হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
চারটি অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ব্যভিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় - ১. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি।

কোন ব্যক্তি চারটি অঙ্গকে সঠিক ও শরীয়ত সম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সত্যিকারার্থে সে অনেকগুলো গুনাহ্ বিশেষভাবে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে পারে। তেমনিভাবে তার ধার্মিকতাও অনেকাংশে রক্ষা পাবে। আর তা হচ্ছে:

১. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি। তা রক্ষা করা লজ্জাস্থানকে রক্ষা করার শামিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

غُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ.

‘‘তোমাদের চোখ নিম্নগামী করো এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করো’’।

(আহমাদ : ৫/৩২৩; হা’কিম : ৪/৩৫৮, ৩৫৯; ইব্নু হিববান ২৭১ বায়হাক্বী : ৬/২৮৮)

হঠাৎ কোন হারাম বস্ত্তর উপর চোখ পড়ে গেলে তা তড়িঘড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার কিংবা একদৃষ্টে ওদিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন:

يَا عَلِيُّ! لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ، فَإِنَّ لَكَ الْأُوْلَى، وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ.

‘‘হে ‘আলী! বার বার দৃষ্টি ক্ষেপণ করো না। কারণ, হঠাৎ দৃষ্টিতে তোমার কোন দোষ নেই। তবে ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় দৃষ্টি অবশ্যই দোষের’’।

(আবূ দাউদ ২১৪৯; তিরমিযী ২৭৭৭; আহমাদ : ৫/৩৫১, ৩৫৩, ৩৫৭; হা’কিম : ২/১৯৪ বায়হাক্বী : ৭/৯০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারাম দৃষ্টিকে চোখের যেনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমনিভাবে কোন ব্যক্তির হাত, পা, মুখ, কান, মনও ব্যভিচার করে থাকে। তবে মারাত্মক ব্যভিচার হচ্ছে লজ্জাস্থানের ব্যভিচার। যাকে বাস্তবার্থেই ব্যভিচার বলা হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْـمَنْطِقُ، وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ فَزِنَاهُمَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلَانِ تَزْنِيَانِ فَزِنَاهُمَا الْـمَشْيُ، وَالْفَمُ يَزْنِيْ فَزِنَاهُ الْقُبَلُ، وَالْأُذُنُ زِنَاهَا الِاسْتِمَاعُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِيْ، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ وَيُكَذِّبُهُ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য যেনার কিছু অংশ বরাদ্দ করে রেখেছেন। যা সে অবশ্যই করবে। চোখের যেনা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ, মুখের যেনা হচ্ছে অশ্লীল কথোপকথন, হাতও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে হাত দিয়ে ধরা, পাও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে কোন ব্যভিচার সংঘটনের জন্য রওয়ানা করা, মুখও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে চুমু দেয়া, কানের ব্যভিচার হচ্ছে অশ্লীল কথা শ্রবণ করা, মনও ব্যভিচারের কামনা-বাসনা করে। আর তখনই লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে অথবা করে না’’।

(আবূ দাউদ ২১৫২, ২১৫৩, ২১৫৪)

দৃষ্টিই সকল অঘটনের মূল। কারণ, কোন কিছু দেখার পরই তো তা মনে জাগে। মনে জাগলে তার প্রতি চিন্তা আসে। চিন্তা আসলে অন্তরে তাকে পাওয়ার কামনা-বাসনা জন্মে। কামনা-বাসনা জন্মিলে তাকে পাওয়ার খুব ইচ্ছে হয়। দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে প্রতিজ্ঞার রূপ ধারণ করে। আর তখনই কোন কর্ম সংঘটিত হয়। যদি পথিমধ্যে কোন ধরনের বাধা না থাকে।

দৃষ্টির কুফল হচ্ছে আফসোস, ঊর্ধ্বশ্বাস ও অন্তরজ্বালা। কারণ, মানুষ যা চায় তার সবটুকু সে কখনোই পায় না। আর তখনই তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, দৃষ্টি হচ্ছে তীরের ন্যায়।
অন্তরকে নাড়া দিয়েই তা লক্ষ্যবস্ত্ততে পৌঁছায়। একেবারে শান্তভাবে নয়।

আরো আশ্চর্যের কাহিনী এই যে, দৃষ্টি অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আর এ ক্ষতের উপর অন্য ক্ষত (আবার তাকানো) সামান্যটুকু হলেও আরামপ্রদ। যার নিশ্চিত নিরাময় কখনোই সম্ভবপর নয়।