গীবত বা পরদোষ চর্চা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম কাজ। গীবত বলতে অন্যের অনুপস্থিতিতে কারোর নিকট তার কোন দোষ চর্চাকে বুঝানো হয়। যা শুনলে সে রাগান্বিত অথবা অসন্তুষ্ট হবে। অন্ততপক্ষে তার মনে সামান্যটুকু হলেও কষ্ট আসবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কুর‘আন মাজীদে মু’মিনদেরকে এমন অপতৎপরতা চালাতে কঠিনভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। এমনকি তিনি এর প্রতি মু’মিনদের কঠিন ঘৃণা জন্মানোর জন্যে এর এক বিশ্রী দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَّأْكُلَ لَـحْـمَ أَخِيْهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ، وَاتَّقُوْا اللهَ، إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَّحِيْمٌ»
‘‘তোমরা একে অপরের গীবত চর্চা করো না। তোমাদের কেউ কি চায় সে তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত কামড়ে কামড়ে খাবে। বস্ত্তত: তোমরা তা কখনোই করতে চাইবে না। তা হলে তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা গ্রহণকারী অত্যন্ত দয়ালু’’। (’হুজুরাত : ১২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এর বিস্তারিত পরিচয় দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَتَدْرُوْنَ مَا الْغِيْبَةُ ؟ قَالُوْا: اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ، قِيْلَ: أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِيْ أَخِيْ مَا أَقُوْلُ ؟ قَالَ: إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ.
‘‘তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলা হয়? সাহাবারা বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে ভালো জানেন। তখন তিনি বলেন: তোমার মুসলিম ভাই অপছন্দ করে এমন কোন কথা তার পেছনে বলা। জনৈক সাহাবী বললেন: আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যেই থাকে তাও কি তা গীবত হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি যা বলছো তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তা হলেই তো গীবত। আর যদি তার মধ্যে তা না পাওয়া যায় তা হলে তা বুহ্তান তথা মিথ্যা অপবাদ’’। (মুসলিম ২৫৮৯; আবূ দাউদ ৪৮৭৪; তিরমিযী ১৯৩৪)
কারো কারোকে যখন অন্যের গীবত করা থেকে বারণ করা হয় তখন তিনি বলে থাকেন, আমি হুবহু কথাটি তার সামনেও বলতে পারবো। তাকে আমি এতটুকুও ভয় পাই না। মূলতঃ তার এ ধরনের উক্তি কোন কাজের নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গীবত না হওয়ার জন্য এ ধরনের সাহসিকতার শর্ত দেননি। সুতরাং তার সামনে বলার সাহস থাকলেও তা গীবত হবেই।
একদা ‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) স্বাফিয়্যাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) এর পেছনে তার শারীরিক খর্বাকৃতির ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তুলে ধরলে তিনি তাঁকে বলেন:
لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِمَاءِ الْبَحْرِ لَمَزَجَتْهُ، قَالَتْ: وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَانًا فَقَالَ: مَا أُحِبُّ أَنِّيْ حَكَيْتُ إِنْسَانًا وَأَنَّ لِيْ كَذَا وَكَذَا.
‘‘তুমি এমন কথা বললে যা এক সাগর পানির সাথে মিশালেও তা মিশে যাবে বরং তা বাড়তি বলেও মনে হবে। ‘আয়িশা বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে জনৈক ব্যক্তির অভিনয় করলে তিনি আমাকে বলেন: আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমি কারোর অভিনয় করবো আর আমি এতো এতো কিছুর মালিক হবো’’। (আবূ দাউদ ৪৮৭৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’রাজে গিয়ে গীবতকারীদের শাস্তি স্বচক্ষে দেখে আসলেন।
আনাস্ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَمَّا عُرِجَ بِيْ مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَـهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَصُدُوْرَهُمْ، فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيْلُ ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ لُـحُوْمَ النَّاسِ وَيَقَعُوْنَ فِيْ أَعْرَاضِهِمْ.
‘‘যখন আমি মি’রাজে গেলাম তখন এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যারা তামার নখ দিয়ে নিজেদের বক্ষ ও মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করছে। আমি বললাম: এরা কারা হে জিব্রীল! তিনি বললেন: এরা ওরা যারা মানুষের গোস্ত খায় এবং তাদের ইজ্জত লুটায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৭৮)
কারোর গীবত করা মুনাফিকের আলামত।
আবূ বারযাহ্ আস্লামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيْمَانُ قَلْبَهُ ! لَا تَغْتَابُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَـوْرَتَهُ، وَمَنْ يَّتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِيْ بَيْتِهِ.
‘‘হে তোমরা যারা মুখে ঈমান এনেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত এবং তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি মুসলিমদের ছিদ্রান্বেষণ করবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তার ছিদ্রান্বেষণ করবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা যার ছিদ্রান্বেষণ করবেন তাকে তিনি তার ঘরেই লাঞ্ছিত করবেন’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮০)
কাউকে অন্যের গীবত করতে দেখলে তাকে অবশ্যই বাধা দিবেন। তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আপনাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।
আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيْهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘‘যে ব্যক্তি অন্যের অপবাদ খন্ডন করে নিজ কোন মুসলিম ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করলো আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন’’। (তিরমিযী ১৯৩১)
মু‘আয বিন্ আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا مِنْ مُنَافِقٍ بَعَثَ اللهُ مَلَكًا يَحْمِيْ لَـحْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ، وَمَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَيْءٍ يُرِيْدُ شَيْنَهُ بِهِ حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ.
‘‘যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে মুনাফিকের কুৎসার হাত থেকে রক্ষা করলো আল্লাহ্ তা‘আলা (এর প্রতিফল স্বরূপ) কিয়ামতের দিন তার নিকট এমন একজন ফিরিশ্তা পাঠাবেন যে তার শরীরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে তার ইজ্জত হননের উদ্দেশ্যে কোন ব্যাপারে অপবাদ দিলো আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন (এর প্রতিফল স্বরূপ) জাহান্নামের পুলের উপর আটকে রাখবেন যতক্ষণ না সে উক্ত অপবাদ থেকে নিষ্কৃতি পায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮৩)
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে তাবুক এলাকায় বসেছিলেন এমতাবস্থায় তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: কা’ব বিন্ মা’লিক কোথায়? তখন বনী সালিমাহ্ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তার সম্পদ ও আত্মগর্ব তাকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে। তখন মু‘আয বিন্ জাবাল (রাঃ) প্রত্যুত্তরে বললেন: হে ব্যক্তি তুমি অত্যন্ত খারাপ উক্তি করলে। হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্’র কসম! আমরা তার ব্যাপারে ভালো ধারণাই রাখি। (মুসলিম ২৭৬৯)
তবে কোন সঠিক ধর্মীয় উদ্দেশ্য যদি গীবত ছাড়া কোনভাবেই অর্জিত না হয় তখন প্রয়োজনের খাতিরে কারো কারোর গীবত করা যায় যা নিম্নরূপ:
১. কেউ কারো কর্তৃক যুলুম তথা অত্যাচারের শিকার হলে তার জন্য জায়িয অত্যাচারীর বিপক্ষে রাষ্ট্রপতি কিংবা বিচারপতির নিকট নালিশ করা। যাতে করে মযলুম তার হৃত অধিকার ফিরে পায়।
২. কাউকে বহুবার ওয়ায নসীহত করার পরও সে যদি শরীয়ত বিরোধী উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত না হয় তা হলে তার বিরুদ্ধে এমন ব্যক্তির কাছে নালিশ করা যাবে যে তাকে উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত রাখতে সক্ষম।
৩. কোন অঘটনের ব্যাপারে উক্ত ঘটনার পূর্ণ বর্ণনা দিয়ে অভিজ্ঞ কোন মুফতি সাহেবের নিকট ফতোয়া চাওয়া। তবে এ ব্যাপারে কারোর নাম ধরে না বলা অনেক ভালো। বরং সে মুফতি সাহেবকে বলবে: জনৈক ব্যক্তি কিংবা জনৈকা মহিলা এমন এমন কাজ করেছে অতএব এর শরয়ী সিদ্ধান্ত কি?
৪. কারোর ব্যাপারে সাধারণ মুসলিমদেরকে সতর্ক করা। যা নিম্নরূপ:
ক. কোন হাদীসের বর্ণনাকারী কিংবা কোন সাক্ষী অগ্রহণযোগ্য হলে তার ব্যাপারে অন্যকে সতর্ক করা।
খ. কেউ কারোর ব্যাপারে আপনার নিকট পরামর্শ চাইলে তাকে সঠিক তথ্য ভিত্তিক পরামর্শ দেয়া। চাই তা কারোর সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারেই হোক অথবা তার নিকট কোন আমানত রাখার ব্যাপারে কিংবা তার সাথে কোন ধরনের লেনদেন করার ব্যাপারে।
গ. কোন ধর্মীয় জ্ঞান অনুসন্ধানীকে কোন বিদ্‘আতী কিংবা কোন ফাসিকের নিকট জ্ঞান আহরণ করতে দেখলে তাকে সে ব্যাপারে সতর্ক করা। তবে এ ব্যাপারে হিংসা যেন কোনভাবেই স্থান নিতে না পারে সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
ঘ. কোন ক্ষমতাসীন ব্যক্তি উক্ত পদের অনুপযুক্ত প্রমাণিত হলে কিংবা ফাসিক অথবা গাফিল হলে তার ব্যাপারে তার উপরস্থ ব্যক্তিকে জানানো যাতে করে তাকে উক্ত পদ থেকে বহিষ্কার করা যায় অথবা অন্ততপক্ষে সামান্যটুকু হলেও তাকে পরিশুদ্ধ করা যায়।
৫. কেউ সপ্রকাশ্যে কোন গুনাহ্ কিংবা বিদ্‘আত করলে সে গুনাহ্টি অন্যের কাছে বলা যায়। যাতে করে তার বিরুদ্ধে বিপুল জনমত সৃষ্টি করে উহার প্রতিকার করা যায়।
৬. কারোর কোন দোষ কোন সমাজে এমনভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করলে যা না বললে কেউ তাকে চিনবে না তখন সে দোষ উল্লেখ পূর্বক তার পরিচয় দেয়া যায়। তবে অন্যভাবে তার পরিচয় দেয়া সম্ভব হলে সেভাবেই পরিচয় দেয়া উচিৎ।
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন:
ائْذَنُوْا لَهُ، بِئْسَ أَخُوْ الْعَشِيْرَةِ وَبِئْسَ ابْنُ الْعَشِيْرَةِ.
‘‘তাকে ঢুকার অনুমতি দাও। সে তো এক নিকৃষ্ট বংশীয়’’। (বুখারী ৬০৩২, ৬০৫৪, ৬১৩১; মুসলিম ২৫৯১)
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন মুনাফিক সম্পর্কে বলেন:
مَا أَظُنُّ فُلَانًا وَفُلَانًا يَعْرِفَانِ مِنْ دِيْنِنَا شَيْئًا.
‘‘আমার ধারণা মতে অমুক আর অমুক ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না’’। (বুখারী ৬০৬৭)
ফাত্বিমা বিন্তে ক্বাইস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন আমি তালাকের ইদ্দত শেষ করে হালাল হয়ে গেলাম তখন মু‘আবিয়া ও আবূ জাহ্ম (রা.) আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালে তিনি আমাকে বলেন:
أَمَّا أَبُوْ جَهْمٍ فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِهِ، وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ فَصَعْلُوْكٌ، لَا مَالَ لَهُ، انْكِحِيْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ.
‘‘আবূ জাহ্ম তো লাঠি কাঁধ থেকেই নামায় না আর মু‘আবিয়া তো খুবই গরীব; তার কোন সম্পদই নেই। তবে তুমি উসামাহ্ বিন্ যায়েদের সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারো’’। (মুসলিম ১৪৮০)
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আবূ সুফ্য়ানের স্ত্রী হিন্দ বিন্ত ’উত্বাহ্ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো:
يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيْحٌ، لَا يُعْطِيْنِيْ مِنَ النَّفَقَةِ مَا يَكْفِيْنِيْ وَيَكْفِيْ بَنِيَّ إِلاَّ مَا أَخَذْتُ مِنْ مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمِهِ، فَهَلْ عَلَيَّ فِيْ ذَلِكَ مِنْ جُنَاحٍ ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : خُذِيْ مِنْ مَالِهِ بِالْمَعْرُوْفِ مَا يَكْفِيْكِ وَيَكْفِيْ بَنِيْكِ.
‘‘হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ সুফ্য়ান তো খুবই কৃপণ। সে তো আমার ও আমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট এতটুকু খরচা আমাদেরকে দেয় না। তবে আমি তাকে না জানিয়ে তার সম্পদ থেকে কিছু নিয়ে নিতে পারি। এতে কি আমার কোন গুনাহ্ হবে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট এতটুকু খরচা তো তার সম্পদ থেকে ন্যায়ভাবে নিতে পারো’’। (বুখারী ২২১১; মুসলিম ১৭১৪)
যায়েদ বিন্ আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম তখন আব্দুল্লাহ্ বিন্ উবাইকে বলতে শুনলাম সে বলছে: তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আশপাশের লোকদের উপর কোন টাকা-পয়সা খরচ করো না যাতে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গ ছেড়ে দেয়। সে আরো বললো: আমরা এখান থেকে মদীনায় ফিরে গেলে আমাদের মধ্যে যারা পরাক্রমশালী তারা অধমদেরকে মদীনা থেকে বের করে দিবে। যায়েদ বলেন: আমি ব্যাপারটি আমার চাচা অথবা ’উমর (রাঃ) কে জানালে তাঁরা তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানায়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকেন। আমি ব্যাপারটি তাঁকে বিস্তারিত জানালে তিনি আব্দুল্লাহ্ ও তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠান। তারা উপস্থিত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কসম খেয়ে বললো: তারা এমন কথা বলেনি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথা বিশ্বাস করলেন এবং আমাকে মিথ্যুক ভাবলেন। তখন আমি খুব চিন্তিত হই যা ইতিপূর্বে হইনি। আর তখনই আল্লাহ্ তা‘আলা আমার সাপোর্টে সূরাহ মুনাফিক্বূনের প্রথম তিনটি আয়াত নাযিল করেন। (বুখারী ৪৯০০; মুসলিম ২৭৭২)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বন্টন করে শেষ করলে জনৈক আন্সারী বললো: আল্লাহ্’র কসম! মুহাম্মাদ এ বন্টনে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি কামনা করেনি। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে সংবাদ দিলে তিনি রাগে লাল হয়ে বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা (আঃ) কে দয়া করুন। তাঁকে এর চাইতেও বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছিলো; অথচ তিনি তা অকাতরে সহ্য করেছেন। (বুখারী ৬০৫৯; মুসলিম ১০৬২)
উক্ত ঘটনাসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই অথবা অন্য কোন ব্যক্তি তাঁর সামনেই অন্যের গীবত করে। যা প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় কোন উদ্দেশ্যে গীবত জায়িয হওয়াই প্রমাণ করে।
কেউ কারোর গীবত করে তার নিকট ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করাই উচিৎ। তেমনিভাবে কেউ স্বেচ্ছায় তার সকল গীবতকারীকে ব্যাপকভাবে ক্ষমা করে দিলে তা আরো অনেক ভালো।
ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكُوْنَ مِثْلَ أَبِيْ ضَيْغَمٍ أَوْ ضَمْضَمٍ ؛ كَانَ إِذَا أَصْبَحَ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّيْ قَدْ تَصَدَّقْتُ بِعِرْضِيْ عَلَى عِبَادِكَ !.
‘‘তোমরা কি আবূ যায়গাম অথবা আবূ যামযামের মতো হতে পারো না? সে প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বলতো: হে আল্লাহ্! আমি আমার ইয্যত তোমার সকল বান্দাহ্’র জন্য সাদাকা করে দিলাম’’।