১. মক্কা নগরীতে কোন পাপের ইচ্ছা করা
মক্কা মুকাররমায় পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে কুরআনুল কারীমে কঠোর সাবধানবাণী এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَن يُرِدۡ فِيهِ بِإِلۡحَادِۢ بِظُلۡمٖ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٢٥ ﴾ [الحج: ٢٥]
‘আর এখানে যে সামান্যতম পাপাচারের ইচ্ছে পোষণ করবে তাকে আমি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করব।’[1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিন ধরনের লোক আল্লাহর কাছে বেশি ঘৃণিত। হারাম শরীফের মধ্যে অন্যায়কারী, ইসলামের ভেতরে জাহিলি রীতি-নীতি অন্তর্ভুক্তকারী এবং অন্যায়ভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যাকারী।’[2]
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, কুরআনের উল্লেখিত আয়াতে অন্যায় কর্মের নিছক ইচ্ছা পোষণ করার জন্য কঠিন শাস্তির হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে যদিও সে বাস্তবে সে ইচ্ছা পূরণ করেনি। তাহলে যে বাস্তবে অন্যায় করবে তার অবস্থা কেমন হবে? তাই আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, ইয়ামানে অবস্থিত এডেন শহরে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি যদি হারামে কোন ধরনের অন্যায়ের ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন![3]
২. মক্কাবাসিদের কষ্ট দেয়া ও সেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَإِذۡ جَعَلۡنَا ٱلۡبَيۡتَ مَثَابَةٗ لِّلنَّاسِ وَأَمۡنٗا ﴾ [البقرة: ١٢٥]
‘আর স্মরণ করুন, যখন আমি কা‘বা ঘরকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র এবং শান্তির আলোয় করলাম।’[4] তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ ١ وَطُورِ سِينِينَ ٢ وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ ٣ ﴾ [التين: ١، ٣]
‘তীন, যাইতুন, তূর পর্বত এবং এ নিরাপদ শহরের শপথ।’[5] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ أَوَ لَمۡ يَرَوۡاْ أَنَّا جَعَلۡنَا حَرَمًا ءَامِنٗا وَيُتَخَطَّفُ ٱلنَّاسُ مِنۡ حَوۡلِهِمۡۚ أَفَبِٱلۡبَٰطِلِ يُؤۡمِنُونَ وَبِنِعۡمَةِ ٱللَّهِ يَكۡفُرُونَ ٦٧ ﴾ [العنكبوت: ٦٧]
‘তারা কি দেখে না যে, আমি (মক্কাকে) নিরাপদ পবিত্র অঞ্চল বানিয়েছি, অথচ তাদের আশপাশ থেকে মানুষদেরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়? তাহলে কি তারা অসত্যেই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করবে?’[6] এ কারণেই মক্কা নগরীতে বিনা প্রয়োজনে অস্ত্রধারণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَحِلُّ لأَحَدٍ أَنْ يَحْمِلَ السِّلاَحَ بِمَكَّةَ».
‘মক্কা নগরীতে কারো জন্য অস্ত্র বহন করা বৈধ নয়।’[7]
অতএব হারাম শরীফে অবস্থানকারী ও আগমনকারী সকলকে সাবধান থাকতে হবে যে, হারাম শরীফের পবিত্রতা যেন নষ্ট না হয়, আর এখানকার কোন লোকের কষ্ট ও যেন না হয়। এমনকি কোন ধরনের ভীতি প্রদর্শনও অবৈধ। এগুলো জঘন্য অপরাধের অন্তর্ভুক্ত।
৩. মক্কা নগরীতে কাফের ও মুশরিকদের প্রবেশ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ فَلَا يَقۡرَبُواْ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هَٰذَاۚ وَإِنۡ خِفۡتُمۡ عَيۡلَةٗ فَسَوۡفَ يُغۡنِيكُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦٓ إِن شَآءَۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٢٨ ﴾ [التوبة: ٢٨]
‘হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক, সুতরাং তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয় তাদের এ বছরের পর। আর যদি তোমরা দারিদ্র্যকে ভয় কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ অনুগ্রহে তোমাদের অভাবমুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’[8]
মহান আল্লাহর এ নির্দেশটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবম হিজরী সালে আবূ বকর রা. কে মক্কায় পাঠালেন এ ঘোষণা দেয়ার জন্যে যে,
«أَنْ لاَ يَحُجُّ بَعْدَ الْعَامِ مُشْرِكٌ وَلاَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ».
‘এ বছরের পর কোন মুশরিক হজ করতে পারবে না এবং কেউ উলঙ্গাবস্থায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না।’[9]
৪. হারাম এলাকায় শিকার করা, গাছ কাটা বা পড়ে থাকা জিনিস উঠানো
মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনতার সামনে বক্তব্য রাখলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর হাম্দ ও সানা বর্ণনা করেন, অতঃপর বললেন,
«إِنَّ اللهَ حَبَسَ عَنْ مَكَّةَ الْفِيلَ وَسَلَّطَ عَلَيْهَا رَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ وَإِنَّهَا لَنْ تَحِلَّ لِأَحَدٍ كَانَ قَبْلِي وَإِنَّهَا أُحِلَّتْ لِي سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ وَإِنَّهَا لَنْ تَحِلَّ لِأَحَدٍ بَعْدِي فَلاَ يُنَفَّرُ صَيْدُهَا وَلاَ يُخْتَلَى شَوْكُهَا وَلاَ تَحِلُّ سَاقِطَتُهَا إِلاَّ لِمُنْشِدٍ ....»
‘আল্লাহ হস্তির দল থেকে মক্কাকে রক্ষা করেছেন এবং সে মক্কার ওপর তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের বিজয় দান করেছেন। এ মক্কা আমার আগে কারো জন্য কখনো হালাল (লড়াই করার অনুমতি) ছিল না, তবে আজ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে আমার জন্য হালাল করা হয়েছে (এতে লড়াই করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে) এবং আজকের পর আর কখনো এটাকে কারো জন্য হালাল করা হবে না। অতএব এখানকার কোন পশুকে তাড়ানো যাবে না, এখানকার কোন কাঁটা তোলা যাবে না। এখানকার পড়ে থাকা কোন জিনিস হালাল হবে না। তবে ঘোষণাকারী (সঠিক মালিকের কাছে পৌঁছাবার লক্ষ্যে) ঘোষণা দেয়ার জন্য সেটা উঠাতে পারে।’[10]
তবে কষ্টদায়ক জীব হত্যা করা বৈধ করা হয়েছে। তা হারাম এলাকায় হোক অথবা হারাম এলাকার বাইরে যমীনের যে কোন জায়গায় হোক। এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট হাদীস রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَمْسٌ مِنْ الدَّوَابِّ كُلُّهُنَّ فَاسِقٌ يَقْتُلُهُنَّ فِي الْحَرَمِ الْغُرَابُ وَالْحِدَأَةُ وَالْعَقْرَبُ وَالْفَأْرَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ».
‘পাঁচ ধরনের প্রাণীর সবগুলোই ক্ষতিকারক, যেগুলোকে হারামেও হত্যা করা যাবে : কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।’[11]
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَمْسٌ فَوَاسِقُ يُقْتَلْنَ فِي الْحِلِّ وَالْحَرَمِ الْحَيَّةُ وَالْغُرَابُ الْأَبْقَعُ وَالْفَأْرَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ وَالْحُدَيَّا».
‘পাঁচটি প্রাণী ক্ষতিকারক। হিল্ল (মীকাত ও হারামের মধ্যবর্তী স্থান) অথবা হারামে যেখানেই পাওয়া যাবে সেগুলো হত্যা করা যাবে : সাপ, কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল।’[12]
আলিমগণ বলেন, উল্লিখিত হাদীসসমূহে যেসব প্রাণীর নাম বলা হয়েছে। তাছাড়াও অন্যান্য ক্ষতিকারক প্রাণীও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
[2]. বুখারী : ৬৮৮২।
[3]. মুসনাদে আহমাদ ২/৪২৮; তাবারী : ১৭/১০৪।
[4]. বাকারা ১২৫।
[5]. তীন : ১-৪।
[6]. আনকাবূত : ৬৭।
[7]. সহীহ ইবন হিববান : ৩৭১৪।
[8]. তওবা : ২৮।
[9]. বুখারী : ১৬২২।
[10]. বুখারী : ......; মুসলিম : ........।
[11]. বুখারী : ১৮২৯; মুসলিম : ১১৯৮।
[12]. মুসলিম : ১১৯৮।