১১ যিলহজ: মিনায় রাত্রিযাপন ও জামরাতে কংকর নিক্ষেপ
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত মসজিদুল হারামে আদায় করে, তাওয়াফে যিয়ারত শেষে মিনায় ফিরে এসেছেন ও তাশরীকের রাত্রিগুলো মিনায় অবস্থান করেছেন। মিনায় তাশরীকের রাত্রীযাপন গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। বিভিন্ন মতাদর্শের বেশিরভাগ আলেম ও উলামা মিনায় তাশরীকের রাত্রীযাপন করাকে অত্যাবশ্যকীয় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।[1]
- আপনি যদি ১০ যিলহজ দিনের বেলায় তাওয়াফে ইফাদাহ না করে থাকেন তবে উত্তম হবে এ তাশরীকের রাতটি মিনায় অবস্থান করে পরদিন সকালে মক্কায় গিয়ে ফরয তাওয়াফ সম্পন্ন করা। আবার আপনি যদি মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ শেষ করে সন্ধা বা মধ্যরাতের আগে মিনায় ফিরে আসতে পারেন তবেও কোনো সমস্যা নেই। মিনায় রাতের অর্ধেকের বেশি সময় অবস্থান করা সহ রাত্রিযাপন করা বাঞ্চনীয়। আপনার শক্তি-সামর্থ, যাতায়াত পরিস্থিতি ও দলের লোকদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
- আপনি যদি আগের দিন ফরয তাওয়াফ না করে থাকেন তবে ১১ যিলহজ দিনের বেলায় মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে অথবা মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে দুই রাকাত সালাত পড়ুন, যমযমের পানি পান করুন এবং সা‘ঈ করে আবার মিনায় ফিরে আসুন।
- এবার মিনায় দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনটি জামরাহে গিয়ে কংকর নিক্ষেপ করুন, এটি কংকর নিক্ষেপের উত্তম সময়। এতে মোট ২১টি কংকর লাগবে (প্রতিটির জন্য ৭টি করে)। অবশ্য দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে সুবহে সাদিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কংকর নিক্ষেপ করা যেতে পারে। কংকর নিক্ষেপের সময় জামরার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয়।[2]
- প্রথমে জামরাতুল সুগরার (ছোট জামরাহ) মুখোমুখি হয়ে কা‘বা আপনার বামে, মিনা ডানে রেখে অথবা যে কোনো ভাবে দাঁড়িয়ে ডান হাত উচু করে আলাদা আলাদাভাবে ৭টি কংকর একে একে নিক্ষেপ করুন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় বলুন: اَللهُ أَكْبَر ‘‘আল্লাহু আকবার’’
‘‘আল্লাহ মহান’’।
- প্রথম জামরাহতে কংকর নিক্ষেপের পর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে (ছোট জামরাহকে ডানে রেখে) দুই হাত উঠিয়ে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ দো‘আ করুন। এরপর পরবর্তী মধ্যম জামরাহের দিকে এগিয়ে যান।
- এবার জামরাতুল উস্তার (মধ্যম জামরাহ) মুখোমুখি হয়ে কা‘বা আপনার বামে, মিনা ডানে রেখে অথবা যে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে ডান হাত উঁচু করে আলাদা আলাদাভাবে ৭টি কংকর একে একে নিক্ষেপ করুন এবং জামরাতুল সুগরার মতো করে প্রতিবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলুন।
- দ্বিতীয় জামরাহে কংকর নিক্ষেপের পর আবারো একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে (মধ্যম জামরাহকে ডানে রেখে) দুই হাত উঠিয়ে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ দো‘আ করুন। এরপর পরবর্তী বড় জামরাহের দিকে এগিয়ে যান।
- এবার জামরাতুল ‘আকাবার (বড় জামরাহ) মুখোমুখি হয়ে কা‘বা আপনার বামে, মিনা ডানে রেখে অথবা যে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে ডান হাত উচু করে আলাদা আলাদাভাবে ৭টি কংকর একে একে নিক্ষেপ করুন এবং বিগত দুই জামরাহের মতো করে প্রতিবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলুন।
- তৃতীয় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষ করে আর কোনো দো‘আ না করেই জামরাত বিল্ডিং ত্যাগ করুন এবং মিনার তাবুতে ফিরে যান।[3]
- মিনায় অবস্থান করে সালাত আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত, তসবিহ তাহলিল, দো‘আ, যিকির ও ইসতেগফার করা বাঞ্ছণীয়। তাই তাবুর মধ্যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অথবা গল্পগুজব ও ঘুরাঘুরি না করে মিনার সময়গুলোকে কাজে লাগানো উত্তম। মিনায় সালাত আদায়ের নিয়ম ৮ই যিলহজের মতো করে হবে। মিনায় এ তাশরীকের রাতগুলো যাপন করা ওয়াজিব।
- অসুস্থ্য ও দুর্বল লোকেরা সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কংকর নিক্ষেপ করতে পারবেন অথবা তার পক্ষ থেকে অন্য একজনকে কংকর নিক্ষেপ করার জন্য নিয়োগও করতে পারবেন।
- সতর্কতা: আজকাল কিছু কিছু হজ এজেন্সির নেতাদের দেখা যায় তারা ১১ তারিখের মধ্য রাতের পর হাজীদের নিয়ে মিনা ত্যাগ করে চলে যান। রাতের বাকি অংশ মক্কায় যাপন করে পরদিন যোহরের পর মক্কা থেকে এসে কংকর নিক্ষেপ করেন ও আবার মক্কায় চলে যান। এরূপ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিপরীত। বিশেষ অসুবিধায় না পড়লে এরূপ করা উচিৎ নয়। আর মিনায় রাত ও দিন উভয়টাই যাপন করা উচিত। কেননা মিনায় রাত্রিযাপন যদি ওয়াজিবের পর্যায়ে পড়ে থাকে তবে দিন যাপন করা সুন্নাত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বোপরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিন ও রাত উভয়টাই মিনায় যাপন করেছেন।
- এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি কি করবেন? আপনি যদি তাকওয়া অবলম্বনকারী হন ও বিশেষ কোনো ওজর না থাকে তবে দল থেকে আলাদা হয়ে যান ও মিনায় অবস্থান করুন। আপনি অন্যদের বিষয়টি বুঝাতে পারেন তবে এনিয়ে দ্বন্দে যাবেন না। আপনি নিশ্চয় এ কয় দিনে পথ-ঘাট বুঝে যাবেন আর হাতে যদি মোবাইল ফোন ও কিছু রিয়াল থাকে তাহলে কোনো সমস্যাই নেই। হজ যখন করতেই এসেছেন তবে এ শেষ পর্যায়ে একটু কষ্ট করে ওয়াজিব ও সুন্নাতগুলো পালন করে যান। অবশ্য আপনি হজে যাওয়ার পূর্বে আপনার এজেন্সির লোকদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে হালকাভাবে আলোচনা করে তাদের মনোভাবটাও বুঝে ফেলতে পারেন!
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৮৩
[2] মুসনাদে আহমদ, সহীহ মুসলিম
[3] ইবন মাজাহ
[2] মুসনাদে আহমদ, সহীহ মুসলিম
[3] ইবন মাজাহ