(এ শিরোনামটি ২২তম সংস্করণের আরবী পুস্তক থেকে নেয়া হয়েছে। ইংরেজি পুস্তকে এ বাক্যটি পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আছে-আলাদা শিরোনামে নেই। তাই অধ্যায়টি দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর ছিল। এখন পৃথক শিরোনামে অধ্যায়টি ক্ষুদ্রতর ও সহজপাঠ্য করা হল। আশা করি এ বিষয়ে পাঠকবৃন্দ একমত হবেন। -অনুবাদক)

এ পৃথিবীতে আপনি যদি ক্ষুধার্ত, দুঃখিত, রুগ্ন ও অত্যাচারিত হন, তবে চিরস্থায়ী পরম স্বৰ্গসুখের কথা স্মরণ করুন। আপনি যদি এমনটি ভাবেন তবে আপনার লোকসান সত্যি সত্যিই লাভে পরিণত হবে ও আপনার দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন সত্যিই উপহারে পরিণত হবে।

পরকালের জন্য যারা আমল করে তারাই বিজ্ঞতম (সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী) ব্যক্তি। কেননা, পরকাল (আখেরাত) দুনিয়ার তুলনায় উত্তম ও চিরস্থায়ী। সবচেয়ে বোকা লোক তারাই যারা দুনিয়াকে প্রাধান্য দিবে তাদের চিরস্থায়ী আবাসস্থল মনে করে। এতেই তাদের সব আশা-ভরসা। এরা যখন দুর্বিপাকে পড়ে তখন আপনি এদেরকে সবচেয়ে বেশি দুঃখিত দেখতে পাবেন। পার্থিব ক্ষতির কারণে তারা সবচেয়ে বেশি বিচলিত হয় শুধু এ কারণে যে, তারা যে তুচ্ছ জীবনযাপন করে-এর বাইরে তারা কোন কিছুই দেখতে পায় না। তারা শুধু এই অস্থায়ী জীবনটাই দেখে ও শুধু এর কথাই ভাবে। তারা চায় না যে, কোন কিছু তাদের পরম সুখকে মাটি করে দিক। যদি তাদের চোখ থেকে মূর্খতার পর্দা সরানো হত তবে তারা চিরস্থায়ী আবাস, এর নেয়ামত, আনন্দ ও প্রাসাদসমূহের সাথে একাত্ববোধ করত ও কুরআন সুন্নাহের মাধ্যমে তাদেরকে আখেরাত সম্বন্ধে অবহিত করা হলে তারা তা মনোযোগ সহকারে শ্ৰবণ করত।

বাস্তবিকই, আমাদের উচিত আখেরাতের বাড়ির প্রতি মনোনিবেশ করা। ঐ বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবীর করা, যাতে আমরা এর সর্বোত্তমটি (জান্নাতুল ফেরদাউস) অর্জন করতে পারি। বেহেশতবাসীদের বর্ণনা সম্বন্ধে আমরা কি বিস্তারিতভাবে চিন্তাভাবনা করে দেখেছি? তারা অসুস্থ হবে না, দুঃখ তাদের কাছেও ঘেঁষবে না, তারা মরবে না, তারা চিরকুমার থাকবে এবং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ থাকবে উত্তম, নিখুঁত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তারা সুন্দর গৃহে অবস্থান করবে। জান্নাতে এমন জিনিস পাওয়া যাবে, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং মানব মন কখনো যার কল্পনাও করেনি। আরোহী ব্যক্তি একশত বছর একটি গাছের নিচে ভ্রমণ করেও এর শেষ সীমায় পৌছতে পারবে না। বেহেশতে একটি তাবুর দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। জান্নাতের নদীগুলো সদা প্রবাহিত, এর প্রাসাদগুলো বিশাল বিশাল এবং এর ফলগুলো শুধুমাত্র হাতের নাগালের মধ্যেই নয়; অধিকন্তু, অতি সহজেই তোলা যাবে (মন চাওয়া মাত্রই হাতে চলে আসবে। -অনুবাদক)

“সেখানে (বেহেশতে) প্রবাহমান ঝর্ণা থাকবে। সুউচ্চ আসন থাকবে। আর থাকবে হাতের কাছে প্রস্তুত পান পাত্র, সারি সারি গদি ও বিছানো গালিচা।” (৮৮-সূরা আল গাশিয়াহ: আয়াত-১২-১৬)

জান্নাতের সুখ হবে অসীম। তবে কেন আমরা বিষয়টিকে গভীরভাবে ভেবে দেখছি না? স্বৰ্গই যদি আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হয় আর আমরা যদি আল্লাহর নিকট বেহেশতই চেয়ে থাকি-তবে এ দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট যতটা দুৰ্বহ মনে হয় তার চেয়ে অনেক কম ভারী মনে হওয়ার কথা। অতএব, (এমনটি ভেবে) দুর্দশাগ্রস্তদের আত্মা শান্তি পাক।

ওহে, আপনারা যারা এ দরিদ্র জীবন যাপন করছেন বা দুর্বিপাকে পতিত সৎকর্ম (নেক আমল) করুন, তাহলেই আপনারা আল্লাহর জান্নাতে বাস করতে পারবেন।

سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, কেননা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে। চূড়ান্তগৃহ বাস্তবিক কতই না উত্তম!” (১৩-সূরা রা’আদ: আয়াত-২৪)