মাকাম শব্দের আভিধানিক অর্থ, দন্ডায়মান হওয়ার জায়গা। আর মাকামে ইবরাহীম অর্থ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দন্ডায়মান হওয়ার জায়গা। এটি একটি বড় পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কা‘বা নির্মাণ করেছিলেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। কারণ,

  • এটি কা‘বা শরীফ নির্মাণের সময় ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নিয়ে এসেছিলেন, যাতে পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কা‘বাঘর নির্মাণ করতে পারেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাথর এনে দিতেন এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পবিত্র হাতে তা কা‘বার দেয়ালে রাখতেন। এভাবে তিনি কা‘বাঘর নির্মাণ করেন।[1]
  • এটি জান্নাত থেকে আগত ইয়াকূত পাথর। হাদীসে এসেছে, ‘রুকন (হাজরে আসওয়াদ) ও মাকামে ইবরাহীম- পাথর দু’খানি জান্নাতের ইয়াকুত পাথরগুলোর মধ্য থেকে দু’টি পাথর, আল্লাহ যেগুলোকে আলোহীন করে দিয়েছেন। যদি তিনি এসবকে আলোহীন না করে দিতেন, তবে তা পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করে দিত।’[2]
  • হারাম শরীফের প্রকাশ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে মাকামে ইবরাহীম। কা‘বাঘরের নির্মাণ কাজ শেষে ওই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি সারা বিশ্বের মানুষকে হজের আহবান জানিয়েছিলেন।[3]
  • কুরআনুল কারীমে মাকামে ইব্রাহীমকে হারাম শরীফের স্পষ্ট নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ فِيهِ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ ﴾ [ال عمران: ٩٧]

‘তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম।’[4]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, বাইতুল্লাহ্য় আল্লাহর কুদরতের স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এবং খলীলুল্লাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিদর্শনাবলি রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল ঐ পাথরে তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন, যার ওপর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।[5]

ইবনুল জাওযী বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন এখন পর্যন্ত মাকামে ইবরাহীমে বিদ্যমান। হারামবাসীদের কাছে এটি খুব পরিচিত।[6]

  • ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লাহ্‌র নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর মানুষকে এর ওপর দাঁড়িয়েই আহবান জানিয়েছিলেন, যেন তারা তালবিয়া পাঠ করতে করতে হজ পালনের উদ্দেশ্যে তাদের প্রভুর ঘরের দিকে ছুটে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَأَذِّن فِي ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَجِّ يَأۡتُوكَ رِجَالٗا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٖ يَأۡتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٖ ٢٧ ﴾ [الحج: ٢٧]

‘আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।’[7]

সে নির্দেশ অনুযায়ী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মাকামে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা প্রদান করলেন। ইবন আব্বাস রা. বলেন, ‘ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পাথরটির ওপর দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে মানুষ, তোমাদের ওপর হজ ফরয করা হয়েছে। ঘোষণাটি তিনি সে অনাগত প্রজন্মকেও শুনিয়ে দিলেন, যারা ছিল তখনও পুরুষের মেরুদন্ডে এবং নারীদের গর্ভে। যারা ঈমান এনেছিলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা হজ করবেন বলে আল্লাহ জানতেন তারা এ ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বললেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’।’[8]

  • ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্নের একটি ১০ সেন্টিমিটার গভীর ও অন্যটি ৯ সেন্টিমিটার। লম্বায় প্রতিটি পা ২২ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১১ সেন্টিমিটার। বর্তমানে এক মিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে মাকামের বাক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে। পিতল ও ১০ মিলি মিটার পুরো গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। ভেতরের জালে সোনা চড়ানো। হাজরে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইবরাহীমের দূরত্ব হল ১৪.৫ মিটার।[9]
  • তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। জায়গা না পেলে অন্য কোথাও আদায় করলে এ বিধান পালন হয়ে যায়।
[1]. বুখারী : ৩৩৬৪।

[2]. তিরমিযী : ৮৭৮; মুসনাদ আহমদ : ২/২১৩; ইবন খুযাইমা : ২৭৩১।

[3]. আল-ফাসী, শিফাউল গারাম : ২০৩/১।

[4]. আলে-ইমরান : ৯৭।

[5]. তাফসীরে তাবারী : ৪/১১।

[6]. ইবনে হাজার আস্কালানী ফাত্হুল বারীতে এ বক্তব্যটি ইবনুল জাওযী থেকে উদ্ধৃত করেছেন। ১৬৯/৮; তাফসীর ইবন কাসীর : ৩৮৪/১।

[7]. হজ : ২৭।

[8]. ইবন হাজার তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে ৬৬৮ নং হাদীসের সনদ সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন।

[9]. ড. মুহাম্মদ ইলয়াস আব্দুল গনী : প্রাগুক্ত, পৃ ৭৫-৭৬।