সঠিকভাবে তাওয়াফ করতে নিচের কথাগুলো অনুসরণ করুন - বাকি অংশ

৯. মহিলাদের তাওয়াফও পুরুষদের মতোই। তবে তারা রমল ও ইযতিবা করবে না। মহিলারা খালি জায়গা না পেলে তাদের জন্য পুরুষদের ভিড় ঠেলে হাজরে আসওয়াদ বা রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা জায়েয নেই। মহিলারা দো‘আ ও যিকিরে স্বর উঁচু করা থেকে বিরত থাকবে। পর্দা লঙ্ঘন বা রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা যাবে না। কারণ তা ফিতনা বয়ে আনতে পারে। চেহারা যেহেতু সকল সৌন্দর্যের আধার, তাই তা প্রকাশ করা যাবে না। মুসলিম মহিলাদের আদর্শ হলেন উম্মাহাতুল মুমিনীন। আর উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এক প্রান্তে পুরুষশূন্য জায়গায় তাওয়াফ করতেন। পুরুষদের এড়িয়ে একাকী চক্কর দিতেন। এক মহিলা তাঁকে বললেন, ‘হে উম্মুল মুমিনীন, চলুন পাথর ছুয়ে আসি’। তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, তুমি চলে যাও।[1] আতা রহ. উম্মাহাতুল মুমিনীনের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,

«وَكُنَّ يَخْرُجْنَ مُتَنَكِّرَاتٍ بِاللَّيْلِ فَيَطُفْنَ مَعَ الرِّجَالِ وَلَكِنَّهُنَّ كُنَّ إِذَا دَخَلْنَ الْبَيْتَ قُمْنَ حَتَّى يَدْخُلْنَ .وَأُخْرِجَ الرِّجَالُ».

‘তাঁরা রাতের বেলা অপরিচিতরূপে বের হয়ে পুরুষদের সাথে তাওয়াফ করতেন। তবে তাঁরা যখন কা‘বা ঘরে প্রবেশ করতে চাইতেন, তখন পুরুষদের বের করে দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। পুরুষরা বের হলে তাঁরা প্রবেশ করতেন।’[2]

‘আয়েশা রা. এর এক দাসী সাতবার বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং দু’বার বা তিনবার হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন, তা দেখে আয়েশা রা. বললেন,

«لاَ آجَرَكِ اللَّهُ، لاَ آجَرَكِ اللَّهُ تُدَافِعِينَ الرِّجَالَ أَلاَ كَبَّرْتِ وَمَرَرْتِ».

‘আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দেবেন না, আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দেবেন না। পুরুষদের সাথে তুমি ঠেলাঠেলি করছো? কেন তুমি তাকবীর দিয়ে অতিক্রম করোনি?’[3]

১০. তাওয়াফকালে যদি চক্করের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে যে সংখ্যার দিকে ধারণা প্রবল হবে সেটাকেই ধরে নিতে হবে। আর যদি কোন সংখ্যার ব্যাপারেই ধারণা প্রবল না হয়, তাহলে কম সংখ্যাটাই ধর্তব্য হবে এবং সে অনুযায়ী চক্কর পুরো করবে। যেমন : তার যদি সন্দেহ হয়, ছয় চক্কর দিয়েছে না সাত চক্কর? তাহলে ছয় চক্কর হয়েছে বলেই গণনা করবে। পক্ষান্তরে এ সন্দেহ যদি তাওয়াফ শেষ করার পর দেখা দেয়, তাহলে একে আমলে নেবে না, যতক্ষণ না কম হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ধারণা হয়। সুতরাং যদি কম হওয়ার ধারণাটি নিশ্চিত হয়, তাহলে ফিরে আসবে এবং সংখ্যা পূর্ণ করবে।

১১. যদি হাজীর পক্ষে অসুস্থতা বা বার্ধক্য হেতু চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তার জন্য অন্যের পিঠে বা বাহনে চড়ে তাওয়াফ করা জায়েয আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মে সালমা রা. নিজের সমস্যার কথা জানালে তিনি বললেন,

«طُوفِي مِنْ وَرَاءِ النَّاسِ وَأَنْتِ رَاكِبَةٌ».

‘বাহনে চড়ে লোকদের পেছনে পেছনে তাওয়াফ করো’![4] আরেক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন,

«إِذَا أُقِيمَتْ صَلاَةُ الصُّبْحِ فَطُوفِي عَلَى بَعِيرِكِ وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ فَفَعَلَتْ ذَلِكَ فَلَمْ تُصَلِّ حَتَّى خَرَجَتْ».

‘ফজরের সালাত শুরু হলে লোকেরা যখন সালাতে রত হবে, তুমি তখন উটের পিঠে বসে তাওয়াফ করবে।’ তিনি তাই করেন এবং লোকেরা বের হয়ে যাবার পর সালাত আদায় করে নেন।’[5]

তাওয়াফ সহীহ হওয়ার জন্য জরুরী বিষয়গুলো হলো: পবিত্রতা অর্জন করা, সতর ঢাকা, হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে সেখানেই শেষ করা, সাত চক্কর দেয়া, কা‘বাঘর বাঁ পাশে রাখা, পুরো কা‘বাঘর ঘিরেই তাওয়াফ করা এবং ধারাবাহিকভাবে তাওয়াফ পূর্ণ করা। তবে মাঝখানে ফরয সালাত বা জানাযা হাজির হলে সালাতের পর চক্কর পূর্ণ করবেন।

[1]. বুখারী : ১৬১৮।

[2]. বুখারী : ১৬১৮।

[3]. বাইহাকী : ৫/৮১; মুসনাদে শাফেঈ : ১২৭।

[4]. বুখারী : ১৬১৯; মুসলিম : ১২৭৬।

[5]. বুখারী : ১৬২৬।