মদ্য পান অথবা যে কোন নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ তথা সেবন (চাই তা খেয়ে কিংবা পান করেই হোক অথবা ঘ্রাণ নেয়া কিংবা ইন্জেকশন গ্রহণের মাধ্যমেই হোক) একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্। যার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপ ও অভিসম্পাত রয়েছে।
আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে মদ্যপান তথা যে কোন নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ অথবা সেবনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শয়তান চায় এরই মাধ্যমে মানুষে মানুষে শত্রুতা, হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহ্’র স্মরণ ও নামায থেকে মানুষকে গাফিল করতে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْـخَمْرُ وَالْـمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ، فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ، إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِيْ الْـخَمْرِ وَالْـمَيْسِرِ، وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ، فَهَلْ أَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। তা হলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?’’ (মা’য়িদাহ্ : ৯০-৯১)
উক্ত আয়াতে মদ্যপানকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, উহাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা, তা থেকে বিরত থাকার ইলাহী আদেশ, তা বর্জনে সমূহ কল্যাণ নিহিত থাকা, এরই মাধ্যমে শয়তানের মানুষে মানুষে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে গাফিল রাখার চেষ্টা এবং পরিশেষে ধমকের সুরে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ থেকে মদ্যপানের ভয়ঙ্করতার পর্যায়টি সুস্পষ্টরূপেই প্রতিভাত হয়।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَمَّا حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ مَشَى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، وَقَالُوْا: حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ وَجُعِلَتْ عِدْلًا لِلشِّرْكِ.
‘‘যখন মদ্যপান হারাম করে দেয়া হলো তখন সাহাবারা একে অপরের নিকট গিয়ে বলতে লাগলো: মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে এবং উহাকে শির্কের পাশাপাশি অবস্থানে রাখা হয়েছে’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১২ হাদীস ১২৩৯৯; হা’কিম খন্ড ৪ হাদীস ৭২২৭)
মদ বা মাদকদ্রব্য সকল অকল্যাণ ও অঘটনের মূল।
আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ মর্মে ওয়াসিয়াত করেন:
لَا تَشْرَبِ الْـخَمْرَ ؛ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ.
‘‘(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৪)
একদা বনী ইস্রাঈলের জনৈক রাষ্ট্রপতি সে যুগের জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তিকে চারটি কাজের যে কোন একটি করতে বাধ্য করে। কাজগুলো হলো: মদ্য পান, মানব হত্যা, ব্যভিচার ও শুকরের গোস্ত খাওয়া। এমনকি তাকে এর কোন না কোন একটি করতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। পরিশেষে উক্ত ব্যক্তি বাধ্য হয়ে মদ্য পানকেই সহজ মনে করে তা করতে রাজি হলো। যখন সে মদ্য পান করে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গেলো তখন উক্ত সকল কাজ করাই তার জন্য সহজ হয়ে গেলো।
এ কথা সবারই জানা থাকা দরকার যে, হাদীসের পরিভাষায় সকল মাদক দ্রব্যকেই ‘‘খাম্র’’ বলা হয় তথা সবই মদের অন্তর্ভুক্ত। আর মদ বলতেই তো সবই হারাম।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ.
‘‘প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই মদ বা মদ জাতীয়। আর প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই তো হারাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক মদ জাতীয় বস্ত্তই হারাম’’। (মুসলিম ২০০৩; আবূ দাউদ ৩৬৭৯; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৫০, ৩৪৫৩)
‘আয়িশা, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্, মু‘আবিয়াহ্ ও আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মধুর সুরার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ، وَبِعِبَارَةٍ أُخْرَى: كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ.
‘‘প্রত্যেক পানীয় যা নেশাকর তা সবই হারাম। অন্য শব্দে, প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই হারাম’’। (মুসলিম ২০০১; আবূ দাউদ ৩৬৮২; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৯, ৩৪৫১, ৩৪৫২, ৩৪৫৪)
তেমনিভাবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, যে বস্ত্তটি বেশি পরিমাণে সেবন করলে নেশা আসে তা সামান্য পরিমাণে সেবন করাও হারাম।
জা’বির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَا أَسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ.
‘‘প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই হারাম এবং যে বস্ত্তটির বেশি পরিমাণ নেশাকর তার সামান্যটুকুও হারাম’’। (আবূ দাউদ ৩৬৮১; তিরমিযী ১৮৬৪, ১৮৬৫; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৫৫, ৩৪৫৬, ৩৪৫৭)
শুধু আঙ্গুরের মধ্যেই মদের ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা যে কোন বস্ত্ত থেকেও বানানো যেতে পারে এবং তা সবই হারাম।
নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ مِنَ الْعِنَبِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ التَّمْرِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْعَسَلِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْبُرِّ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الشَّعِيْرِ خَمْرًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَمِنَ الزَّبِيْبِ خَمْرًا.
‘‘নিশ্চয়ই আঙ্গুর থেকে যেমন মদ হয় তেমনিভাবে খেজুর, মধু, গম এবং যব থেকেও তা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কিসমিস থেকেও মদ হয়’’। (আবূ দাউদ ৩৬৭৬; তিরমিযী ১৮৭২)
নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ الْـخَمْرَ مِنَ الْعَصِيْرِ، وَالزَّبِيْبِ، وَالتَّمْرِ، وَالْحِنْطَةِ، وَالشَّعِيْرِ، وَالذُّرَةِ، وَإِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ كُلِّ مُسْكِرٍ.
‘‘নিশ্চয়ই মদ যেমন যে কোন ফলের রস বিশেষভাবে আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি হয় তেমনিভাবে কিসমিস, খেজুর, গম, যব এবং ভুট্টা থেকেও তা তৈরি হয়। আর আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে প্রত্যেক নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করছি’’। (আবূ দাউদ ৩৬৭৭)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা ’উমর (রাঃ) মিম্বারে উঠে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠের পর বললেন:
نَزَلَ تَحْرِيْمُ الْـخَمْرِ وَهِيَ مِنْ خَمْسَةٍ : الْعِنَبِ وَالتَّمْرِ وَالْعَسَلِ وَالْحِنْطَةِ وَالشَّعِيْرِ، وَالْـخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ.
‘‘মদ হারাম হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তখন পাঁচটি বস্ত্ত দিয়েই মদ তৈরি হতো। আর তা হচ্ছে, আঙ্গুর, খেজুর, মধু, গম এবং যব। তবে মদ বলতে এমন সব বস্ত্তকেই বুঝানো হয় যা মানব ব্রেইনকে প্রমত্ত করে’’। (বুখারী ৪৬১৯, ৫৫৮১, ৫৫৮৮, ৫৫৮৯; মুসলিম ৩০৩২; আবূ দাউদ ৩৬৬৯)
আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশ শ্রেণীর লোককে লা’নত তথা অভিসম্পাত করেন।
আনাস্ বিন্ মালিক ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:
لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ فِيْ الْـخَمْرِ عَشْرَةً: عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْـمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالْـمُشْتَرِيَ لَهَا، وَالْـمُشْتَرَاةَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لُعِنَتِ الْـخَمْرُ بِعَيْنِهَا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لَعَنَ اللهُ الْـخَمْرَ وَشَارِبَهَا.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের ব্যাপারে দশ জন ব্যক্তিকে লা’নত বা অভিসম্পাত করেন: যে মদ বানায়, যে মূল কারিগর, যে পান করে, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নেয়া হয়, যে অন্যকে পান করায়, বিক্রেতা, যে লাভ খায়, খরিদদার এবং যার জন্য খরিদ করা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সরাসরি মদকেই অভিসম্পাত করা হয়। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ্ তা‘আলা অভিসম্পাত করেন মদ ও মদপানকারীকে ...’’। (তিরমিযী ১২৯৫; আবূ দাউদ ৩৬৭৪; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৩, ৩৪৪৪)
কেউ দুনিয়াতে মদ পান করে থাকলে আখিরাতে সে আর মদ পান করতে পারবে না। যদিও সে জান্নাতী হোক না কেন যতক্ষণ না সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে নেয়।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ فِيْ الدُّنْيَا لَمْ يَشْرَبْهَا فِيْ الْآخِرَةِ إِلاَّ أَنْ يَّتُوْبَ، وَفِيْ رِوَايَةِ الْبَيْهَقِيْ: وَإِنْ أُدْخِلَ الْـجَنَّةَ.
‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করলো সে আর আখিরাতে মদ পান করতে পারবে না যতক্ষণ না সে খাঁটি তাওবা করে নেয়। ইমাম বায়হাক্বীর বর্ণনায় রয়েছে, যদিও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়’’। (বুখারী ৫২৫৩; মুসলিম ২০০৩; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৬ বায়হাক্বী খন্ড ৩ হাদীস ৫১৮১ খন্ড ৮ হাদীস ১৭১১৩ শু‘আবুল্ ঈমান ২/১৪৮ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৩৬১)
অভ্যস্ত মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য। সে জান্নাতে যাবে না।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مُدْمِنُ الْـخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ.
’’অভ্যস্ত মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৮)
আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
مَا أُبَالِيْ شَرِبْتُ الْـخَمْرَ أَوْ عَبَدتُّ هَذِهِ السَّارِيَةَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ.
‘‘মদ পান করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতিরেকে এ (কাঠের) খুঁটিটির ইবাদাত করার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য করি না। কারণ, উভয়টিই আমার ধারণা মতে একই পর্যায়ের অপরাধ’’। (নাসায়ী ৫১৭৩ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৩৬৫)
আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ.
‘‘অভ্যস্ত মাদকসেবী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৯)
কোন ব্যক্তি যে কোন মাদকদ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত বা মাতাল হলে আল্লাহ্ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোন নামায কবুল করবেন না।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَـلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.
‘‘কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে খাঁটি তাওবাহ্ করে নেয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারো তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবাহ্ করে নেয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারো তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবাহ্ করে নেয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহ্ তা‘আলার দায়িত্ব হবে কিয়ামতের দিন তাকে ‘‘রাদ্গাতুল্ খাবা’ল্’’ পান করানো। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘‘রাদ্গাতুল্ খাবা’ল্’’ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪০)
মদ্যপায়ী ব্যক্তি মদ পানের সময় ঈমানদার থাকে না।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ؛ وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ.
‘‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’’।
(বুখারী ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; মুসলিম ৫৭; আবূ দাউদ ৪৬৮৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০০৭)
স্বাভাবিকভাবে কোন এলাকায় মদের বহুল প্রচলন ঘটলে তখন পৃথিবীতে স্বভাবতই ভূমি ধস হবে, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি ঘটবে এবং আকাশ থেকে আল্লাহ্’র আযাব অবতীর্ণ হবে।
’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْـمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْـخُمُوْرُ.
‘‘এ উম্মতের মাঝে ভূমি ধস, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি এবং আকাশ থেকে আল্লাহ্’র আযাব অবতীর্ণ হবে। তখন জনৈক মুসলিম বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! সেটা আবার কখন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যখন গায়ক-গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ্য প্রচলন ঘটবে এবং মদ্য পান করা হবে’’। (তিরমিযী ২২১২)
এতদুপরি মদ পানের পাশাপাশি মদ পান করাকে হালাল মনে করা হলে সে জাতির ধ্বংস তো একেবারেই অনিবার্য।
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِذَا اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِيْ خَمْسًا فَعَلَيْهِمُ الدَّمَارُ : إِذَا ظَهَرَ التَّلَاعُنُ، وَشَرِبُوْا الْـخُمُوْرَ، وَلَبِسُوْا الْـحَرِيْرَ، وَاتَّخَـذُوْا الْقِيَانَ، وَاكْتَفَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ.
‘‘যখন আমার উম্মত পাঁচটি বস্ত্তকে হালাল মনে করবে তখন তাদের ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য। আর তা হচ্ছে, একে অপরকে যখন প্রকাশ্যে লা’নত করবে, মদ্য পান করবে, পুরুষ হয়ে সিল্কের কাপড় পরিধান করবে, গায়িকাদেরকে সাদরে গ্রহণ করবে, (যৌন ব্যাপারে) পুরুষ পুরুষের জন্য যথেষ্ট এবং মহিলা মহিলার জন্য যথেষ্ট হবে’’। সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৩৮৬)
ফিরিশ্তারা মদ্যপায়ীর নিকটবর্তী হন না।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
ثَلَاثَةٌ لَا تَقْرَبُهُمُ الْـمَلَائِكَةُ : الْـجُنُبُ وَالسَّكْرَانُ وَالْـمُتَضَمِّخُ بِالْـخَلُوْقِ.
‘‘ফিরিশ্তারা তিন ধরনের মানুষের নিকটবর্তী হন না। তারা হচ্ছে, জুনুবী ব্যক্তি (যার গোসল ফরয হয়েছে) মদ্যপায়ী এবং ‘‘খালূক্ব’’ (যাতে যা’ফ্রানের মিশ্রণ খুবই বেশি) সুগন্ধ মাখা ব্যক্তি’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তার্হীবি, হাদীস ২৩৭৪)
ঈমানদার ব্যক্তি যেমন মদ পান করতে পারে না তেমনিভাবে সে মদ পানের মজলিসেও উপস্থিত হতে পারে না।
জা’বির ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَشْرَبِ الْـخَمْرَ، مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُشْرَبُ عَلَيْهَا الْـخَمْرُ.
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন মদ পান না করে এবং যে মজলিসে মদ পান করা হয় সেখানেও যেন সে না বসে’’। (আহমাদ ১৪৬৯২ ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১১ হাদীস ১১৪৬২ আওসাত্ব, হাদীস ২৫১০; দা’রামী ২০৯২)
যে ব্যক্তি জান্নাতে মদ পান করতে ইচ্ছুক সে যেন দুনিয়াতে মদ পান না করে এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করেনি আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তাকে জান্নাতে মদ পান করাবেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّسْقِيَهُ اللهُ الْـخَمْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهَا فِيْ الدُّنْيَا، وَمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّكْسُوَهُ اللهُ الْـحَرِيْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهُ فِيْ الدُّنْيَا.
‘‘যার মনে চায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে আখিরাতে মদ পান করাবেন সে যেন দুনিয়াতে মদ পান করা ছেড়ে দেয় এবং যার মনে চায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে আখিরাতে সিল্কের কাপড় পরাবেন সে যেন দুনিয়াতে সিল্কের কাপড় পরা ছেড়ে দেয়’’। (ত্বাবারানী/আওসাত্ব খন্ড ৮ হাদীস ৮৮৭৯)
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَنْ تَرَكَ الْـخَمْرَ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ لَأَسْقِيَنَّهُ مِنْهُ فِيْ حَظِيْرَةِ الْقُدُسِ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করেনি আমি তাকে অবশ্যই জান্নাতে মদ পান করাবো’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তার্হীবি, হাদীস ২৩৭৫)
যে ব্যক্তি প্রথম বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামায পড়তে পারলো না সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ سُكْرًا مَرَّةً وَاحِدَةً ؛ فَكَأَنَّمَا كَانَتْ لَهُ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا فَسُلِبَهَا، وَمَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ سُكْرًا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ طِيْنَةِ الْخَبَالِ، قِيْلَ: وَمَا طِيْنَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ جَهَنَّمَ.
‘‘যে ব্যক্তি প্রথম বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামায ছেড়ে দিলো সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি চতুর্থ বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামায ছেড়ে দিলো আল্লাহ্ তা‘আলার দায়িত্ব হবে তাকে ‘‘ত্বীনাতুল্ খাবাল্’’ পান করানো। জিজ্ঞাসা করা হলো: ‘‘ত্বীনাতুল্ খাবাল্’’ বলতে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত’’। (হা’কিম ৭২৩৩ বাইহাক্বী, হাদীস ১৬৯৯, ১৭১১৫ ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস ৬৩৭১; আহমাদ ৬৬৫৯)
কোন রোগের চিকিৎসা হিসেবেও মদ পান করা যাবে না।
ত্বারিক্ব বিন্ সুওয়াইদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিকিৎসার জন্য মদ তৈরি করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:
إِنَّهُ لَيْسَ بِدَوَاءٍ، وَلَكِنَّهُ دَاءٌ.
‘‘মদ তো ওষুধ নয় বরং তা রোগই বটে’’। (মুসলিম ১৯৮৪; আবূ দাউদ ৩৮৭৩)
উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা হারাম বস্ত্তর মধ্যে তোমাদের জন্য কোন চিকিৎসা রাখেননি’’। (বাইহাক্বী, হাদীস ১৯৪৬৩ ইব্নু হিববান খন্ড ৪ হাদীস ১৩৯১)
নামের পরিবর্তনে কখনো কোন জিনিস হালাল হয়ে যায় না। সুতরাং নেশাকর দ্রব্য যে কোন আধুনিক নামেই সমাজে চালু হোক না কেন তা কখনো হালাল হতে পারে না। অতএব তামাক, সাদাপাতা, জর্দা, গুল, পচা তথা মদো সুপারি ইত্যাদি হারাম। কারণ, তা নেশাকর। সামান্য পরিমাণেই তা খাওয়া হোক অথবা বেশি পরিমাণে। পানের সাথেই তা খাওয়া হোক অথবা এমনিতেই চিবিয়ে চিবিয়ে। ঠোঁট ও দাঁতের মাড়ির ফাঁকেই সামান্য পরিমাণে তা রেখে দেয়া হোক অথবা তা গিলে ফেলা হোক। নেশা হিসেবেই তা ব্যবহার করা হোক অথবা অভ্যাসগতভাবে। মোটকথা, উহার সর্বপ্রকার ও সর্বপ্রকারের ব্যবহার সবই হারাম।
আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تَذْهَبُ اللَّيَالِيْ وَالْأَيَّامُ حَتَّى تَشْرَبَ فِيْهَا طَائِفَةُ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ ؛ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا.
‘‘রাত-দিন যাবে না তথা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মদ পান করে। তবে তা মদের নামেই পান করবে না বরং অন্য নামে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৭)
’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
يَشْرَبُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ بِاسْمٍ يُسَمُّوْنَهَا إِيَّاهُ.
‘‘আমার একদল উম্মত মদ পান করবে। তবে তা নতুন নামে যা তারা তখন আবিষ্কার করবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৮)
কেউ কেউ আবার মদ পান না করলেও মদের ব্যবসার সাথে যে কোনভাবে অবশ্যই জড়িত। মদ পান না করলেও মদ বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও সিগারেট ও বিড়ি বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও তিনি সাদাপাতা, গুল ও জর্দা খাওয়ায় সরাসরি জড়িত। বরং কেউ কেউ তো কথার মোড় ঘুরিয়ে অথবা কুর‘আন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তা হালাল করতে চান। অন্যকে ধূমপান করতে নিষেধ করলেও নিজের পেটে কেজি কেজি সাদাপাতা ও জর্দা ঢুকাতে লজ্জা পান না। তাদের অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করা উচিৎ। নিজে ভালো হতে না পারলেও অন্যকে ভালো হতে সুযোগ দেয়া উচিৎ। আল্লাহ্’র লা’নতকে অবশ্যই ভয় পেতে হবে।
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَمَّا نَزَلَتِ الْآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ الرِّبَا ؛ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِيْ الْـخَمْرِ.
‘‘যখন সুদ সংক্রান্ত সূরাহ বাক্বারাহ্’র শেষ আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর থেকে বের হয়ে মদের ব্যবসা হারাম করে দেন’’। (আবূ দাউদ ৩৪৯০, ৩৪৯১; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৫)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْـخَمْرَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـخِنْزِيْرَ وَثَمَنَهُ.
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার বিক্রিমূল্যও। মৃত হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার বিক্রিমূল্যও। শূকর হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার বিক্রিমূল্যও’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৫)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ـ ثَلَاثًا ـ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ وَفِيْ رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَةَ: فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পড়ুক ইহুদিদের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বদ্দো‘আটি তিন বার দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন। তখন তারা তা সরাসরি না খেয়ে তা বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেলো। অথচ তাদের এ কথা জানা নেই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়ের উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করে দিলে উহার বিক্রিমূল্যও হারাম করে দেন। ইব্নু মাজাহ্’র বর্ণনায় রয়েছে, যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করে দেয়া হয় তখন তারা চর্বিগুলো একত্র করে আগুনের তাপে গলিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিলো’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৫; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৬)
মদ্যপান কিয়ামতের আলামতগুলোর অন্যতম।
আনাস্ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَّظْهَرَ الْـجَهْلُ، وَيَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتُشْرَبَ الْـخَمْرُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ، حَتَّى يَكُوْنَ لِـخَمْسِيْنَ اِمْرَأَةً قَيِّمُهُنَّ رَجُلٌ وَاحِدٌ.
‘‘কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে এও যে, মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে, জ্ঞান কমে যাবে, ব্যভিচার বেড়ে যাবে, মদ পান করা হবে, পুরুষ কমে যাবে এবং মহিলা বেড়ে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার দায়িত্বশীল শুধু একজন পুরুষই হবে’’। (বুখারী ৫৫৭৭; মুসলিম ২৬৭১)