নিজেকে অন্য মানুষে রূপান্তরিত করবেন না, অন্যের অনুকরণ করবেন না। নিজেদের কন্ঠস্বর, চালচলন, আচার-আচারণ, স্বভাব ও অভ্যাসকে ভুলে যাওয়ার ভান করে। এর যে সমস্ত কুফল দেখা দেয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কৃত্রিমতা, অশান্তি ও নিজের স্বতন্ত্র সত্তার বিনাশ।
আদম (আঃ) থেকে সর্বশেষ জন্মগ্রহণকারী শিশু পর্যন্ত কোন দুটি মানুষই দেখতে হুবহু একই রকম নয়। তবে কেন তাদেরকে অভ্যাস ও রুচিতে একই রকম হতে হবে?
আপনি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ- অতীতে কেউই আপনার মতো হয়নি আর ভবিষ্যতেও কেউই আপনার মতো হবেন না। যদু বা মধু থেকে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। সুতরাং অন্যকে অনুকরণ ও নকল করার প্রবণতা নিজের উপর জোর করে চাপিয়ে দিবেন না। নিজের স্বভাব ও ঝোঁক অনুসারেই সামনে এগিয়ে চলুন। (এখানে নিজের স্বভাব ও ঝোক বলতে নিজের সৎ স্বভাব ও ভালো ঝোঁকের কথাই বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে অনুকরণ না করা বলতে অন্যের কৃত্রিম ও কপট আচরণ তথা যেগুলো স্বভাবজাত না হওয়ার কারণে অনুকরণ করতে কষ্ট হয় সেগুলো অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা ইসলামের নীতি ও আদর্শের অনুকরণ ও অনুসরণ জরুরী -অনুবাদক ।)
قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَشْرَبَهُمْ
"প্রতিটি (দলের) লোকই নিজ নিজ পানির ঘাট চিনে নিয়েছিল”। (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৬০)
وَلِكُلٍّ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
প্রত্যেক জাতিরই একটি কেবলা আছে, যে দিকে সে অভিমুখী হয়, সুতরাং সৎকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। (২-সূরা বাকারা: আয়াত ১৪৮)
আপনাকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে সেভাবেই থাকুন এবং আপনার কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করবেন না অথবা আপনাকে বদলাবেন না। কুরআন হাদীসে যা পাওয়া যায় তার অনুসরণ করে আপনার ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করুন।
অন্যদেরকে অনুকরণ করে ও নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকার বঞ্চিত করে নিজের অস্তিত্বকে শূন্য করে দিবেন না।
আপনার রুচি ও পছন্দ একান্ত আপনারই এবং আমরাও চাই যে আপনি যেমন আছেন তেমনই থাকুন, বিশেষ করে এজন্য যে, ওভাবেই আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমরাও আপনাকে ওরকম বলেই জানি।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আর তোমাদের কেউ যেন অন্যের অনুকরণকারী না হয়।
চরিত্র, ধর্ম ও গুণের সংজ্ঞায় (পরিচয় দিতে গেলে) বলতে হয় যে, মানুষেরা গাছ-পালার মতো : টক-মিষ্টি, লম্বা-খাটো ইত্যাদি।
(অথাৎ গাছ-পালা যেমন কোনটি লম্বা হয় আবার কোনটি খাট হয়, মানুষও কেউ লম্বা হয় কেউ খাট হয়। গাছপালা (এর ফল-পাতা, ছাল-বাকল বা শিকড়) যেমন কোনটি মিষ্টি আবার কোনটি টক। মানুষও কেউ মিষ্টি পছন্দ করে আবার কেউ টক পছন্দ করে। সুতরাং আপনি খাট তাই লম্বা হওয়ার চেষ্টা করা অস্বাভাবিক ও তাই কষ্টকর। অনুরূপভাবে আপনি মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন কিন্তু অন্যের অনুকরণে টক খেতে অভ্যস্ত হতে চাওয়া অস্বাভাবিক ও আপনার জন্য কষ্টদায়ক। -অনুবাদ)
আপনার সৌন্দর্য ও ব্যঞ্জনা আপনার স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখছে। (সুতরাং অন্যের অনুকরণ করে অন্যের মতো হতে চেয়ে এগুলোর বিকৃতি সাধন করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। -অনুবাদক।) আমাদের বিভিন্ন বর্ণ, ভাষা, মেধা ও যোগ্যতা আমাদের শক্তিমান মহান স্রষ্টারই নিদর্শন; তাই ঐগুলোকে অস্বীকার করবেন না (অর্থাৎ ঐগুলোর স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে অন্যের মতো হওয়ার জন্য অন্যের অনুকরণ করে নিজের ক্ষতি করবেন না। -অনুবাদক)