আপনার ডানে-বামে-চারপাশে তাকান। আপনি কি দুর্দশাগ্রস্ত ও হতভাগাদের দেখতে পান না? প্রতিটি ঘরেই শোক আছে, বিরহ আছে, কষ্ট আছে। প্রতিটি গাল বেয়েই চোখের পানি ঝরছে। কতই না মুসিবত আর কতই না ধৈর্যশীল লোকজন। আপনি একাই শুধু সমস্যাগ্রস্ত নন। অন্যের সাথে তুলনা করে দেখলে আপনার সমস্যা নেহায়েত কম বলেই মনে হবে।
কত রুগ্ন ব্যক্তিই তো রোগ শয্যায় শুয়ে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে। কত লোক বন্দি হওয়ার কারণে বছরের পর বছর সূর্যের আলোর মুখ দেখেনি, তারা জেলখানার চৌহদি ছাড়া আর কোন কিছুই চেনে না! কত নারী-পুরুষ তাদের সন্তানদেরকে ভরা যৌবনে বা অকালে হারিয়েছে! কত লোকই না সমস্যাগ্ৰস্ত, অভাবগ্রস্ত ও নিপীড়িত!
যারা আপনার চেয়ে শোচনীয় অবস্থায় আছে, তাদের কথা মনে করে সান্ত্বনা লাভ করুন। জেনে রাখুন যে, এ দুনিয়া ঈমানদারদের জন্য জেলখানার মতোই একটি দুঃখ ও বিষন্নতার ঘর। সকালবেলা প্রাসাদগুলো মানুষে ভরা থাকে, আর মুহুর্তেই দুর্বিপাকে পড়ে সেগুলো বিরান হয়ে যায়! কখনো জীবন কয়েকদিনের বা ক্ষণিকের মধ্যেই দারিদ্র্য, মৃত্যু, বিচ্ছেদ ও অসুস্থতাও ঘটতে পারে।
“আর তোমরা তাদের আবাসস্থলেই বসবাস করতে, যারা নিজের উপর অত্যাচার করেছিল এবং আমি তাদের সাথে কী আচরণ করেছিলাম তা তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট ছিল। আর আমি তোমাদের জন্য অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি।” (১৪-সূরা ইবরাহীম: আয়াত-৪৫)
অভিজ্ঞ উট যেমন একটি মাত্র পাথরের উপর হাটু গেড়ে বসতে পারে। প্রয়োজন হলে আপনাকেও এর মতো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।
(বাইন মাছ যেমন কাদার মধ্যে থাকে, কিন্তু তার গায়ে কাদা জড়িয়ে যায় না, আপনিও তেমনি মন্দ পরিবেশে থেকেও মন্দে জড়াবেন না। সেই সাথে অন্যেরা ভালো হয় না বিধায় দুঃখবোধ করে নিজেকেও ধ্বংস করে দিবেন না। এ প্রসঙ্গে দেখুন- (২৬-সূরা আশ শোয়ারা: আয়াত-৩) -অনুবাদক।)
আপনাকে অবশ্যই আপনার সমস্যাবলিকে আপনার চারপাশের লোকদের সমস্যাবলির সাথে ও আপনার পূর্ববতী লোকদের সাথে তুলনা করেও দেখতে হবে। আপনার বুঝা উচিত যে, তাদের তুলনায় আপনি অনেক ভালো অবস্থাতেই আছেন এবং এটাও বুঝা উচিত যে, আপনি শুধু ছোটখাট কিছু সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার দয়ার জন্য তার প্রশংসা করুন। আপনার জন্য তিনি যা রেখে দিয়েছেন, তার জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করুন। তিনি যা ছিনিয়ে নিয়েছেন তার জন্যে তার নিকট পুরস্কার চান এবং দুর্দশাগ্রস্তদের কথা ভেবে সান্ত্বনা খোজ করুন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে আপনার জন্য ধৈর্যের পরম উপমা রয়েছে। উটের নাড়িভুড়ি তার মাথায় চাপানো হয়েছিল; তার পা থেকে রক্ত ঝরেছিল; তায়েফবাসী তাকে পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত করেছিল; তার চেহারা ফেটে গিয়েছিল; তাকে গিরিপথে বন্দী করা হয়েছিল, সেখানে তিনি গাছের পাতা খেতেও বাধ্য হয়েছিলেন; মক্কা থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল; যুদ্ধে তার সামনের দাত ভেঙে গিয়েছিল; তার নিষ্পাপ স্ত্রীকে অপবাদ দেয়া হয়েছিল; তাঁর সত্তর জন সাহাবীকে হত্যা করা হয়েছিল; তিনি তাঁর ছেলের ও অধিকাংশ মেয়েদের মৃত্যুর শোক পেয়েছিলেন; ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করার জন্য তিনি তার পেটে পাথর বেঁধে ছিলেন এবং তাকে কবি, জাদুকর, গণক, পাগল হওয়ার অপবাদও দেয়া হয়েছিল। আর এসবকিছু একই সময়ে ঘটেছিল। এতসব ঘটনার পরও তিনি অটল ধৈর্যধারণ করেছিলেন। এতসব সাংঘাতিক অগ্নিপরীক্ষা ও দুঃখ-কষ্টের মাঝেও মহান আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছিলেন।
নবী যাকারিয়া (আঃ)-কে হত্যা করা হয়েছিল, নবী মূসা (আঃ)-কে ভীষণ জ্বালাতন করা হয়েছিল; নবী ইব্রাহীম (আঃ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং সকল হক্ব ইমামগণও একইভাবে অত্যাচারিত হয়েছিলেন। উমর (রাঃ), উসমান (রাঃ) ও আলী (রাঃ) গুপ্তঘাতক কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন। অতীতের অনেক আলেমকে বন্দি ও অত্যাচার করা হয়েছিল।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا
“নাকি তোমরা একথা ভেবে বসে আছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনও তোমাদের পূর্ববতীদের মতো তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হয়নি? তারা অভাবগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত ও শিহরিত হয়েছিলেন।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২১৪)