অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চাপে নয় বরং অতি তুচ্ছ ব্যাপারে অল্পতেই ভেঙ্গে পড়েন। মুনাফিকদের বিষয়টা একটু ভেবে দেখুন- তারা তাদের সংকল্পে কতই না দুর্বল! আল কুরআন তাদের কিছু কথা আমাদের নিকট বর্ণনা করছে:
“যারা (তাবুকের যুদ্ধ থেকে) পিছনে থেকে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের (বিরুদ্ধাচরণ করে) পিছনে বসে থাকাতেই আনন্দবোধ করল এবং তারা তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল: গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৮১)
“আমাকে (যুদ্ধ হতে) অব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৯)
“আর তাদের একদল নবীর নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, আমাদের ঘর-বাড়িগুলো সত্যিই অরক্ষিত’। আসলে সেগুলো অরক্ষিত ছিল না। আসলে তারা পালাতেই চেয়েছিল।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-১৩)
نَخْشَىٰ أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ
“আমাদের আশঙ্কা হয় যে, আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।” (৫-সূরা মায়িদা: আয়াত-৫২)
“আর (তখনকার কথা স্মরণ করুন, যখন) মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি তারা বলছিল; ‘আল্লাহ ও তার রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-১২)
এমন লোকদের আত্মা কতই না হতভাগা!
পেট পূজা, গাড়ি-বাড়ি, দালান-কোঠাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারা আদৌও কখনো একবারের জন্যেও আদর্শ ও পুণ্যবান লোকদের জীবনাদর্শের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েও দেখেনি। তাদের জ্ঞানের পরিধি হল দামী দামী গাড়ি, পোশাক, জুতা ও খাবার, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, সন্তান বা আত্মীয়ের সাথে মনোমালিন্য, সমালোচনা বা তিরস্কার হজম করতে বাধ্য হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোন সামান্য কারণে অনেকে দিন-রাত মর্মপীড়ায় ভোগেন বা মৰ্মপীড়াগ্রস্ত থাকেন। এমন সব বিষয়ই হল এসব লোকদের দুর্দশা, দুর্বিপাক বা মুসিবত। তাদের এমন কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, যা তাদেরকে ব্যস্ত রাখবে, তাদের জীবনে এমন কোন মহৎ আকাঙ্ক্ষাও নেই, যা অর্জনের জন্য তারা দিন-রাত চেষ্টা করবে।
প্রবাদ আছে, যখন কোন পাত্র পানি শূন্য হয় তখন তা বায়ুপূর্ণ হয়। তাই যে বিষয় আপনাকে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছে, তা নিয়ে একটু ভেবে দেখুন ও নিজেকে প্রশ্ন করুন। এটা কি আপনার শক্তি নষ্ট করার ও আপনাকে কষ্টে ফেলার যোগ্যতা রাখে? এটা এক অপরিহার্য প্রশ্ন। কেননা, এটা যাই হোক না কেন- এটা আপনার উদ্বিগ্নতার কারণ। আপনার শরীর রক্ত-মাংসে গড়া। এ বিষয়টির জন্য শক্তি ও সময়ের অপচয় করছেন। যদি এটা (যে বিষয়টি আপনাকে উদ্বিগ্ন করছে তা) আপনার শক্তি ও সময় নষ্ট করার যোগ্যতা না রাখে তবে (এ নিয়ে ভেবে ভেবে) আপনি আপনার সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সময়, জীবন, যৌবন ও ধন-সম্পদের এক বিশাল অংশ অপব্যয় করে ফেলবেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আপনাকে প্রতিটি জিনিসের যথাযথ মূল্যানুপাতে বিচার করতে হবে ও তাকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। এর চেয়ে আরো বেশি সত্য হল মহান আল্লাহর বাণী-
قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
“অবশ্যই আল্লাহই প্রতিটি জিনিসের জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” (৬৫-সূরা আত তালাক: আয়াত-৩)
অতএব, প্রতিটি অবস্থাকে তার আকার, ওজন, পরিমাণ ও গুরুত্ব অনুসারে বিবেচনা করুন এবং অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি থেকে বেঁচে থাকুন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিন। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল গাছের নিচে বাইয়াত হয়ে (আনুগত্যের অঙ্গীকার করে) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাদের সাথে এমন এক লোক ছিল, যার লক্ষ্য ছিল একটি হারানো উট আর এ চিন্তার বশীভূত হয়েই সে বাইয়াত থেকে বঞ্চিত থাকল। ফলে, অন্যেরা যে পুরস্কার পেল তা থেকেও সে বঞ্চিত থাকল।
সুতরাং, নগণ্য বিষয়ের চিন্তায় বিভোর হবেন না। যদি আপনি এ পরামর্শ মানেন তবে দেখবেন যে, আপনার অধিকাংশ দুশ্চিন্তাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।