১. আযানের সময় এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثِنْتَانِ لاَتُرَدَّانِ أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَعِنْدَ الْبَأسِ حِيْنَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا».
‘দু’টি সময়ের দো‘আ প্রত্যাখ্যাত হয় না বা খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয় : আযানের সময়ের দো‘আ এবং যুদ্ধের সময় যখন একে অপরকে আঘাত করতে থাকে।’[1]
২. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلاَ إِنَّ الدُّعَاءَ لاَ يُرَدُّ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ فَادْعُوا».
‘জেনে রাখো, আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দো‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। অতএব তোমরা দো‘আ কর।’[2]
৩. সিজদারত অবস্থায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ».
‘বান্দা তার প্রতিপালকের সবচে’ বেশি নিকটবর্তী হয় সিজদারত অবস্থায়। সুতরাং তোমরা অধিক পরিমাণে দো‘আ কর।’[3]
৪. জুমার দিনের শেষ সময়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَوْمُ الْجُمُعَةِ ثِنْتَا عَشْرَةَ يُرِيدُ سَاعَةً لاَ يُوجَدُ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ شَيْئًا إِلاَّ آتَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ».
‘জুমআর দিনের সময়গুলো বারটি ভাগে বিভক্ত। তন্মধ্যে একটি সময় এমন যে, ঐ সময়ে কোন মুসলিম আল্লাহ তা‘আলার কাছে যা চায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা দিয়েই দেন। অতএব তোমরা আসরের পরের শেষ সময়ে তা তালাশ কর।’[4]
৫. রাতের শেষভাগে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَنْزِلُ رَبُّنَا كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرِ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ».
‘আমাদের রব প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। এরপর বলতে থাকেন, কেউ কি আমার নিকট দো‘আ করবে, আমি তার দো‘আ কবুল করব? কেউ কি আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে তা দান করবো? কেউ কি আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো?’[5]
৬. সিয়াম পালনকারী, মুসাফির, মাযলুম, সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ এবং সন্তানের জন্য পিতার বদদো‘আ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْوَالِدِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ».
‘তিনটি দো‘আ এমন যে, তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই : সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ; মুসাফির ব্যক্তির দো‘আ এবং মাযলুমের দো‘আ।[6] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,ِ ‘সিয়াম পালনকারীর দো‘আ।’[7] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয রা. কে ইয়ামানের উদ্দেশ্যে প্রেরণের সময় বলেছিলেন,
«اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ».
‘মাযলুমের (বদ) দো‘আ থেকে বেঁচে থাক। কারণ মাযলুমের দো‘আ এবং আললাহর মাঝে কোনো অন্তরায় নেই।’[8]
৭. অসহায় ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দো‘আ। আল্লাহ তা‘আলা অসহায় ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দো‘আ কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ ﴾ [النمل: ٦٢]
‘বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহবানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন।’[9]
৮. আরাফার দিবসের দো‘আ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِى. لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِير»
‘উত্তম দো‘আ হচ্ছে আরাফার দিনের দো‘আ, আর সেই বাক্য যা আমি ও আমার পূর্ববতী নবীগণ বলেছি, (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।) ‘আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’[10]
৯. হজ ও উমরাকারী এবং আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদকারির দো‘আ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ ، وَفْدُ اللهِ ، دَعَاهُمْ ، فَأَجَابُوهُ ، وَسَأَلُوهُ ، فَأَعْطَاهُمْ».
‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী, হজ ও উমরাকারী আল্লাহর দূত। তিনি তাদেরকে ডেকেছেন, তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছে। তারা তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছে, তাই তিনি তাদেরকে তা দান করেছেন।’[11]
[2]. আহমদ : ২১২২১; তিরমিযী : ২১২।
[3]. মুসলিম : ২৮৪।
[4]. আবূ দাউদ : ৪৮১০; নাসাঈ : ৯০১৩।
[5]. মুসলিম : ৭৫৭।
[6]. আল-আদাবুল মুফরিদ : ৩২; আবূ দাউদ : ৩৬১৫।
[7]. আবূ দাউদ : ৩৬১৫; তিরমিযী : ৫০১৯।
[8]. বুখারী : ৪৮২৪।
[9]. নামল : ২৬।
[10]. তিরমিযী : ৩৫৭৫।
[11]. তিরমিযী : ৩৫৮৫।