কারোর ব্যাপারে তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অথবা গ্রহণযোগ্য যে কোন দু’ জন সাক্ষীর মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত হয়ে গেলে অথচ চোরা বস্ত্তটি যথাযোগ্য হিফাযতে ছিলো এবং বস্ত্তটি তার মালিকানাধীন হওয়ার ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ ছিলো না এমনকি বস্ত্তটি সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ অথবা পৌনে তিন গ্রাম রূপা সমমূল্য কিংবা এর চাইতেও বেশি ছিলো তখন তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে, আবার চুরি করলে তার বাম পা, আবার চুরি করলে তার বাম হাত এবং আবার চুরি করলে তার ডান পা কেটে ফেলা হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْا أَيْدِيَهُمَا جَـزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ»
‘‘তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)
‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُقْطَعُ يَدُ السَّارِقِ إِلاَّ فِيْ رُبْعِ دِيْنَارٍ فَصَاعِدًا.
‘‘সিকি দিনার তথা এক গ্রাম থেকে একটু বেশি স্বর্ণ (অথবা উহার সমমূল্য) এবং এর চাইতে বেশি চুরি করলেই কোন চোরের হাত কাটা হয়। নতুবা নয়’’।
(বুখারী ৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১; মুসলিম ১৬৮৪; তিরমিযী ১৪৪৫; আবূ দাউদ ৪৩৮৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৩৪)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
قَطَعَ رَسُوْلُ اللهِ يَدَ سَارِقٍ فِيْ مِجَنِّ ثَمَنُهُ ثَلَاثَةُ دَرَاهِمَ.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক চোরের হাত কাটলেন একটি ঢাল চুরির জন্য যার মূল্য ছিলো তিন দিরহাম তথা প্রায় নয় গ্রাম রূপা কিংবা উহার সমমূল্য’’।
(বুখারী ৬৭৯৫, ৬৭৯৬, ৬৭৯৭, ৬৭৯৮; মুসলিম ১৬৮৬; তিরমিযী ১৪৪৬; আবূ দাউদ ৪৩৮৫, ৪৩৮৬; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৩৩)
কারোর চুরির ব্যাপারটি যদি বিচারকের নিকট না পৌঁছায় এবং সে এতে অভ্যস্তও নয় এমনকি সে উক্ত কাজ থেকে অতিসত্বর তাওবা করে নেক আমলে মনোনিবেশ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এমতাবস্থায় তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট না পৌঁছানোই উত্তম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«فَمَنْ تَابَ مِنْ بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللهَ يَتُوْبُ عَلَيْهِ، إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٍ»
‘‘অনন্তর যে ব্যক্তি যুলুম তথা চুরি করার পর (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) তাওবা করে এবং নিজ আমলকে সংশোধন করে নেয় তবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা পরম ক্ষমাশীল অতিশয় দয়ালু’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)
আর যদি কোন ব্যক্তি চুরিতে অভ্যস্ত হয় এবং সে চুরিতে কারোর হাতে ধরাও পড়েছে তখন তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট অবশ্যই জানাবে। যাতে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে অপকর্মটি ছেড়ে দেয়।
কারোর নিকট কোন কিছু আমানত রাখার পর সে তা আত্মসাৎ করলে এবং কেউ কারোর কোন সম্পদ লুট অথবা ছিনতাই করে ধরা পড়লে চোর হিসেবে তার হাত খানা কাটা হবে না। পকেটমারের বিধানও তাই। তবে তারা কখনোই শাস্তি পাওয়া থেকে একেবারেই ছাড় পাবে না। এদের বিধান হত্যাকারীর বিধানাধীন উল্লেখ করা হয়েছে।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَيْسَ عَلَى خَائِنٍ، وَلَا مُنْتَهِبٍ وَلَا مُخْتَلِسٍ قَطْعٌ.
‘‘আমানত আত্মসাৎকারী, লুটেরা এবং ছিনতাইকারীর হাতও কাটা হবে না’’।
(আবূ দাউদ ৪৩৯১, ৪৩৯২, ৪৩৯৩; তিরমিযী ১৪৪৮; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪০, ২৬৪১; ইব্নু হিববান ১৫০২ নাসায়ী ৮/৮৮; আহমাদ ৩/৩৮০)
কেউ কারোর কোন ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেয়ে ধরা পড়লে তার হাতও কাটা হবে না। এমনকি তাকে কোন কিছুই দিতে হবে না। আর যদি সে কিছু সাথে নিয়ে যায় তখন তাকে জরিমানাও দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যদি গাছ থেকে ফল পেড়ে নির্দিষ্ট কোথাও শুকাতে দেয়া হয় এবং সেখান থেকেই কেউ চুরি করলো তখন তা হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাতও কেটে দেয়া হবে।
রা’ফি’ বিন্ খাদীজ ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا قَطْعَ فِيْ ثَمَرٍ وَلَا كَثَرٍ.
‘‘কেউ কারোর ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলে অথবা কারোর খেজুর গাছের মাথি-মজ্জা খেয়ে ফেললে তার হাতও কাটা হবে না’’।
(আবূ দাউদ ৪৩৮৮; তিরমিযী ১৪৪৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪২, ২৬৪৩; ইব্নু হিববান ১৫০৫ নাসায়ী ৮/৮৮; আহমাদ ৩/৪৬৩)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাছের ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
مَنْ أَصَابَ بِفِيْهِ مِنْ ذِيْ حَاجَةٍ غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً ؛ فَلَا شَيْءَ عَلَيْهِ، وَمَنْ خَرَجَ بِشَيْءٍ مِنْهُ ؛ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوْبَةُ، وَمَنْ سَرَقَ مِنْهُ شَيْئًا بَعْدَ أَنْ يُؤْوِيَهُ الْـجَرِيْنُ فَبَلَغَ ثَمَنَ الْـمِجَنِّ ؛ فَعَلَيْهِ الْقَطْعُ، وَمَنْ سَرَقَ دُوْنَ ذَلِكَ ؛ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوْبَةُ.
‘‘কেউ প্রয়োজনের খাতিরে সাথে কিছু না নিয়ে (কারোর কোন ফলগাছের ফল) শুধু খেলে তাকে এর জরিমানা স্বরূপ কিছুই দিতে হবে না। আর যে শুধু খায়নি বরং সাথে কিছু নিয়ে গেলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যে ফল শুকানোর জায়গা থেকে চুরি করলো এবং তা ছিলো একটি ঢালের সমমূল্য তখন তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে। আর যে এর কম চুরি করলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে’’। (আবূ দাউদ ৪৩৯০; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৫ নাসায়ী ৮/৮৫; হা’কিম ৪/৩৮০)
কেউ কারোর কাছ থেকে কোন কিছু ধার নিয়ে তা অস্বীকার করলে এবং তা তার অভ্যাসে পরিণত হলে এমনকি বস্ত্তটি হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে।
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَتْ اِمْرَأَةٌ مَخْزُوْمِيَّةٌ تَسْتَعِيْرُ الْـمَتَاعَ وَتَجْحَدُهُ، فَأَمَرَ النَّبِيُّ أَنْ تُقْطَعَ يَدُهَا.
‘‘জনৈকা মাখ্জূমী মহিলা মানুষ থেকে আসবাবপত্র ধার নিয়ে তা অস্বীকার করতো তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খানা কাটতে আদেশ করলেন’’। (মুসলিম ১৬৮৮; আবূ দাউদ ৪৩৭৪, ৪৩৯৫, ৪৩৯৬, ৪৩৯৭)
তবে কোন কোন বর্ণনায় তার চুরির কথাও উল্লেখ করা হয়।
কেউ ঘুমন্ত ব্যক্তির কোন কিছু চুরি করলে এবং তা হাত কাটা সমপরিমাণ হলে তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে।
স্বাফ্ওয়ান বিন্ উমাইয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كُنْتُ نَائِمًا فِيْ الْـمَسْجِدِ، عَلَيَّ خَمِيْصَةٌ لِيْ ثَمَنُ ثَلَاثِيْنَ دِرْهَمًا، فَجَاءَ رَجُلٌ فَاخْتَلَسَهَا مِنِّيْ، فَأُخِذَ الرَّجُلُ، فَأُتِيَ بِهِ رَسُوْلَ اللهِ فَأَمَرَ بِهِ لِيُقْطَعَ.
‘‘আমি একদা মসজিদে ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমার গায়ে একটি চাদর ছিলো ত্রিশ দিরহামের। ইতিমধ্যে জনৈক ব্যক্তি এসে চাদরটি আমার থেকে ছিনিয়ে নিলো। লোকটিকে ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি তার হাত খানা কেটে ফেলতে বলেন’’।
(আবূ দাউদ ৪৩৯৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৪ নাসায়ী ৮/৬৯; আহমাদ ৬/৪৬৬; হা’কিম ৪/৩৮০ ইব্নুল জারূদ্, হাদীস ৮২৮)
অনেকেই রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পদ চুরি করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, সবাই তো করে যাচ্ছে তাই আমিও করলাম। এতে অসুবিধে কোথায়? মূলত এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, জাতীয় সম্পদ বলতে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সম্পদকেই বুঝানো হয়। সুতরাং এর সাথে বহু লোকের অধিকারের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষভাবে তাতে রয়েছে গরিব, দু:খী, ইয়াতীম, অনাথ ও বিধবাদের অধিকার। তাই ব্যক্তি সম্পদের তুলনায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এর চুরিও খুবই মারাত্মক।
আবার কেউ কেউ কোন কাফিরের সম্পদ চুরি করতে এতটুকুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, কাফিরের সম্পদ আত্মসাৎ করা একেবারেই জায়িয। মূলত এরূপ ধারণাও সম্পূর্ণটাই ভুল। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন সকল কাফিরের সম্পদই হালাল যাদের সঙ্গে এখনো মুসলিমদের যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান। মুসলিম এলাকায় বসবাসরত কাফির ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফির এদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কেউ কেউ তো আবার অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে তার আসবাবপত্র চুরি করে। কেউ কেউ আবার ঠিক এরই উল্টো। সে তার মেহমানের টাকাকড়ি বা আসবাবপত্র চুরি করে। এ সবই নিকৃষ্ট চুরি।
আবার কোন কোন পুরুষ বা মহিলা তো এমন যে, সে কোন না কোন দোকানে ঢুকলো পণ্য খরিদের জন্য গাহক বেশে অথচ বের হলো চোর হয়ে।
কেউ শয়তানের ধোঁকায় চুরি করে ফেললে তাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে চুরিত বস্ত্তটি উহার মালিককে ফেরৎ দিতে হবে। চাই সে তা প্রকাশ্যে দিক অথবা অপ্রকাশ্যে। সরাসরি দিক অথবা কোন মাধ্যম ধরে। যদি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উহার মালিক বা তার ওয়ারিশকে পাওয়া না যায় তা হলে সে যেন বস্ত্তটি অথবা বস্ত্তটির সমপরিমাণ টাকা মালিকের নামে সাদাকা করে দেয়। যার সাওয়াব মালিকই পাবে। সে নয়।