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হতো।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতাল: আয়াত-২১)
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডা. রিচার্ড ক্যাবোট তার ‘How Humans Live’ নামক পুস্তকে লিখেছেন- “সন্দেহ, ভয় ও অনিশ্চয়তা থেকে যে স্নায়বিক রোগ হয় এবং যারা এ রোগে ভোগে তাদের ওষুধ হিসেবে কাজ করাকে আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে প্রস্তাব করছি।”
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ
অতপর যখন (জুমুআর) সালাত শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং (কাজ করার মাধ্যমে) আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর।” (৬২-সূরা আল জুমআ: আয়াত-১০)
জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন- “অযথা চিন্তায়, বিশেষ করে আপনি কি সুখী নাকি অসুখী এ নিয়ে (অযথা) চিন্তায় সময় নষ্ট করাটাই সম্ভবত হতাশার গোপন রহস্য। আপনার হৃদয়ের মনিকোঠায় এ ধরনের চিন্তা-ভাবনাকে চুপিসারে চলতে দিবেন না। বরঞ্চ অবিচলিতভাবে কাজে লেগে থাকুন। যখন আপনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগিয়ে দিবেন তখন আপনার রক্ত (নব উদ্যমে) চলাচল করা শুরু করে দিবে এবং আপনার মন কাজে লেগে যাবে। আপনি দেখবেন যে শীঘ্রই আপনার নতুন জীবন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে যাবে। নিয়মিতভাবে কাজ করে যান; কেননা এটা জমিনের বুকে সর্বাপেক্ষা দামী ও সবচেয়ে কার্যকর ঔষুধ ।
وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ
এবং হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলুন, ‘তোমরা কাজ করতে থাক, কেননা, আল্লাহ, তার রাসূল ও মু’মিনগণ অচিরেই তোমাদের আমল (বা কাজ) দেখবেন।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১০৫)
একটি জ্ঞানগর্ভ আরবদেশীয় প্রবাদ আছে- “জীবনকাল এত সংক্ষিপ্ত যে, এটা আরো সংক্ষিপ্ত করা যায় না।”
“তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে, আমরা একদিন বা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছিলাম, (আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে) আপনি বরং হিসাব রক্ষকদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে; যদি তোমরা জানতে।" (২৩-সূরা আল মু'মিনূন: আয়াত ১১২-১১৪)