যদি আপনি তাদের সমালোচনায় এবং তাদের অসংগত, অশিষ্ট ও ধৃষ্ট মন্তব্যে ধৈর্য প্রদর্শন করতে পারেন তবে আপনি পুরস্কৃত হবেন। তারা যতই আপনার সমালোচনা করবে ততই আপনার মূল্য বৃদ্ধি পাবে। কারণ, যে ব্যক্তি আকৌশলী ও অদক্ষ তার কোন হিংসুক নেই। আরবী প্রবাদ অনুসারে বলতে গেলে বলতে হয়: “লোকেরা মৃত কুকুরকে লাথি মারে না।”
একজন কবি বলেন
“তাদেরকে যে উৎকর্ষতায় ছাড়িয়ে গেছে তাকে তারা হিংসা করে, লোকেরা তার সাথে শক্রতা ও বিরোধিতা করে, ঠিক হিংসুটে রমণীদের মতো যারা হিংসা-বিদ্বেষের কারণে সুন্দরী কুমারীর সম্বন্ধে বলে যে, সে হীন চরিত্রের।”
যুহাইর বলেছেন-
“সে নেয়ামতে ধন্য হয়েছে তা নিয়ে তারা হিংসা করে, আল্লাহ তার থেকে তাদের অসন্তোষের কারণ (নেয়ামত) ছিনিয়ে নিবেন না।”
আরেকজন কবি বলেছেন-
“তারা আমার মৃত্যুতেও হিংসা করবে, এটা কতই না হতভাগ্যের বিষয় যে, এমনকি আমার মৃত্যুতেও আমি তাদের হিংসা থেকে বাদ পড়ব না।”
আরো একজন কবি বলেছেন-
“গল্প-বাগীশ ও গুজব রটনাকারীদের অবিচার সম্বন্ধে আমি অভিযোগ করলাম, তুমি এমন কোন সম্মানিত ও সফল ব্যক্তি পাবে না যে নাকি হিংসার ছোবল থেকে বাঁচতে পেরেছে।
হে সম্মানিত ও যোগ্য বন্ধু! তুমিও এর শিকার, তবে গোবেচারা ও হতভাগ্যদের কেউ হিংসা করে না।”
অন্য একটি কবিতায় আছে—
“কেউ যদি তার মাহাত্মে আকাশে পৌছে যায়, তবে আকাশের তারার সমান (অত্যাচারের তীর) নিক্ষেপ করবে। তবুও তাদের অপব্যবহার ও গালাগালি কখনও তাদেরকে তার মাহাত্ম্যের স্তরে পৌছাতে পারবে না।”
নবী মূসা (আঃ) তার প্রতিপালককে বলেছিলেন যে, লোকদেরকে তাকে গালাগালি করা থেকে বিরত রাখতে। আল্লাহ বলেন, “হে মূসা আমি আমার জন্যও এ কাজ করিনি। আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি ও তাদেরকে রিজিক দিয়েছি অথচ তারা আমাকে গালি দেয়।”
নির্ভরযোগ্যভাবে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন, “আদম সন্তান আমাকে গালিগালাজ করে, অথচ তার এ কাজ করার অধিকার নেই। সে যে যুগকে গালি দেয় এতেই আমাকে গালি দেয়া হয়, কেননা, আমিই যুগ অর্থাৎ আমিই যুগকে পরিবর্তন ও আবর্তন করি। আমিই যেভাবে ইচ্ছা দিন-রাতের আবর্তন ঘটাই। তারা যে বলে আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা আছে- এতেই আমাকে গালি দেয়া হয়, কারণ, আমার কোন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নেই।”
আপনার মান-মর্যাদাকে আক্রমণ করা থেকে আপনি জনগণকে বিরত রাখতে সক্ষম নাও হতে পাবেন, কিন্তু, আপনি ভালো কাজ করতে পারেন এবং পরিণামে তাদের নিন্দা ও বিদ্বেষকে অবজ্ঞা করতে পারেন।
আরেকজন কবি বলেছেন-
ولقد امر على السفيه يسبني ٭ فمضيت ثمت قلت لا يعنيني
“আমাকে গালি দেয় এমন এক বোকার পাশ দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম,
‘সে আমাকে গালি দিচ্ছে না’ একথা (মনে মনে) বলে আমি সে স্থান অতিক্রম করে গেলাম।”
আরোও একজন কবি বলেন-
“বোকার কথার জবাব দিও না, কেননা, তার কথার জবাব দেয়ার চেয়ে চুপ থাকা উত্তম।”
যারা সমৃদ্ধ, যারা মহৎ এবং যারা প্রতিভা দেখায় তাদের কাজে মূর্খ ও বোকারা স্পষ্টভাবে অপমান বোধ করতে পারে।
“আমার চারিত্রিক সৌন্দর্যই যদি আমার পাপ হয়ে থাকে তবে অনুগ্রহ করে বলুন কিভাবে আমি তার ক্ষতিপূরণ করব।”
“প্রত্যেক সামনে ও পিছনে সমালোচনাকারীদের জন্য ধ্বংস! যে সম্পদ জমা করে বারবার গণনা করে রেখেছে।
সে মনে করে যে, তার সম্পদ তাকে চিরঞ্জীব করে রাখবে। কখনও নহে! অবশ্যই সে দাউদাউ করে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে।” (১০৪-সূরা হুমাজাহ: আয়াত-৩-৪)
একজন সুপ্রসিদ্ধ পাশ্চাত্য লেখক বলেছেন-
“Do what is right, and then turn your back to every vulgar criticism.”
“যা সঠিক তা কর এবং প্রত্যেক অমার্জিত নিন্দাবাদকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর।”
আপনাকে লক্ষ্য করে যে ক্ষতিকর মন্তব্য করা হয় তার জবাব দিবেন না। সহনশীলতা আপনার দোষ ক্রটিকে ঢেকে রাখবে। সহনশীলতা হলো মহত্তর গুণ। নীরবতা শক্রকে জয় করে। ক্ষমা এমন এক সম্মান যার জন্য আপনি পুরস্কৃত হবেন। আপনার সম্বন্ধে যদি কোন মানহানিকর মন্তব্য ছাপানো হয় তবে আপনি জেনে রাখুন যে, অর্ধেক পাঠক তা ভুলে যাবে আর বাকি অর্ধেকে প্রধানত; তা পড়ার প্রতি অনাগ্রহী থাকবে। অতএব, যা বলা হয়েছে তা রদ করতে যেয়ে বাড়তি গণ্ডগোল সৃষ্টি করবেন না।
একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন-
“জনতা আপনার আমার কথা ভুলে তাদের রুটির জন্যই বা রোজগারের জন্যই ব্যস্ত। তাদের কেউ যদি পিপাসার্ত থাকে তবে তো সে আপনার আমার মৃত্যুর কথাও ভুলে যাবে।”
একজন কবি বলেছেন-
“তোমার পাশে বসা সঙ্গীদের নিকট তোমার বিষয় প্রচার করিও না। কেননা, তারা হিংসুটে এবং তোমার দুর্দশায় তারা আনন্দ করবে।”
যে গৃহ নানা প্রকার মূল্যবান খাদ্যে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও তা সমস্যা ও অশান্তির জায়গা সে ঘরের চেয়ে যে গৃহে শান্তি ও প্রয়োজনীয় খাবার আছে সে ঘর ভালো।