ইসলামী জীবন-ধারা বেশভূষার আদব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

ইসলাম যেমন মুসলিমের আভ্যন্তরিক দিক পবিত্র করার তাকীদ দেয়, ঠিক তেমনিই তাকীদ দেয় তার বাহ্যিক দিকটাও পবিত্র ও সুন্দর করার।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলাম মানুষের লজ্জাস্থান ঢাকাকে ফরয ঘোষণা করেছে। সুতরাং কোন মুসলিম একাকী থাকলেও উলঙ্গ থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

‘‘হে মানব জাতি! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে লেবাস দিয়েছি। পরন্তু ‘তাকওয়া’র লেবাসই সর্বোৎকৃষ্ট।[1] মু’মিন বান্দাগণের গুণ বর্ণনা করে তিনি আরো বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ - إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ (المعارج ২৯-৩০)

অর্থাৎ, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে, তবে নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসিগণের ক্ষেত্রে অন্যথা করলে তারা তিরস্কৃত নয়।[2]

রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্য মানুষ থেকে নিজের লজ্জাস্থান হিফাযত কর। নিজেদের আপোসে থাকলেও যথাসাধ্য তা কাউকে দেখাবে না এবং একাকী নির্জনে থাকলেও (উলঙ্গ থাকবে না। কারণ) মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাঁকে লজ্জা করা হবে।’’[3] শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘‘(পুরুষের) নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থান হল লজ্জাস্থান।’’[4] রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তুমি তোমার ঊরু খুলে রেখো না এবং কোন জীবিত অথবা মৃতের ঊরুর দিকে তাকিয়ে দেখো না।’’[5] তিনি অন্যত্র বলেন,

غَطِّ فَخِذَكَ فَإِنَّ فَخِذَ الرَّجُلِ عَوْرَةٌ

তুমি তোমার জাং ঢেকে নাও। কারণ, জাং হল লজ্জাস্থান।’’[6]

যেহেতু গোসল করার সময় লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার ভয় থাকে, তাই সেই সময়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করতে শরীয়ত আমাদেরকে নির্দেশ দেয়। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ আয্যা অজাল্লা অতি লজ্জাশীল ও গোপনকারী। তিনি লজ্জাশীলতা ও গোপনীয়তাকে পছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের কেউ গোসল করলে সে যেন পর্দা করে নেয়।’’[7]

আর সে জন্যই ফাঁকা পুকুর, নদী বা সমুদ্রঘাটে গোসল করা বৈধ নয়। বরং যেমনই হোক বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বাড়িতে বাথরুম করা একান্ত জরুরী।

শরীয়তের সভ্য-দৃষ্টিতে সাধারণভাবে লেবাসের কতকগুলি শর্ত ও আদব রয়েছে; যা পালন করতে মুসলিম নরনারী বাধ্য।

[1]. সূরা আ’রাফ-৭:২৬

[2]. সূরা মু’মিনূন-২৩: ৫-৬, সূরা মাআরিজ-৭০:২৯-৩০

[3]. আবূ দাঊদ হা/৪০১৭, তিরমিযী হা/২৭৯৪, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৯২০

[4]. হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৫৫৮৩

[5]. আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৭৪৪০

[6]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম, ইবনে হিববান, সহীহুল জা’মে হা/৭৯০৬

[7]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৭৫০৯, আবূ দাঊদ হা/৪০১২, নাসাঈ হা/ ৪০৬