কারোর উপর যাকাত ফরয হওয়া সত্ত্বেও যাকাত আদায় না করা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَآ آتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّـهُمْ، بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّـهُمْ، سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلِلهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ»
‘‘যাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলা অনুগ্রহ করে কিছু সম্পদ দিয়েছেন; অথচ তারা উহার কিয়দংশও আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করতে কার্পণ্য করে তারা যেন এ কথা মনে না করে যে, তাদের এ কৃপণতা তাদের কোন উপকারে আসবে। বরং এ কৃপণতা তাদের জন্য সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনবে। তারা যে সম্পদ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করতে কৃপণতা করেছে তা কিয়ামতের দিন তাদের কণ্ঠাভরণ হবে। একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের স্বত্বাধিকারী এবং তোমরা যা করছো তা আল্লাহ্ তা‘আলা ভালোভাবেই জানেন’’। (আ’লি ইমরান : ১৮০)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْ، هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ»
‘‘যারা স্বর্ণ-রুপা সংরক্ষণ করে এবং তা আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় একটুও ব্যয় করেনা তথা যাকাত দেয়না আপনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে কঠিন শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন যে দিন জাহান্নামের আগুনে ওগুলোকে উত্তপ্ত করে তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে: এ হচ্ছে ওসম্পদ যা তোমরা নিজের জন্যে সংরক্ষণ করেছিলে। সুতরাং তোমরা এখন নিজ সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ করো’’। (তাওবাহ্ : ৩৪-৩৫)
যাকাত আদায় না করা মুশ্রিকদের একটি বিশেষ চরিত্রও বটে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ، الَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ، وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ»
‘‘ওয়াইল্ নামক জাহান্নাম এমন মুশ্রিকদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না এবং যারা আখিরাতে অবিশ্বাসী’’। (হা’ মীম আস্সাজদাহ্/ ফুস্সিলাত : ৬-৭)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّيْ مِنْهَا حَقَّهَا، إِلاَّ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْـهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِيْنُهُ وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيْدَتْ لَهُ، فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيْلَهُ، إِمَّا إِلَى الْـجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ.
‘‘কোন স্বর্ণ ও রুপার মালিক যদি উহার যাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের পাত তৈরি করা হবে এবং তা জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালিয়ে উত্তপ্ত করে তার পার্শ্বদেশ, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে তা আবার গরম করে দেয়া হবে। এমন দিনে যে দিন দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যখন সকল মানুষের ফায়সালা শেষ হবে তখন সে জান্নাতে যাবে বা জাহান্নামে’’। (মুসলিম ৯৮৭)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ أَتَاهُ اللهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيْبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِيْ بِشِدْقَيْهِ، ثُمَّ يَقُوْلُ: أَنَا مَالُكَ، أَنَا كَنْزُكَ، ثُمَّ تَلَا آيَةَ آلِ عِمْرَانَ.
‘‘যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা ধন-সম্পদ দিয়েছেন। অথচ সে উহার যাকাত আদায় করেনি তখন তার সমূহ ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন মাথায় চুল বিহীন একটি সাপের রূপ দেয়া হবে। যার উভয় চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে। যা তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পাশ দংশন করতে থাকবে এবং বলবে: আমি তোমার সম্পদ। আমি তোমার ধনভান্ডার। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ আ’লি ইমরানের আয়াতটি তিলাওয়াত করেন’’। (বুখারী ১৪০৩)
জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَا مِنْ صَاحِبِ إِبِلٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهَا حَقَّهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَـةِ أَكْثَرَ مَا كَانَتْ قَطُّ، وَقَعَدَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، تَسْتَنُّ عَلَيْهِ بَقَوَائِمِهَا وَأَخْفَافِهَا، وَلَا صَاحِبِ بَقَرٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهَا حَقَّهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرَ مَا كَانَتْ، وَقَعَدَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، تَنْطَحُهُ بِقُرُوْنِهَا وَتَطَؤُهُ بِقَوَائِمِهَا، وَلَا صَاحِبِ غَنَمٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهَا حَقَّهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَـرَ مَا كَانَتْ، وَقَعَدَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، تَنْطَحُهُ بِقُرُوْنِـهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا، لَيْسَ فِيْهَا جَمَّاءُ وَلَا مُنْكَسِرٌ قَرْنُهَا، وَلَا صَاحِبِ كَنْـزٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهِ حَقَّهُ، إِلاَّ جَاءَ كَنْزُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، يَتْبَعُهُ فَاتِحًا فَاهُ، فَإِذَا أَتَاهُ فَرَّ مِنْهُ، فَيُنَادِيْهِ: خُذْ كَنْزَكَ الَّذِيْ خَبَأْتَهُ، فَأَنَا عَنْهُ غَنِيٌّ، فَإِذَا رَأَى أَنْ لَا بُدَّ مِنْـهُ، سَلَكَ يَدَهُ فِيْ فِيْهِ، فَيَقْضَمُهَا قَضْمَ الْفَحْلِ.
‘‘কোন উটের মালিক উটের অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে তার নিকট উপস্থিত হবে এবং সে এক প্রশস্ত ভূমিতে তাদের অপেক্ষায় থাকবে। উটগুলো তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে। কোন গরুর মালিক গরুর অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে তার নিকট উপস্থিত হবে এবং সে এক প্রশস্ত ভূমিতে তাদের অপেক্ষায় থাকবে। গরুগুলো তাকে শিং দিয়ে গুঁতো মারবে এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে। কোন ছাগলের মালিক ছাগলের অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে তার নিকট উপস্থিত হবে এবং সে এক প্রশস্ত ভূমিতে তাদের অপেক্ষায় থাকবে। ছাগলগুলো তাকে শিং দিয়ে গুঁতো মারবে এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে। সেগুলোর মধ্যে কোন একটি এমন হবে না যে তার কোন শিং নেই অথবা থাকলেও তার শিং ভাঙ্গা। কোন সংরক্ষিত সম্পদের মালিক উক্ত সম্পদের অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন মাথায় চুল বিহীন একটি সাপের রূপ ধারণ করবে। সাপটি মুখ খোলা অবস্থায় তার পিছু নিবে এবং তার নিকট পৌঁছুতেই লোকটি তা থেকে পালাতে শুরু করবে। তখন সাপটি তাকে ডেকে বলবে: নাও তোমার সম্পদ যা তুমি লুকিয়ে রেখেছিলে। তাতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। লোকটি যখন দেখবে আর কোন গত্যন্তর নেই তখন সে তার হাতখানা সাপের মুখে ঢুকিয়ে দিবে। তখন সাপটি তার হাতখানা চাবাতে থাকবে এক মহা শক্তিধরের ন্যায়’’।
(মুসলিম ৯৮৮)
কোন সম্প্রদায় যাকাত দিতে অস্বীকার করলে প্রশাসন বল প্রয়োগ করে হলেও তার থেকে অবশ্যই যাকাত আদায় করে নিবে। যেমনটি আবূ বকর (রাঃ) তাঁর যুগের যাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের সাথে করেছেন। এমনকি প্রয়োজনে শাস্তি স্বরূপ তাদের থেকে যাকাতের চাইতেও বেশি সম্পদ নিতে পারে। আর তা একমাত্র প্রশাসকের বিবেচনার উপরই নির্ভরশীল।
আবূ বকর (রাঃ) ইরশাদ করেন:
وَاللهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ، فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْـمَالِ، وَاللهِ لَوْ مَنَعُوْنِيْ عَنَاقًا كَانُوْا يُؤَدُّوْنَهَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا.
‘‘আল্লাহ্’র কসম! অবশ্যই আমি যুদ্ধ করবো ওদের সঙ্গে যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। তারা নামায পড়ে ঠিকই তবে যাকাত দিতে অস্বীকার করে। অথচ যাকাত হচ্ছে সম্পদের অধিকার। আল্লাহ্’র কসম! তারা যদি আমাকে ছাগলের একটি ছোট বাচ্চা (অন্য বর্ণনায় রশি) দিতেও অস্বীকার করে যা তারা দিয়েছিলো আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা হলেও আমি তাদের সাথে তা না দেয়ার দরুন যুদ্ধ করবো’’। (বুখারী ৬৯২৪, ৬৯২৫)
মু‘আবিয়া বিন্ হাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের যাকাত সম্পর্কে বলেন:
وَمَنْ مَنَعَهَا فَإِنَّا آخِذُوْهَا وَشَطْرَ مَالِهِ عَزْمَةً مِنْ عَزَمَاتِ رَبِّنَا عَزَّ وَجَلَّ.
‘‘যে ব্যক্তি যাকাতের উটটি দিতে অস্বীকার করবে আমি তো তা নেবোই বরং তার সম্পদের অর্ধেকও নিয়ে নেবো আমার মহান প্রভুর অধিকার হিসেবে’’। (আবূ দাউদ ১৫৭৫)