লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট অথবা যে কোন কাপড় টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে পরা কবীরা গুনাহ্। চাই তা গর্ব করেই হোক অথবা এমনিতেই।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزَارِ فَفِيْ النَّارِ.
‘‘লুঙ্গি, পাজামা বা প্যান্টের যে অংশটুকু পায়ের গিঁটের নিচে যাবে তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’’। (বুখারী ৫৭৮৭)
যে ব্যক্তি টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধান করে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার সাথে কোন কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
আবূ যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ ثَلَاثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ: خَابُوْا وَخَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: الْـمُسْبِلُ، وَالْـمَنَّانُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: الْـمَنَّانُ الَّذِيْ لَا يُعْطِيْ شَيْئًا إِلاَّ مَنَّهُ، وَالْـمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.
‘‘তিন ব্যক্তি এমন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিন বার বলেছেন। আবূ যর (রাঃ) বলেন: তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা কারা হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোন কিছু দিয়ে খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য সাপ্লাইকারী’’। (মুসলিম ১০৬; আবূ দাউদ ৪০৮৭, ৪০৮৮)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ.
‘‘যে ব্যক্তি গর্ব করে নিজ নিম্ন বসন মাটিতে টেনে চলবে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’।
(বুখারী ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪; মুসলিম ২০৮৫)
একজন মু’মিনের লুঙ্গি, পাজামা ইত্যাদি জঙ্ঘার অর্ধেক পর্যন্তই হওয়া উচিৎ। পায়ের গিঁট পর্যন্ত হলেও চলবে। তবে যে ব্যক্তি গিঁটের নিচে পরবে সে গর্বকারীরই অন্তর্ভুক্ত।
জাবির বিন্ সুলাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
وَارْفَعْ إِزَارَكَ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، فَإِنْ أَبَيْتَ فَإِلَى الْكَعْبَيْنِ، وَإِيَّاكَ وَإِسْبَالَ الْإِزَارِ فَإِنَّهَا مِنَ الْـمَخِيْلَةِ، وَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْـمَخِيْلَةَ.
‘‘তোমার নিম্ন বসন জঙ্ঘার অর্ধেকে উঠিয়ে নাও। তা না করলে অন্ততপক্ষে পায়ের গিঁট পর্যন্ত। তবে গিঁটের নিচে পরা থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকবে। কারণ, তা অহঙ্কারের পরিচায়ক। আর আল্লাহ্ তা‘আলা অহঙ্কার করা পছন্দ করেন না’’। (আবূ দাউদ ৪০৮৪)
আবূ সাঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِزْرَةُ الْـمُسْلِمِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، وَلَا حَرَجَ فِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ.
‘‘একজন মুসলিমের নিম্ন বসন জঙ্ঘার অর্ধেক পর্যন্তই হওয়া চাই। তবে তা এবং পায়ের গিঁটের মাঝে থাকলেও কোন অসুবিধে নেই’’।
(আবূ দাউদ ৪০৯৩)
জামা এবং পাগড়িও গিঁটের নিচে যেতে পারবে না।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الْإِسْبَالُ فِيْ الْإِزَارِ وَالْقَمِيْصِ وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘‘গিঁটের নিচে পরা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট, জামা, পাগড়ি ইত্যাদির মধ্যেও ধরা হয়। যে ব্যক্তি গর্ব করে এগুলোর কোনটি মাটিতে টেনে চলবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’।
(আবূ দাউদ ৪০৯৪)
অসতর্কতাবশত প্যান্ট, লুঙ্গি বা পাজামা গিঁটের নিচে চলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্রই তা গিঁটের উপরে উঠিয়ে নিবে।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যখন আমার নিম্ন বসন ছিলো গিঁটের নিচে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
يَا عَبْدَ اللهِ! ارْفَعْ إِزَارَكَ، فَرَفَعْتُهُ، ثُمَّ قَالَ: زِدْ، فَزِدْتُ، فَمَا زِلْتُ اَتَحَـرَّاهَا بَعْدُ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ: إِلَى أَيْنَ ؟ فَقَالَ: أَنْصَافِ السَّاقَيْنِ.
‘‘হে আব্দুল্লাহ্! তোমার নিম্ন বসন (গিঁটের উপর) উঠিয়ে নাও। তখন আমি উপরে উঠিয়ে নিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন: আরো উপরে। তখন আমি আরো উপরে উঠিয়ে নিলাম। এরপর থেকে আজো পর্যন্ত আমি এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছি। উপস্থিত লোকদের কেউ বলে উঠলো: তখন আপনি কোন পর্যন্ত উঠিয়েছিলেন? তিনি বললেন: জঙ্ঘার অর্ধ ভাগ পর্যন্ত’’। (মুসলিম ২০৮৬)