অত্যাবশ্যকীয় মূলনীতি, যার দ্বারা আমরা নিষিদ্ধ অনুসরণ-অনুকরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে সক্ষম হবো

প্রথম মূলনীতি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এমন সত্য ও বাস্তব সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যা কখনো না ঘটে থাকতে পারে না। (আর তা হলো) এ উম্মাত অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে। আর আমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের অনুসরণ সংক্রান্ত হাদিসটি বিশুদ্ধ হাদিস, যা ‘সহীহ’ ও ‘সুনান’ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«لتتبعن سنن من قبلكم شبرا بشبر وذراعا بذراع».

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে”।[1]

আর এ হাদীসটি ছাড়াও আরও অনেক হাদীস রয়েছে, যেগুলো দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, এ উম্মাতের অনেক গোষ্ঠী ও দল কাফিরদের অনুসরণে লিপ্ত হবে। আর তাদের যেসব রীতি-নীতির কথা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেগুলো আকীদা (মৌলিক বিশ্বাস), ইবাদত, বিধি-বিধান, স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ ও যাবতীয় উৎসবকেই অন্তর্ভুক্ত করে, যেমনটি আলেমগণ বলেছেন।

এখানে আমাদের পূর্ববর্তীগণ বলতে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অপরাপর হাদীসসমূহে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে সেগুলো বর্ণনা করার অবকাশ নেই, তবে সেসব হাদীসের কোনো কোনোটিতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো পারস্য ও রোমবাসী। আবার কোনো কোনোটিতে তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ, আবার কোনো কোনোটিতে তিনি তাদেরকে সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো কাফির এবং কোনোটিতে তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো মুশরিক। বস্তুত হাদীসের এসব ভাষ্যের এক অংশ অপর অংশকে সমর্থন করে।

অনুরূপভাবে এটা জানাও আবশ্যক যে, উম্মাতের মধ্য থেকে যারা কাফিরদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে, তারা হবে কিছু ফির্কা বা সম্প্রদায়; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন যে, অবশ্যই এ উম্মাতের মধ্য থেকে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের ওপর স্পষ্টভাবে অবশিষ্ট (অটল) থাকবে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত দল, তারা সত্য প্রচার করবে, সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎকর্ম থেকে নিষেধ করবে, যে ব্যক্তি তাদেরকে অপমানিত করবে সে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে শত্রুতা করবে, সেও তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আর এসব লোকজনই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত দল। এ দলের মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য এবং সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য অন্যতম আবশ্যকীয় বিষয় হলো, তাদের দ্বারা কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ না ঘটা।

সুতরাং এর ওপর ভিত্তি করে উম্মাত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ‘তারা অবশ্যই ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের রীতিনীতির অনুসরণ করবে’ বলে যে সংবাদ প্রদান করেছেন, তার মানে হলো এ উম্মাতের কিছু গোষ্ঠী ও দল, তারা বিচ্ছিন্ন কিছু দল, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে গেছে।

দ্বিতীয় মূলনীতি: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে কাফিরদের রীতি-নীতির অনুকরণ বা অনুসরণ করার ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন, তখন তিনি এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।

প্রথমত: এ ব্যাপারে তাঁর সংবাদ পরিবেশন করাটা সতর্ক করাকে অন্তর্ভুক্ত করে।

দ্বিতীয়ত: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কাফিরদের বেশভূষা ধারণ করা (অনুকরণ করা) থেকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে, কখনও সংক্ষিপ্তভাবে আবার কখনও বিস্তারিতভাবে।

  • সংক্ষিপ্তভাবে, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«من تشبه بقوم فهو منهم».

“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে চলবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”।[2]

আরও যেমন, এ হাদীসের মতো যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে, যাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لتتبعن سنن من قبلكم ...».

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে ...।”[3] সুতরাং এটা হলো সতর্ক করার দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং অনুসরণ-অনুকরণ সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সংবাদ প্রদানের পন্থায়।

অনুরূপভাবে হাদীসের অনেক ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «خالفوا المشركين» (তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর)।[4]«خالفوا اليهود» (তোমরা ইয়াহূদীগণের বিরুদ্ধাচরণ কর)।[5]«خالفوا المجوس» (তোমরা অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর)।[6] হাদীসের এসব ভাষ্যসমূহ সাধারণভাবে এসেছে।

  • আর বিস্তারিতভাবে, অচিরেই ইনশাআল্লাহ অষ্টম বিষয়ের আলোচনায় এমন কিছু কর্মকাণ্ডের নমুনা আসবে, যাতে সংবাদ প্রদান ও সতর্ক করার দৃষ্টিভঙ্গিতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, অচিরেই মুসলিমগণের কেউ কেউ কাফিরদের অনুসরণ ও অনুকরণে লিপ্ত হবে।

তৃতীয় মূলনীতি: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সংবাদ প্রদান করা যে, তাঁর উম্মাতের মধ্য থেকে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকবে; যে ব্যক্তি তাদেরকে অপমানিত করবে, সে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে শত্রুতা করবে, সেও তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

তবে অনুকরণ-অনুসরণের বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার সময় এ মূলনীতিগুলোর এক অংশকে অপর অংশ থেকে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়; কারণ, আমরা যদি (হাদীসের) এসব ভাষ্যসমূহের এক অংশকে অপর অংশ থেকে আলাদা করি, তাহলে জনগণের কেউ কেউ ধারণা করবে যে, মুসলিমগণের সকলেই (কাফিরদের) অনুকরণ করার মধ্যে ডুবে যাবে। আর এটা কখনও সম্ভব নয়; কারণ, এটা দীন সংরক্ষণ করার বিপরীত ভূমিকা পালন করবে, অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা (দীন) সংরক্ষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

তাছাড়া এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত ঐ তথ্যের বিপরীত, যাতে তিনি বলেছেন: তাঁর উম্মাতের মধ্যে একটি দল রয়েছে, যারা সত্যের ওপরে স্পষ্টত অটল থাকবে।

যেমনিভাবে আমরা যদি অপর এ হাদিসটিকে গ্রহণ করি, আর তা হলো: «ستبقي طائفة» (নিশ্চয় একটি দল অবশিষ্ট থাকবে...) এবং যদি প্রথম হাদীসটিকে গ্রহণ না করি, আর তা হলো:«لتتبعن سنن كان من قبلكم...» (তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে), তাহলে জনগণের কেউ কেউ ধারণা করবে যে, এ উম্মাত (জাতি) কাফিরদের অনুকরণ করার মতো কাজে জড়িয়ে পড়া থেকে মুক্ত।

আর প্রকৃত বিষয় এটা বা ওটা কোনোটাই নয়, বরং নিশ্চিতভাবে মধ্যমপন্থী উম্মাত হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত অবিশিষ্ট থাকবে, যারা (কাফির ও মুশরিকদের) অনুকরণ না করে সুন্নাতের ওপর অটল থাকবে। আর অপরাপর জাতি বা গোষ্ঠীসমূহ, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, বস্তুত কাফির ও মুশরিকদের অনুসরণ-অনুকরণে জড়িয়ে পড়ার কারণেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে; সুতরাং যখনই কোনো গোষ্ঠী বা দল সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যাবে তখনই তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের রীতি-নীতিগুলোর কোনো কিছুতে জড়িয়ে পড়বে। এর কিছু নমুনা অচিরেই বর্ণনা করা হবে।

[1] হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন; ‘ফতহুল বারী’: ১৩/৩০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৬৬৯।

[2] ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং- ৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’, হাদীস নং- ৬০২৫।

[3] হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন; ‘ফতহুল বারী’: ১৩/৩০০; মুসলিম, হাদীস নং- ২৬৬৯।

[4] অচিরেই তার তথ্যসূত্রের বিবরণ আসছে।

[5] অচিরেই তার তথ্যসূত্রের বিবরণ আসছে।

[6] অচিরেই তার তথ্যসূত্রের বিবরণ আসছে।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে