হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

চুগলি(চুগলখোর) করা তথা মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব লাগানোর জন্য একের কথা অন্যের কাছে লাগানো কবীরা গুনাহ্। মানুষে মানুষে বৈরিতা-বিদ্বেষ, আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছেদ এবং মুসলিমদের মাঝে পরস্পর শত্রুতা জন্ম নেয়ার এ এক বড় কারণ। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এ জাতীয় ব্যক্তির আনুগত্য করতে নিষেধ করেন। চাই সে যতই সম্পদশালী হোক না কেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلاَّفٍ مَّهِيْنٍ، هَمَّازٍ مَّشَّآءٍ بِنَمِيْمٍ، مَّنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيْمٍ، عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيْمٍ أَنْ كَانَ ذَا مَالٍ وَّبَنِيْنَ»

‘‘তুমি অনুসরণ করো না এমন প্রত্যেক ব্যক্তির যে কথায় কথায় কসম খায়, লাঞ্ছিত, পরনিন্দুক, চুগলখোর, কল্যাণকর কাজে বাধা প্রদানকারী, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, রূঢ় স্বভাবের অধিকারী এবং সর্বোপরি সে কুখ্যাত। এ জন্য অনুসরণ করো না যে, সে ব্যক্তি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী’’। (ক্বালাম : ১০-১৪)

চুগলি করা কবরের আযাবের বিশেষ একটি কারণ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَرَّ النَّبِيُّ  بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: بَلَى إِنَّهُ كَبِيْرٌ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ، ثُمَّ أَخَذَ جَرِيْدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا نِصْفَيْنِ، فَغَرَزَ فِيْ كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لِمَ فَعَلْتَ هَذَا ؟ قَالَ: لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا.

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন: এ দু’ জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তা আপাত দৃষ্টিতে কোন বড় অপরাধের জন্য নয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, বাস্তবে তা সত্যিই বড় অপরাধ অথবা বস্ত্তত: উক্ত দু’টি গুনাহ্ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের জন্য কোন কষ্টকরই ছিলো না। তাদের এক জন নিজ প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতার্জন করতো না আর অপর জন মানুষের মাঝে চুগলি করে বেড়াতো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দু’ ভাগ করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কেন এমন করলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হয়তো বা তাদের শাস্তি হালকা করে দেয়া হবে যতক্ষণ না ডাল দু’টি শুকাবে’’। (বুখারী ২১৮; মুসলিম ২৯২)

চুগলখোর জান্নাতে যাবে না।

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ قَتَّاتٌ وَفِيْ رِوَايَةٍ: نَمَّامٌ.

‘‘চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (বুখারী ৬০৫৬; মুসলিম ১০৫)

কেউ কারোর সাথে কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকালে তা আর অন্যের কাছে বলা যাবে না। বরং উক্ত কথাগুলোকে আমানত হিসেবেই ধরে নিতে হবে।

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ بِالْـحَدِيْثِ ثُمَّ الْتَفَتَ ؛ فَهِيَ أَمَانَةٌ.

‘‘কোন ব্যক্তি কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকালে তা আমানত হিসেবেই ধরে নিতে হবে’’। (আবূ দাউদ ৪৮৬৮)

তবে কারোর কাছে অন্যের ব্যাপারে মীমাংসার নিয়তে ভালো কথা লাগানো মিথ্যা অথবা চুগলি নয়।

উম্মে কুলসূম (রাযিয়াললাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَمْ يَكْذِبْ مَنْ نَمَى بَيْنَ اِثْنَيْنِ لِيُصْلِحَ وَفِيْ لَفْظٍ: لَيْسَ بِالْكَاذِبِ مَنْ أَصْلَحَ بَيْنَ النَّاسِ ؛ فَقَالَ خَيْرًا أَوْ نَمَى خَيْرًا.

‘‘সে ব্যক্তি মিথ্যা বলেনি যে দু’ জনের মাঝে মীমাংসার জন্য চুগলি করলো। অন্য শব্দে এসেছে, সে ব্যক্তি মিথ্যুক নয় যে মানুষের মাঝে মীমাংসা করলো এবং তা করতে গিয়ে ভালো কথা বললো অথবা ভালো কথার চুগলি করলো’’। (আবূ দাউদ ৪৯২০)

কেউ কারোর নিকট অন্যের ব্যাপারে চুগলি করলে তার করণীয় হবে ছয়টি কাজ। যা নিম্নরূপ:

ক. তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করবে না। কারণ, সে ফাসিক। আর ফাসিকের সংবাদ শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।

খ. তাকে এ মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং তাকে সদুপদেশ দিবে।

গ. তাকে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য ঘৃণা করবে। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটও সত্যিই ঘৃণিত।

ঘ. যার সম্পর্কে সে চুগলি করেছে তার সম্পর্কে আপনি খারাপ ভাববেন না।

ঙ. এরই কথার কারণে আপনি ওর পেছনে পড়বেন না।

চ. উক্ত চুগলি সে অন্যের নিকট বর্ণনা করতে যাবে না।