মক্কা ও মসজিদুল হারামের ইতিহাস
- মক্কা সম্মানিত শহর। ‘বাইতুল আতিক’ পুরাতন ঘর অর্থাৎ ‘কা‘বা’র সম্মানের কারণে মক্কাকে সম্মানিত করা হয়েছে। সকল শহরের চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট প্রিয় এ শহর, মুসলিমদের কিবলা ও হজের স্থান।
- এ পবিত্র শহরকে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কয়েকটি নামে উল্লেখ করেছেন:
- মক্কা ২) বাক্কা ৩) আল-বালাদ ৪) আল-কারিয়াহ ৫) উম্মুল কুরা
- ‘‘আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত’’।[1]
- সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশের জন্য আল্লাহ তা‘আলা মক্কার কসম করে বলেছেন; ‘‘আমি এ নগরের শপথ করছি’’।[2]
- মক্কায় বসবাস উত্তম, এখানে নেকী ও ইবাদত উত্তম; ঠিক তেমনি খারাপ কাজ এবং পাপের গুনাহও অনেক বেশি। মক্কাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। মক্কায় মহামারী/প্লেগ রোগ ছড়াবে না কখনও, মক্কায় দজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। মক্কা প্রবেশ এর সকল পথে আল্লাহর ফেরেশতারা রক্ষী হিসাবে অবস্থান করছেন।
- আব্দুল্লাহ ইবন আদী ইবন আল-হামরা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম, হে মক্কা তুমি আল্লাহর সকল ভূমির চেয়ে উত্তম ও আমার নিকট অধিক প্রিয়। আমাকে যদি তোমা হতে বের হওয়ার জন্য বাধ্য না করা হত তাহলে আমি কখনো বের হতাম না’’।[3]
- কা‘বা ঘর ও এর চারপাশে তাওয়াফের জায়গা বেষ্টন করে যে মসজিদ স্থাপিত তা মসজিদুল হারাম নামে পরিচিত। কা‘বা ঘরের চারপাশে তাওয়াফের জায়গার মেঝেকে মাতাফ বলা হয়। কা‘বা ঘরের তাওয়াফ শুরু করার কর্নারটি হাজরে আসওয়াদ কর্নার নামে পরিচিত। এর ডান পাশের কর্নারটি ইরাকি কর্নার, তার ডান পাশের কর্ণারটি শামি কর্নার এবং তার ডান পাশের কর্ণারটি ইয়েমেনী কর্নার নামে পরিচিত।
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মসজিদে হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে (মসজিদে নববী) সালাত অন্য স্থানে সালাতের চেয়ে ১ হাজার গুণ উত্তম, আর মসজিদে হারামে সালাত ১ লক্ষ সালাতের চেয়ে উত্তম’’।[4]
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় কা‘বা ও মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে অনেক বসতি গড়ে উঠেছিল যা পরবর্তীতে ক্রমবর্ধমান মুসল্লীদের জন্য সালাতের জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না।
- খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে প্রথমে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও পরে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের আশেপাশের জায়গা লোকদের কাছ থেকে ক্রয় এর সীমা বর্ধিত করেন ও প্রাচীর দিয়ে দেন। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের মসজিদের পূর্বদিকে এবং আবু জাফর মনসুর পশ্চিম দিকে ও শামের দিকে প্রশস্ত করেন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন মুসলিম শাসকদের আমলে মসজিদুল হারামের সীমা বর্ধিত হয় ও সংস্কার সাধিত হয়।
- এরপর প্রায় এক হাজার বছর মসজিদের সীমা বর্ধিত করার কোনো কাজ করা হয় নেই। অতঃপর ১৩৭০ হিজরীতে সৌদি বাদশাহ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুর রহমান আল সাউদ এর আমলে মসজিদের জায়গা ছয় গুণ বৃদ্ধি করে আয়তন হয় ১,৮০,৮৫০ মিটার। এ সময়ে মসজিদে মার্বেল পাথর, আধুনিক কারুকার্য, নতুন মিনার সংযোজন করা হয়। সাফা মারওয়া দোতলা করা হয়। ছোট বড় সব মিলিয়ে ৫১টি দরজা তৈরি করা হয় মসজিদে।
- এরপর সৌদি বাদশা ফাহাদ ইবন আব্দুল আযীয প্রশস্তকরণের কাজে হাত দেন। তিনি মসজিদের দোতলা, তিন তলা ও ছাদে সালাতের ব্যাবস্থা করেন। তিনি মসজিদের আধুনিকায়নের জন্য অনেক কাজ করেন।
- হারামের প্রশস্তকরনের কাজ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ; কিন্তু মুসল্লিদের এক ইমামের পিছনে একত্রিত করাও ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে মসজিদে চার মাযহাবের লোকেদের চারটি আলাদা মুসল্লা গড়ে উঠেছিল। এক আযানের পর চার আলাদা জায়গায় চার মাযহাবের লোকদের চারটি আলাদা জামাআত হতো। যার ফলে মুসলিমদের মাঝে ভাঙ্গন ও অনেক বিদ‘আতি প্রথা প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু পরে আল সাউদ এর আমলে সকল মুসলিমকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সালাফে সালেহীনদের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ও সকল মুসলিমদের এক ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের আদেশ দেন।
- সর্বশেষ ২০১০ খৃঃ সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদুল হারামের তাওয়াফ ও মূল মসজিদ প্রশস্তকরনের দায়িত্ব পায় সৌদি ইবন লাদেন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এখন এ প্রশস্তকরনের কাজ প্রতীয়মান। এ কাজ শেষ হতে ২০১৭-১৮ সাল লাগবে আশা করা যায়। বর্তমানে প্রায় ৩০-৩৫ লক্ষাধিক মুসল্লি একত্রে সালাত আদায় করতে পারেন এবং আশা করা যায় এ কাজ শেষ হলে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক মুসল্লী একত্রে সালাত আদায় করতে পারবেন।
- মক্কা ও মসজিদুল হারাম এর ইতিহাস বিস্তারিত জানতে ‘পবিত্র মক্কার ইতিহাস: শাইখ ছফীউর রহমান মোবারকপুরী’ বইটি পড়ুন।
[1] সূরা আন-নাহল: ১৬:১১২
[2] সূরা আল-বালাদ: ৯০:১
[3] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৯২৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩০৮
[4] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৯৬
[2] সূরা আল-বালাদ: ৯০:১
[3] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৯২৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩০৮
[4] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৯৬