মুসলিমের মাথা কখনো থাকে লম্বা চুলে ঢাকা; আবার কখনো থাকে নেড়া। বিশেষ করে উমরা বা হজ্জ করার পর মাথা নেড়া করতে হয়। অতঃপর সেই চুল ধীরে ধীরে বড় হয়, মাঝারি হয় এবং লম্বা হয়। সেই হিসাবে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর মাথার চুলও প্রকৃতিগতভাবে সব ধরনের ছিল। কখনো ছিল কানের অর্ধেক বরাবর লম্বা।[1] কখনো ছিল তার থেকে বেশী লম্বা; কানের লতি বরাবর। আর আরবীতে একে ‘অফরাহ’ বলা হয়।
কখনো ছিল তার থেকেও বেশী লম্বা; কানের নিচ বরাবর; কান ও কাঁধের মাঝ বরাবর। একে আরবীতে ‘লিম্মাহ’ বলা হয়।[2]
আবার কখনো ছিল তার থেকেও বেশী লম্বা কাঁধ বরাবর। আরবীতে যাকে ‘জুম্মাহ’ বলা হয়।[3] কখনো তিনি তাঁর ঐ লম্বা চুলে চারটি বেণি গেঁথে নিতেন।[4]
ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, এমন (লম্বা) চুল রাখা সুন্নাত। আমাদের সামর্থ্য হলে আমরাও রাখতাম। কিন্তু তা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।[5]
উল্লেখ্য যে, সুন্নাতী ([6]) সবচেয়ে বড় চুল হল কাঁধ বরাবর। এর চেয়ে বড় চুল রাসুল (ﷺ) এর তরীকার খিলাপ। তিনি মাথায় তেল ব্যবহার করতেন।[7] তিনি মাথার চুলকে আঁচড়ে সুবিন্যস্ত করে রাখতেন। তিনি বলতেন, ‘‘যার চুল আছে, সে যেন তার যত্ন করে।’’[8]
একদা তিনি (ﷺ) এক ব্যক্তির মাথায় এলোমেলা চুল দেখে বললেন, ‘‘এর কি এমন কিছুও নেই যে, তার দ্বারা মাথার এলোমেলো চুলগুলোকে সোজা করে (আঁচড়ে) নেয়?!’’[9]
তবে চুলের যত্নে বাড়াবাড়ি করা যাবে না; যেমন মহিলারা করে থাকে। যেহেতু রাসুল (ﷺ) প্রত্যেক দিন চুল আঁচড়াতেন না। বরং মাঝে মাঝে একদিন করে বাদ দিয়ে আঁচড়াতেন। তিনি প্রত্যহ চুল আঁচড়াতে নিষেধও করেছেন।[10]
তিনি নিষেধ করেছেন (বেশী বেশী তেল-শ্যাম্পু দিয়ে) চুলের বিলাসিতা করতে।[11]
তিনি চুল আঁচড়াবার সময় ডান দিক থেকে শুরু করতেন।[12] তিনি তাঁর মাথার মাঝখানে সিঁথি করতেন।[13]
অতএব চুল লম্বা হলে মাঝে সিঁথি করা সুন্নাত এবং সিঁথি না করে ছেড়ে রাখা মকরূহ। যেহেতু তাতে আহলে কিতাবের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। অবশ্য চুল ছোট হলে সিঁথি না করে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে রাখায় দোষ নেই।[14]
প্রকাশ থাকে যে, বাম বা ডান দিকে টেরি করা সুন্নাতী তরীকা নয়। বরং তা বিজাতির অনুকরণে করলে অবৈধ।
তদনুরূপ বিজাতি বা হিরোদের অনুকরণ করে চুল কাটিং ও থাক থাক করা বৈধ নয়। যেহেতু রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির আনুরূপ্য অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত।’’[15]
সতর্কতার বিষয় যে, আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর চুল লম্বা হলেও মাস্তানদের চুল কিন্তু ঐ শ্রেণীর নয়। মাস্তানদের চুল আসলে হিরোদের অনুকরণে রাখা হয়।
আধুনিক যুগে প্রসিদ্ধ অথবা কাফের ব্যক্তিত্ব, হিরো অথবা পশুর অনুকরণে সেই নামে চুলের নানা ডিজাইন ও কাটিং প্রচলিত হয়েছে যুবক-যুবতীদের মাঝে। যেমন স্পাইক, কেয়ারলী, সীজার, মাইকেল, লায়ন, ফ্র্যান্সী, ইংরেজী, বাংলা, রাহুল, কাপূরী, বাবরী, সাধনা, ডিয়ানা, র্যাট, আলবার্ট, আর্মী, বব, হিপ্পী, রাউ-, রানিং, স্টপ, সেস্নাপ প্রভৃতি। ঐ শ্রেণীর মানুষ বা পশুর অনুকরণে এ সকল ডিজাইন ও কাটিং ব্যবহার কোন মুসলিম করতে পারে না।
প্রকাশ থাকে যে, আয়না দেখার সময় পঠনীয় কোন দু‘আ নেই। যেহেতু সে ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়।[16]
[2]. আবূ দাঊদ হা/৪১৮৬, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৬৩৪, ঐ ২২
[3]. ঐ ৩
[4]. ঐ ২৩
[5]. আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ ৩/৩২৮
[6]. প্রকাশ থাকে যে, অনেকে আল্লাহর নবী (সাঃ) এর মাথার চুল রাখার ব্যাপারটাকে তাঁর প্রকৃতিগত অভ্যাস মনে করেছেন।
[7]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৩৪৪
[8]. আবূ দাঊদ হা/৪১৬৩
[9]. আবূ দাঊদ হা/৪০৬২, নাসাঈ হা/ ৫২৩৬, মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৪৪৩৬, মিশকাত হা/ ৪৩৫১
[10]. নাসাঈ হা/ ৫০৫৪, মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ ২৮
[11]. আবূ দাঊদ হা/৪১৬০, নাসাঈ
[12]. ঐ ২৭
[13]. আবূ দাঊদ হা/৪১৮৯, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৬৩৩
[14]. শা’রুর রা’স ৫০পৃঃ
[15]. আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ হা/৪০৩১, সহীহুল জা’মে হা/৬০২৫
[16]. ইরওয়াউল গালীল ১/১১৫