আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করা একটি মারাত্মক অপরাধ। তম্মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করা সর্বোচ্চ অপরাধ। চাই তা জেনে হোক অথবা না জেনে। চাই তা তাঁর নাম, কাম বা গুণাবলীতে হোক অথবা তাঁর শরীয়তে। আল্লাহ্ তা‘আলাকে এমন গুণে গুণান্বিত করা যে গুণ না তিনি নিজে তাঁর জন্য চয়ন করেছেন না তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সম্পর্কে কাউকে সংবাদ দিয়েছেন। বরং তা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনার বিপরীত। এর অবস্থান শির্কের পরপরই। আবার কখনো কখনো তা শির্ক চাইতেও মারাত্মক রূপ ধারণ করে যখন তা জেনে শুনে হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ، إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ الْقَوْمَ الظَّالِـمِيْنَ»
‘‘যে ব্যক্তি না জেনেশুনে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদেরকে কখনো সুপথ দেখান না’’।
(আন্‘আম : ১৪৪)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللهِ كَذِبًا، أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ، إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ»
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে এবং তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? বস্ত্তত যালিমরা কখনো সফলকাম হতে পারে না’’। (আন্‘আম : ২১)
তিনি আরো বলেন:
«وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوْحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوْحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ، وَمَنْ قَالَ سَأُنْزِلُ مِثْلَ مَآ أَنْزَلَ اللهُ، وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ غَمَرَاتِ الْـمَوْتِ وَالْمَلَآئِكَةُ بَاسِطُوْا أَيْدِيْهِمْ، أَخْرِجُوْا أَنْفُسَكُمْ، الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْـهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ غَيْرَ الْـحَقِّ، وَكُنْتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُوْنَ»
‘‘ওব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী আর কে হতে পারে? যে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করে অথবা বলে: আমার নিকট ওহী পাঠানো হয়; অথচ তার নিকট কোন ওহী পাঠানো হয়নি। আরো বলে: আল্লাহ্ তা‘আলা যেরূপ (তাঁর আয়াতসমূহ) অবতীর্ণ করেন আমিও সেরূপ অবতীর্ণ করি। আর যদি তুমি দেখতে পেতে সে মৃত্যু সময়কার কঠিন অবস্থা যার সম্মুখীন হচ্ছে যালিমরা তখন সত্যিই ভয়ানক অবস্থাই দেখতে পেতে। তখন ফিরিশ্তারা তাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে বলবে: তোমাদের জীবনপ্রাণ বের করে দাও। আজ তোমাদেরকে লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেয়া হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর অবৈধভাবে মিথ্যারোপ করতে এবং অহঙ্কার করে তাঁর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করতে’’।
(আন্‘আম : ৯৩)
তিনি আরো বলেন:
«وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِيْنَ كَذَبُوْا عَلَى اللهِ وُجُوْهُهُمْ مُسْوَدَّةٌ، أَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ»
‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে আপনি কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো দেখবেন। উদ্ধতদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?’’ (যুমার : ৬০)
যে মুশ্রিক আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অন্যকে শরীক করে; অথচ সে আল্লাহ্ তা‘আলার সকল গুণাবলী বাস্তবে যথার্থভাবে বিশ্বাস করে সে ব্যক্তি তুলনামূলকভাবে ওব্যক্তি অপেক্ষা অনেক ভালো যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে না; অথচ সে আল্লাহ্ তা‘আলার সমূহ গুণাবলীতে যথার্থ বিশ্বাসী নয়।
যেমন: কোন ব্যক্তি কারো রাষ্ট্রক্ষমতা ও তদ্সংক্রান্ত সকল গুণাবলীতে বিশ্বাসী অথচ সে কোন কোন কাজে তার অংশীদারকেও বিশ্বাস করে এমন ব্যক্তি ওব্যক্তি অপেক্ষা অনেক ভালো যে উক্ত ব্যক্তির অংশীদার সাব্যস্ত করে না এবং তার রাষ্ট্রক্ষমতা ও তদ্সংক্রান্ত গুণাবলীতেও বিশ্বাসী নয়।
আবূ হুরাইরাহ্, মুগীরাহ্ ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ এবং আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.
‘‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে আমার উপর মিথ্যারোপ করলো সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিলো’’। (বুখারী ১১০, ১২৯১, ৩৪৬১, ৬১৯৭; মুসলিম ৩, ৪; তিরমিযী ২৬৫৯)
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تَكْذِبُوْا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ.
‘‘তোমরা কখনো আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করলো সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। (বুখারী ১০৬; মুসলিম ১)
জেনেশুনে ভুল হাদীস বর্ণনাকারীও মিথ্যুকদের অন্তর্গত।
মুগীরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ حَدَّثَ عَنِّيْ حَدِيْثًا ؛ وَهُوَ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ ؛ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِيْنَ.
‘‘যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করলো অথচ সে জানে যে, তা আমার কথা নয় বরং তা ডাহা মিথ্যা তা হলে সে মিথ্যুকদেরই একজন’’। (তিরমিযী ২৬৬২)